সিবিআইয়ের হাতে ধৃত দু’জনকে নিয়ে আসা হল কৃষ্ণনগর আদালতে। রবিবার। ছবি: সুদীপ ভট্টাচার্য
রাজ্যে ভোট-পরবর্তী অশান্তির ঘটনার তদন্তে নানা প্রান্তে অভিযোন চালিয়েছে সিবিআই। চাপড়ায় শনিবার এই রকম তদন্তে গিয়েই গ্রামবাসীর ক্ষোভের মুখে পড়ে সিবিআই। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে এক দিকে যেমন রাজনৈতিক চাপানউতোর শুরু হয়েছে তেমনই পুলিশের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন উঠছে।
হিংসার ঘটনায় ধরা পড়া ৮ জনের গোপন জবানবন্দিতে যাদের নাম উঠে এসেছিল তাদের পুলিশ কেন গ্রেফতার করল না, সেই প্রশ্ন উঠেছে। আবার বাইরে থেকে সিআইডি এসে অচেনা জায়গা থেকে দু’জনকে ধরে ফেলল অথচ স্থানীয় পুলিশ তাদের টিকিটি খুঁজে পেল না— তা নিয়েও সমালোচনা তুঙ্গে উঠেছে।
যদিও পুলিশের দাবি, গোপন জবানবন্দিতে যাদের নাম পাওয়া গিয়েছিল প্রত্যেকের খোঁজেই তল্লাশি চালানো হয়েছে। কিন্তু অভিযুক্তেরা পলাতক। কাউকে পাওয়া যায়নি।
বিধানসভা নির্বাচনের পর ১৪মে চাপড়ার সুঁটিয়া গ্রামে আক্রান্ত হয়েছিলেন বিজেপি কর্মী ধর্ম মণ্ডল(৫৬)। তাঁকে গুরুতর জখম আবস্থায় প্রথমে চাপড়া গ্রামীঁণ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখান থেকে শক্তিনগর জেলা হাসপাতালে ও তার পর কলকাতার নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি করা হয়। সেখানেই তাঁর মৃত্যু হয়। এই ঘটনায় চাপড়া থানায় আট জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেন ধর্ম মণ্ডলের ভাইপো অয়ন মণ্ডল।
এফআইআরে নাম থাকা মূল অভিযুক্ত উজ্জ্বল বিশ্বাস-সহ আট জনকেই গ্রেফতার করে পুলিশ। মোট ছ’জনের গোপন জবানবন্দি নেওয়া হয়। ১৫ জনের নাম উঠে আসে। এর মধ্যে গ্রামেরই বাসিন্দা হৃদয়পুর গ্রাম পঞ্চায়েতের তৃণমূল সদস্য কালু শেখের নাম আছে বলে পুলিশ সূত্রের খবর। ৬ অগস্ট আদালতে চার্জশিট জমা দেওয়া হয়। এফআইআরে নাম থাকা আট জনের পাশাপাশি গোপন জবানবন্দিতে উঠে আসা ১৫ জন মিলিয়ে মোট ২৩ জনের বিরুদ্ধেই চার্জশিট জমা দেয় পুলিশ। গোপন জবানবন্দিতে উঠে আসা ১৫ জনের বিরুদ্ধেই গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করে কৃষ্ণনগর আদালত। কিন্তু এদের কাউকেই গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ।
এই পরিস্থিতি শুক্রবার দুপুরে সিবিআই-এর একটি দল সুঁটিয়া গ্রামে গিয়ে ধর্ম মণ্ডলের পরিবারের সঙ্গে কথা বলে। কথা বলেন তাঁর প্রতিবেশীদের সঙ্গেও। ফরেনসিক দল ঘটনাস্থল থেকে বেশ কিছু নমুনাও সংগ্রহ করে। এই পর্যন্ত সব ঠিকঠাকই ছিল। কিন্তু গোল বাঁধে পরদিন অর্থাৎ শনিবার সকালে। গরামবাসীদের ক্ষোভের মুখে পড়েন তদন্তকারীরা।
তবে গ্রাম থেকে ফিরে আসার পথে সিবিআই ১৫ জনের তালিকায় নাম থাকা বিজয় ঘোষ ও অসীমা ঘোষকে গ্রফতার করে নিয়ে আসে। এই অসীমা ঘোষ আগেই গ্রেফতার হওয়া উজ্জ্বল ঘোষের স্ত্রী। এখানে অবশ্য সিবিআইয়ের ভূমিকা নিয়ে অনেকেই আবার প্রশ্ন তুলতে শুরু করেছে। তাদের যুক্তি, পঞ্চায়েত কর্মী বিভাস বিশ্বাসের নাম ১৫ জনের তালিকায় আছে। তাঁকে হাতের সামনে পেয়েও গ্রেফতার না-করে শুধু জিজ্ঞাসাবাদ করে ছেড়়ে দেওয়া হল কেন? সিবিআই-এর তরফে এর কোনও জবাব মেলেনি। রবিবার ধৃতদের কৃষ্ণনগর আদালতে হাজির করে সিবিআই। বিচারক তাদেরকে ১০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত জেল হেফাজতে রাখার নির্দেশ দিয়েছেন।
গোটা ঘটনায় জেলা পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলছে বিজেপি। বিজেপির নদিয়া উত্তর সাংগঠনিক জেলার মিডিয়া আহ্বায়ক সন্দীপ মজুমদার বলছেন, “এত দিনে ১৫ জনের এক জনকেও পুলিশ গ্রেফতার করতে পারল না। অথচ, বাইরে থেকে এসে এক দিনের মধ্যেই সিবিআই দু’ জনকে ধরে ফেলল!” তিনি আরও বলেন, “আসলে শাসকদল তৃণমূলের চাপেই পুলিশ নিষ্ক্রিয় হয়ে বসে ছিল।”
এর পাল্টা তৃণমূলের কৃষ্ণনগর সাংগঠনিক জেলা সভাপতি জয়ন্ত সাহা বলেন, “এফআইআরে ১৫ জনের নাম ছিল না। বিজেপি রাজনীতি করে নাম ঢুকিয়েছে। পুলিশ এ ক্ষেত্রে অত্যন্ত সক্রিয় ভূমিকা নিয়েছে।” তাঁর কথায়, “আসলে আমরা বুঝতে পারছি না এরা সিবিআই নাকি বিজেপির কেন্দ্রীয় প্রতিনিধি।” কৃষ্ণনগর পুলিশ জেলার সুপার ঈশানী পাল বলেন, “এফআইআরে নাম থাকা প্রত্যেককেই গ্রেফতার করা হয়েছে। বাকি ১৫ পালাতক। তাদেরকে ধরা যায় নি। এ ক্ষেত্রে সিবিআই কোনও সাহায্য চাইলে অবশ্যই তা করা হবে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy