পাচার রুখতে পরিখা। নিজস্ব চিত্র।
কখনও টিনের বেড়া, কখনও বা বাঁশের ব্যরিকেড— পদ্মার কোলে কাঁটাতার-শূন্য সীমান্তে গরু পাচার রুখতে বিএসএফ চেষ্টার ত্রুটি রাখেনি। তবে রকমফের ঘটালেও পাচারের গরুর ঝাঁক সে সব হেলায় ভেদ করে ভেসেছে নদীতে। সটান গিয়ে উঠেছে ও পারের ঘাটে। পাচার রোখা যায়নি। এ বার তাই যুদ্ধ-তপরতায় সীমান্তে বাঙ্কার খুঁড়ে বসল সীমান্ত প্রহরীরা।
কিছু দিন আগে এই বাঙ্কার খনন নিয়ে এলাকায় শুরু হয়েছিল চাপা গুঞ্জন। বাতাসে ভেসেছিল, তা হলে কি যুদ্ধের প্রস্তুতি! খননের কাজ এখন প্রায় সম্পূর্ণ হওয়ার মুখে। খুব স্পষ্ট করেই বিএসএফের ডিআইজি কুনাল মজুমদার বলছেন— ‘‘ওটা ঠিক বাঙ্কার নয়, যুদ্ধের জল্পনা বাদ দিন এ বার! গবাদি পশু পাচার রোখার জন্য সীমান্ত বরাবর পরিখা খনন করা হয়েছে।’’ তিনি জানান, সীমান্ত এলাকায় ওই পরিখা এখন জলে টইটুম্বুর। এর ফলও মিলেছে হাতেনাতে। রানিনগর এবং জলঙ্গি সীমান্ত দিয়ে গরু পাচার প্রায় বন্ধ হয়ে গিয়েছে। বিএসএফের দাবি, এর ফলে সুবিধা মিলছে স্থানীয় আবাদি মানুষেরও। পাচারের গরু যে ভাবে চর এবং সীমান্ত এলাকার চাষের মাঠ দাপিয়ে নদীর দিকে ছুটত, তাতে প্রভুত ক্ষতি হত শস্যের।
ফুট বারো চওড়া এবং প্রায় ততোধিক গভীর ওই পরিখা পার হওয়া গরুর পক্ষে প্রায় অসম্ভব। গত কয়েক মাসে পাচার হ্রাস পাওয়ায় তা স্ফষ্ট হয়ে উঠেছে। বিএসএফের দাবি, এই বাঙ্কার বা পরিখা যে গরু পাচার বন্ধে এতটা ফলপ্রসূ হয়ে উঠবে, তাঁরা নিজেরাও বুঝতে পারেননি। বিএসএফের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, এই পরিখা কেটে রাখার ফলে শুধু গরু পাচার নয় থমকে গিয়েছে ওষুধ থেকে নুনের বস্তা, রাতের আঁধারে পাচার হয়ে যাওয়া হরেক সামগ্রী। ফলে জলঙ্গি থেকে রানিতলা, পদ্মা ঘেঁষা সীমান্তে পাচার লক্ষ্যনীয় ভাবে কমে এসেছে। স্থানীয় মানুষের পরিভাষায়, জলঙ্গি সীমান্তে ‘ঝটকা’ বন্ধ হয়ে গিয়েছে। রাতের অন্ধকারে এক সঙ্গে কয়েক হাজার গবাদি পশু ঝড়ের গতিতে ছুটে গিয়ে নদীতে ঝাঁপিয়ে পড়ার এই প্রক্রিয়া ঝটকা নামেই পরিচিত। সেই ঝটকার সময়ে দু-একজন পাচারকারী যে বিএসএফের হাতে ধরা পড়েনি তা নয়। বিএসএফের দাবি, ওই পরিখা প্রায় কাঁটাতারের মতোই কাজে দিচ্ছে।
জলঙ্গি সীমান্তের এক থানার পুলিশ কর্তা বলছেন, ‘‘ওই পরিখা বা বাঙ্কার তৈরির পরে আমরাও কিছুটা স্বস্তিতে রয়েছি, পাচার চললে নানা রকমের অপরাধ প্রবণতা বাড়ে, পাচারকারীদের বিভিন্ন দলের মধ্যে লড়াই তারই অঙ্গ। সেই সব ঝামেলা থেকে এখন স্থানীয় থানারও নিশ্চিন্ত।
তবে, ওই বাঙ্কার কিছু নতুন সমস্যাও উস্কে দিয়েছে। রানিনগর সীমান্তের চাষি কামালুদ্দিন শেখ বলছেন, ‘‘ওই বাঙ্কার তৈরি করতে গিয়ে অনেকের চাষের জমি নষ্ট হয়েছে। আমরা পঞ্চায়েত ও প্রশাসনকে গোটা বিষয়টি জানিয়ে ছিলাম। বিএসএফের কাছেও আবেদন করেছিলাম, লাভ হয়নি।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy