প্রতীকী ছবি।
অন্ধকার এতটাই গাঢ় যে দু’হাত দুরের জিনিসও দেখা যায় না। বোঝা যায় না কোনও সঙ্কেত। শুধু কানের কাছে মুখ নিয়ে এসে কথা বলতে হয়। তাও অতি সন্তর্পণে।
কথায় বলে, বাতাসেরও কান আছে। বাতাসে ভেসে যদি সেই ফিসফিসানির শব্দ তাদের কানে পৌঁছে যায়! কে বলতে পারে যে তারাও এই অন্ধকারের মধ্যে কোনও ঝোপের তলায় বা পাট খেতের ভিতরে ঘাপটি মেরে বসে নেই! সকলেই তাই সতর্ক। সকলের কান খাড়া। একটু শব্দ হলেই হাতের লাঠি বা রাইফেলটা আরও শক্ত করে চেপে ধরেন পুলিশকর্মীরা। কারণ যে কোনও মুহূর্তে অন্ধকার ঠেলে আসতে পারে গরু বা মোষ। সঙ্গে সশস্ত্র পাচারকারীরা। কোনও ভাবে বাধা পেলেই তারা মরিয়া হয়ে ওঠে। এলোপাথাড়ি চালিয়ে দেয় অস্ত্র। অন্ধকারে দু’জন করে ছড়িয়ে-ছিটয়ে ‘পজিশন’ নেন ভীমপুর থানার পুলিশকর্মী ও সিভিক ভলেন্টিয়ারেরা। তার আগে প্রত্যেককে বারবার সতর্ক করে দেন ওসি।
ভীমপুর থানা এলাকার প্রায় সাড়ে সাত কিলোমিটার এলাকা জুড়ে কাঁটাতার নেই। রাঙিয়ারপোতা, মহখোলা, এলাঙ্গি, হুদাপাড়া, মলুয়াপাড়া, মধুপুরে বাংলাদেশ সীমান্তে কাঁটাতারের বেড়া নেই। আর সেই সুযোগটাই নেওয়ার চেষ্টা করে পাচারকারীরা। বিএসএফ থেকে শুরু করে পুলিশ চাইলেও এই এলাকা দিয়ে পাচার পুরোপুরি বন্ধ করতে পারে না। ঠিক সুযোগ বুঝে একটা-দুটো করে হলেও পাচার করা হয় গরু-মোষ।
কোনও দিন ‘সোর্স’ মারফত মধুপুর দিয়ে গরু পাচারের পরিকল্পনার খবর আসে ওসির কাছে। সীমান্তে পাহারা দেওয়ার জন্য তৈরি বিশেষ বাহিনী নিয়ে বেরিয়ে পড়েন তিনি। আগে থেকেই ফোনে ফোনে সক্রিয় করে রাখা হয়েছে স্থানীয় সিভিক ভলান্টিয়ারদের। কাঁটাতারবিহীন সীমান্তে অন্ধকারের সঙ্গে তাঁরা মিশে যান। কাটে সময়। এ ভাবেই চলে ভোর পর্যন্ত। পাচারকারীরা নাকি প্রথম ও শেষ রাতে মরিয়া চেষ্টা চালায়। এরই মধ্যে ঘুরে যান বিএসএফের এক অফিসার। তাঁদের কাছেও ‘খবর’ আছে। তাঁদের জওয়ানেরাও ঝোপের আড়ালে লুকিয়ে আছেন। সে দিন রাত শেষে ভোর হয়। কিন্তু পাচারকারীদের দেখা মেলে না। আসলে তাদেরও ‘সোর্স’ আছে। তারাও পুলিশ ও বিএসএফের উপস্থিতির খবর পেয়ে গিয়েছে। হতাশ-বিরক্ত পুলিশকর্মীরা বলেন, “কাঁটাতার নেই বলেই এই হয়রানি। নইলে এ ভাবে রাতের অন্ধকারে ঝোপের ভিতরে পড়ে থাকতে হত না। কোন দিন না সাপের ছোবলে পরতে হয়।”
সীমান্তের থানাগুলি, বিশেষ করে যাদের এলাকায় কাঁটাতারের বেড়া নেই, সেই সব থানার পুলিশকর্মীদের কাছে এটা প্রায় নিত্যদিনের ঘটনা। কোনও দিন গরু-মোষ ধরা পড়ে, কোনও দিন খালি হাতে ফিরে আসতে হয়। তবে খালি হাতে ফেরার ঘটনাই বেশি। পুলিশকর্মীরা বলছেন, অনেক জায়গায় কাঁটাতার না থাকার কারণেই হাজার চেষ্টা করেও গরু পাচার পুরোপুরি বন্ধ করা যাচ্ছে না। ভীমপুর থানা এলাকায় যেমন টানা প্রায় সাড়ে সাত কিলোমিটার এলাকা জুড়ে কাঁটাতারের বেড়া নেই। বেড়া নেই হাঁসখালির রামনগর ও গাজনা এলাকার প্রায় তিন কিলোমিটার এলাকায়। ধানতলা থানা এলাকার বড়নবেড়িয়ায় প্রায় সাত কিলোমিটার জুড়ে কাঁটাতার নেই। বেড়া নেই করিমপুর সংলগ্ন মুরুটিয়ার শিকারপুরের কিছু এলাকায় বা কৃষ্ণগঞ্জের বিজয়পুর এলাকার প্রায় চার কিলোমিটার জুড়ে।
সম্প্রতি এই কৃষ্ণগঞ্জের বিষ্ণুপুর এলাকাতেই রাতের অন্ধকারে মোষ পাচার করার সময় বিএসএফের গুলিতে মারা গিয়েছে এক বাংলাদেশি পাচারকারী। তারও দিন কয়েক আগে ভীমপুরের রাঙিয়ারপোতা এলাকায় কাঁটাতারহীন এলাকা থেকে পাচারের সময়ে বিএসএফ ও পুলিশ যৌথ ভাবে অভিযান চালিয়ে চারটি গরু উদ্ধার করেছে। অনেকেই বলছেন, এই ঘটনাগুলিই প্রমাণ করে যে সীমান্ত দিয়ে এখনও পাচার হচ্ছে। কৃষ্ণগঞ্জ পুলিশের দাবি, বিষ্ণুপুর এলাকায় কাঁটাতারের বেড়া ছিল। বর্তমানে সেখানে নতুন করে বেড়া দেওয়ার কাজ চলছে। ফলে এখন ওই এলাকায় প্রায় দুই কিলোমিটার ফাঁকা হয়ে আছে। সেটাকেই কাজে লাগাতে চেয়েছে পাচারকারীরা। জেলা পুলিশের একাংশের দাবি, চাপড়া থেকে মাঠের উপর দিয়ে রাতের অন্ধকারে গরু বা মোষ নিয়ে আসা হয় ভীমপুরের কাঁটাতারবিহীন এলাকায়। ফলে অন্যান্য এলাকায় গরু পাচার বন্ধ করা গেলেও কাঁটাতারহীন এলাকা দিয়ে অল্প কিছু হলেও গরু পাচার এখনও করতে পারছে দুষ্কৃতারা।
বিএসএফ থেকে পুলিশ সকলেরই তাই এখন একটাই প্রশ্ন: কবে এইসব এলাকায় কাঁটাতার দেওয়া হবে?
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy