Advertisement
০৫ নভেম্বর ২০২৪

মডেল স্কুলে মেঝেতেই ক্লাস

পানীয় জল নেই, ছাত্রাবাসে তালা, মিডডে মিলের ব্যবস্থা নেই। বালাই নেই আসবাব, কম্পিউটার কিছুরই। এমনকী ঠেকা দিয়ে ক্লাশ চালানোর জন্য অবসরপ্রাপ্ত যে সব শিক্ষকদের নিয়োগ করা হয়েছে বেতন পাচ্ছেন না তাঁরাও। ছাত্র পিছু কেন্দ্রীয় বরাদ্দ্ ৪৭৫০ টাকা তা হলে যাচ্ছে কোথায়? সে প্রশ্নটাই তাড়া করছে অভিবাবকদের।

বেঞ্চ নেই। নিজস্ব চিত্র

বেঞ্চ নেই। নিজস্ব চিত্র

বিমান হাজরা
রঘুনাথগঞ্জ শেষ আপডেট: ১১ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ ০২:০০
Share: Save:

গালভরা নাম মডেল স্কুল। চকচকে চেহারার ঢাউস বাড়ি, নতুন রঙের গন্ধ ফিকে হয়নি এখনও।

রাজ্যের পিছিয়ে পড়া ব্লকের কোনওক্রমে পড়াশোনায় টিঁকে থাকা ছেলেপুলেদের এক ধাপে ইংরাজিতে সড়গড় করে নয়া দুনিয়া দেখানোর স্বপ্ন ভরা মডেল স্কুল।

পঞ্চম থেকে দ্বাদশ— আবাসিক সেই সব স্কুলের চকচকে চেহারাটা হোঁচট খাচ্ছে ভিতরে পা দিলেই। খাতায় কলমে বরাদ্দের অঙ্ক গালভরা হলেও আধোঅন্ধকার স্কুল ঘরে শুধু নেই আর নেই।

পানীয় জল নেই, ছাত্রাবাসে তালা, মিডডে মিলের ব্যবস্থা নেই। বালাই নেই আসবাব, কম্পিউটার কিছুরই। এমনকী ঠেকা দিয়ে ক্লাশ চালানোর জন্য অবসরপ্রাপ্ত যে সব শিক্ষকদের নিয়োগ করা হয়েছে বেতন পাচ্ছেন না তাঁরাও। ছাত্র পিছু কেন্দ্রীয় বরাদ্দ্ ৪৭৫০ টাকা তা হলে যাচ্ছে কোথায়? সে প্রশ্নটাই তাড়া করছে অভিবাবকদের।

রঘুনাথগঞ্জ এক নম্বর ব্লক থেকে প্রায় ৬ কিলোমিটার দূরে কিষান মান্ডি লাগোয়া এমনই একটি মডেল স্কুলে পঞ্চম থেকে সপ্তম শ্রেণি তিনটি ক্লাশে এখন ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা ১৫০। আবাসিক স্কুল শুনেই সেখানে ছেলে-মেয়েকে রেখে পড়ানোর সাহস দেখিয়েছিলেন দীনেশ মণ্ডল। তিনি বলছেন, ‘‘দু’টো মেয়েকে তো ভাল করে খাওয়াতে পড়াতে পারছিলাম না। তাই মামনি আর পুজাকে ভর্তি করিয়েছিলাম। ও মা, আজ হবে কাল হবে করে এখনও আবাসিক হল না স্কুল। পনেরো কিলোমিটার ঠেঁঙিয়ে রোজ স্কুলে যাচ্ছে।’’ বেঞ্চিহীন স্কুলে তাই এই শীতেও তাদের বসতে হচ্চে মাটিতে। মাঠের মধ্যে স্কুলের আশপাশে একটা খাবার দোকান পর্যন্ত নেই। তিন হাজার টাকা মাসে গুনতে হয় স্কুল যাতায়াতে অটোর ভাড়া প্রতি মাসে। এই অবস্থায় আর মডেল স্কুলে মেয়েকে কতদিন পাঠাতে পারবেন দীনেশ জানেন না।

স্কুলের শিক্ষক লালবাগের বাসিন্দা হারাধন বিশ্বাস বলছেন, “আমরা চার জন শিক্ষকের সবাই বয়স্ক। আবাসিক শুনেই এসেছিলাম স্কুলে। কিন্তু এক বছরেও কোনও পরিকাঠামো গড়ে ওঠেনি। চেয়ে চিন্তে খান তিনটি ব্ল্যাক বোর্ড পেয়েছি ব্যাস।’’

এক বছরে চক ডাস্টার কেনার জন্য ৪৬০০ টাকা জুটেছে। কিন্তু দশ মাস পেরিয়ে গেলেও বেতন পাচ্ছেন না তাঁরা।

রঘুনাথগঞ্জ ২ ব্লকে অবশ্য সেই সুবিধাটুকুও মেলেনি। ফলে মডেল স্কুলের তিনটি ক্লাস চলছে সেখানে মাত্র একজন অতিথি শিক্ষক দিয়ে। ডোমকলের কুপিলা থেকে আসা অতিথি শিক্ষক রুহুল আমিন বলছেন, “জল নেই, থাকার জায়গা নেই। বসার বেঞ্চ নেই। আর কী বলব বলুন।’’

একই দুর্ভোগে শমসেরগঞ্জের মডেল স্কুলের তিনটি ক্লাসের ১১১ জন ছাত্রছাত্রীর। বেগতিক দেখে তাদের অনেকেই একে একে স্কুল ছাড়ছে।

শিক্ষায় পিছিয়ে পড়া ব্লকগুলিতে কেন্দ্রীয় সরকার ইংরেজি মাধ্যম মডেল স্কুল চালুর সিদ্ধান্ত নিয়েছিল ২০০৮ সালে। রাজ্যে ৮৭টি পিছিয়ে পড়া ব্লকের মধ্যে ৬৭টি ব্লকে স্কুল গড়ার সিদ্ধান্ত হয়। এর ৭৫ শতাংশ টাকা দিয়েছেন কেন্দ্রীয় সরকার। বাকিটা রাজ্য সরকারের। মুর্শিদাবাদে এমন ৯টি ব্লকে মডেল স্কুল তৈরি হলেও অবস্থা সব ক’টিরই তথৈবচ।

জেলা বিদ্যালয় পরিদর্শক (মাধ্যমিক) পুরবী দে বিশ্বাস বলছেন, “সবে তো এক বছর হল চালু হয়েছে, কয়েকটা দিন দাঁড়ান সব ঠিক হয়ে যাবে।’’ যাবে তো?

দীনেরশবাবুরা অপেক্ষায় আছেন, দেখা যাক!

অন্য বিষয়গুলি:

Education Model School Class Floor
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE