পড়ে আছে দু’টি দেহ। পলশুন্ডা। —নিজস্ব চিত্র।
বিকল বাস টেনে নিয়ে যাচ্ছিল ক্রেন। সাইকেল নিয়ে সেই ক্রেনকে পাশ কাটাতে গিয়ে পিছনের বাসের চাকায় পিষে গেল স্কুল পড়ুয়া ভাই ও দিদি। ঘটনাটি ঘটেছে তেহট্ট ২ নম্বর ব্লকের পলশুন্ডায়।
পুলিশ জানিয়েছে, মৃত সোহানা খাতুন (১২) ষষ্ঠ শ্রেণির এবং জাহিদ শেখ (৮) দ্বিতীয় শ্রেণির পড়ুয়া। পলশুন্ডার আদর্শ শিশুনিকেতন নামে একটি বেসরকারি স্কুলের পড়ুয়া সোহানা এবং জাহিদ অন্য দিনের মতো সোমবারও সাইকেলে চেপে স্কুলে যাচ্ছিল। পিছনে ভাইকে বসিয়ে সাইকেল চালাচ্ছিল সোহানা। সে সময় ওই রাস্তা দিয়েই একটি বিকল বাস নিয়ে কুলগাছির দিকে যাচ্ছিল একটি ক্রেন। স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, পলশুন্ডা উচ্চবিদ্যালয়ের সামনের রাস্তাটি সংকীর্ণ। তাই ক্রেনটিকে পাশ কাটিয়ে যাওয়ার জন্য যথেষ্ট জায়গা পায়নি সোহানা।
রাস্তার ধার ঘেঁষেই সে সাইকেল চালাচ্ছিল। ক্রেনের পিছনের বিকল বাসটির দুলনিতে বাসটির সঙ্গে ধাক্কা লাগে সাইকেলে। এর পরে সাইকেল আর নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারেনি তারা। নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে রাস্তায় পড়ে গেলে বিকল বাসটির পিছনের চাকা পিষে দিয়ে যায় দুই খুদে পড়ুয়াকে। দু’জনেরই ঘটনাস্থলে মৃত্যু হয় বলে জানিয়েছেন প্রত্যক্ষদর্শীরা।
ঘটনার পরে ক্রেনের চালক ছাড়াও দুই কর্মীকে একটি ঘরে আটকে রাখে উত্তেজিত জনতা। পরে পুলিশ গিয়ে তাঁদের উদ্ধার করে এবং মৃতদেহ ময়নাতদন্তের জন্য শক্তিনগর হাসপাতালে পাঠায়।
পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, পড়াশোনায় ভাল ছিল দুই ভাই-বোনই। জাহিদ বলত, বড় হয়ে ডাক্তার হবে। আর সোহানার স্বপ্ন ছিল শিক্ষিকা হওয়ার। আর্থিক দিক দিয়ে সচ্ছল না হওয়া সত্ত্বেও সোহানা ও জাহিদের বাবা মোবারক হোসেন ছেলেমেয়েদের শিক্ষিত করার চেষ্টায় কোনও ফাঁক রাখেননি। কাঁসা পেতলের একটি ছোট দোকান রয়েছে তাঁর। সেই দোকানের উপার্জনে সংসার চালিয়ে যে ক’টা টাকা বাঁচত, তা খরচ করতেন ছেলেমেয়েদের শিক্ষার পিছনে। যাতে তারা ভাল ভাবে পড়াশোনা করতে পারে, সে জন্য সোহানা ও জাহিদকে বেসরকারি স্কুলে ভর্তি করিয়েছিলেন তিনি।
মোবারক বলেন, “ছেলেমেয়েদের পড়াশোনা করিয়ে সমাজের পাঁচ জনের একজন করতে চেয়েছিলাম, কিন্তু সব শেষ হয়ে গেল।’’ দিন দুয়েক আগেও জাহিদ ঠাকুরদাকে বলেছিল, সে পরীক্ষায় প্রথম হবে। সেই কথাই এখন বার বার মনে পড়ছে জাকারিয়া শেখের। আর সোহানা ও জাহিদের মা কোহিনুর বিবিকে সান্তনা দেওয়ার ভাষা খুঁজে পাচ্ছেন না প্রতিবেশীরা।
গোটা ঘটনায় শোকস্তব্ধ এলাকার মানুষ। এ দিন তাড়াতাড়ি ছুটি দিয়ে দেওয়া হয় এলাকার বেশ কিছু স্কুল।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy