Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
Coronavirus in West Bengal

করোনার খবর খুঁটিয়ে পড়েন যুদ্ধজয়ী

কারণ, ১৪ দিন পরিবারের অন্য সদস্যদের থেকেও তাঁকে দূরে থাকতে হবে।

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

সুস্মিত হালদার
চাপড়া শেষ আপডেট: ০৪ মে ২০২০ ০৪:২০
Share: Save:

ছোট্ট ঘরটায় টিভি নেই। নেই অন্য কোনও বিনোদনের ব্যবস্থা। প্রায় সারাটা দিন ঘরের ভিতরে খাটে বালিশের উপরে উপুড় হয়ে শুয়ে মোবাইল ঘাঁটতে ঘাঁটতে সময় কাটিয়ে দিতে হয়।

কারণ, ১৪ দিন পরিবারের অন্য সদস্যদের থেকেও তাঁকে দূরে থাকতে হবে। চিকিৎসকেরা তেমনটাই বলে দিয়েছেন। শুধু সকাল-সন্ধ্যা যখন ঘরের ভিতরে দমবন্ধ হয়ে আসে, তখন বাইরে চেয়ারটা টেনে নিয়ে একটু খোলা জায়গায় বসে থাকেন।

চাপড়ার চারাতলা গ্রামের বাসিন্দা প্রাক্তন বিএসএফ জওয়ান মুস্তাকিন মণ্ডলের শরীরে করোনাভাইরাস ধরা পড়েছিল। প্রায় এগারো বছর আগে তিনি অবসর নিয়ে কলকাতা পোর্টট্রাস্টে চুক্তিভিত্তিক নিরাপত্তারক্ষী হিসাবে কর্মরত ছিলেন। কর্মস্থল থেকে জ্বর গায়ে তিনি বাড়ি ফিরে আসেন। জ্বর না কমায় ১৩ এপ্রিল তাঁকে প্রথমে চাপড়া গ্রামীণ হাসপাতালে আউটডোরে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখান থেকে শক্তিনগর জেলা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে ওই দিনই তাঁকে গ্লোকালের সারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

১৫ এপ্রিল রিপোর্ট এলে দেখা যায়, তিনি করোনাভাইরাসে আক্রান্ত। পর দিনই তাঁকে বারাসতের কোভিড হাসপাতালে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। সেখানে টানা চিকিৎসার পর তিনি সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন ২৮ এপ্রিল।

সে দিন তাঁকে গ্রামের কিছু মানুষ ও স্বাস্থ্যকর্মীরা হাততালি দিয়ে স্বাগত জানিয়েছেন। তার পর থেকে তিনি ঘরবন্দি। চিকিৎসকেরা বলে দিয়েছেন, ১২ মে পর্যন্ত তাঁকে ঘরেই থাকতে হবে। একইসঙ্গে অন্যদের থেকেও দূরে থাকতে হবে। সেই কারণেই তিনি বাড়ির ভিতরে একটি ঘরে নিজেকে গৃহবন্দি করে রেখেছেন।

আর রাখবেন না-ই বা কেন? বাড়িতে যে আড়াই বছরের নাতি রয়েছে! তাকে সুস্থ রাখতে হবে তো! আগে বাড়িতে এলে পায়ে-পায়ে জড়িয়ে থাকত নাতিটা। ফাঁক পেলেই সে দাদুর কাছে চলে আসতে চায়। সকলেই তাই সব সময়ে নজরে রাখছেন ছোট বাচ্চাটিকে। যেন কোনও দাদুর ঘরে ঢুকে না পড়ে। এখন ঘরের বাইরে থেকে হাত বাড়িয়ে খাবার দিয়ে যান স্ত্রী। আলাদা থালা বাটি আর গ্লাসের ব্যবস্থা করা হয়েছে। সেখানেই খাবার ঢেলে দিয়ে যান। খাওয়ার পর নিজের বাসন নিজেই মেজে নিচ্ছেন মুস্তাকিন মণ্ডল। রবিবার তিনি বলেন, ‘‘শুনুন, একটা কথা ভাল করে বুঝে নিয়েছি। সেটা হল করোনা নিয়ে আতঙ্কিত না হয়ে সচেতন ভাবে কিছু নিয়ম পালন করতে হবে। ব্যস, তাতেই করোনা কাবু হবে।”

তিনি পরিবারের সকলের থেকে দূরে থাকছেন। কিন্তু সময় যে কাটতেই চায় না। এই ক’দিনে ঘুমের সময় বেড়েছে। কিন্তু কত আর ঘুমিয়ে কাটানো যায়? তাই মোবাইল ঘাঁটেন। নেট চালিয়ে বিভিন্ন খবরের চ্যানেলে চোখ রাখেন। খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখেন করোনা সংক্রান্ত খবর।

বছর চুয়ান্নের মানুষটি বলছেন, “করোনা সংক্রান্ত সমস্ত তথ্য জানতে ইচ্ছে করে। মনে হয়, যার সঙ্গে লড়াই করে ফিরে এলাম, তাকে শেষ পর্যন্ত কাবু করতে পারল কিনা।”

গ্রামের রাস্তার পাশেই বাড়ি। পাঁচিল দিয়ে ঘেরা। পাঁচিলের এ পাশে বসে থাকেন চেয়ার পেতে। কেউ কেউ জরুরি কোনও কাজে রাস্তা দিয়ে যান। কেউ যান মাঠে। পাঁচিলের ও-পার থেকে তাঁরা প্রশ্ন করেন— “কেমন আছেন চাচা?”

আত্মবিশ্বাসী গলায় মুস্তাকিন সাড়া দেন— ‘‘ভাল আছি। খুব ভাল।”

অন্য বিষয়গুলি:

Coronavirus in West Bengal BSF Jawan Newspaper
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy