Advertisement
২৩ ডিসেম্বর ২০২৪
Awas Yojana

আবাসের টাকা পেতে কুঁড়েঘরে ইটভাটা মালিক

তাঁরা কেউ ইটভাটার মালিক, কারও ১৬ চাকার একাধিক লরি আছে, কারও বড় মিষ্টির দোকান ছাড়াও রয়েছে বেশ কয়েক বিঘা জমি ও একাধিক ট্রাক্টর।

আবাস যোজনার বাড়ি।

আবাস যোজনার বাড়ি। —প্রতীকী ছবি।

সুস্মিত হালদার
চাপড়া শেষ আপডেট: ০৭ নভেম্বর ২০২৪ ০৫:১৯
Share: Save:

গ্রামের ভিতরে দোতলা দালানকোঠা মাথা তুলে দাঁড়িয়ে। বাড়ির মালিক এক প্রতিষ্ঠিত মুদি দোকানি। সেই সঙ্গে রয়েছে জমি, ট্রাক্টর আর একাধিক গাড়ি। শাসক দলের সঙ্গে রয়েছে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ।

আচমকা সেই বাড়ির কাছেই পাটকাঠির বেড়া ও টিনের চালার ঝুপড়ি তৈরি হতে দেখেন পাড়াপড়শি। খোঁজখবর নিয়ে তাঁরা জানতে পারেন, সরকারি আবাসের তালিকায় নাম আছে বাড়ির মালিকের এক ছেলের। প্রশাসন সূত্রের খবর, আবাসের সমীক্ষা করতে আসা সরকারি কর্মীদের কাছে দাবি করা হয়েছে যে ছেলের সঙ্গে বাবার সম্পর্ক না থাকায় তাঁকে ওই ঝুপড়িতে থাকতে হচ্ছে।

ঘটনাটি চাপড়ার হাঁটরা গ্রামের। তবে একমাত্র ঘটনা নয়।

চাপড়া ব্লক প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই গ্রামের একাধিক পাকা বাড়ির মালিকের নাম আছে আবাস তালিকায়। তাঁরা কেউ ইটভাটার মালিক, কারও ১৬ চাকার একাধিক লরি আছে, কারও বড় মিষ্টির দোকান ছাড়াও রয়েছে বেশ কয়েক বিঘা জমি ও একাধিক ট্রাক্টর। কেউ আবার মুম্বইয়ের হোটেলে ভাল বেতনে রাঁধুনির কাজ করেন। আবাসের টাকা পেতে এঁদের কেউ-কেউ ঘর পেতে বাবা-মার জন্য ঝুপড়ি রান্নাঘরে কাঠের চৌকি পেতে দিয়েছেন। কেউ আবার বৃদ্ধ বাবা-মাকে গোয়ালঘরের পাশে থাকার ব্যবস্থা করে দিয়েছেন।

কয়েক জন আবার নিজেই বাড়ি থেকে কিছুটা দূরে কুঁড়েঘর বানিয়েছেন। হাঁটরার কাছেই শিবিরপাড়ার এক ইটভাটা মালিকও ভাটার কাছেই রাতারাতি কুঁড়ে বানিয়ে থাকছেন। দাবি, ছেলে তাড়িয়ে দেওয়ায় ওই কুঁড়েতেই দিন কাটাতে হচ্ছে, অবস্থা বিবেচনা করে সরকার বাহাদুর যেন পাকা বাড়ির টাকা মঞ্জুর করেন! তবে ব্লক প্রশাসনের কর্তাদের দাবি, কুঁড়েঘর দেখিয়ে গল্প ফাঁদার চেষ্টা হলেও সমীক্ষা করতে যাওয়া কর্মীরা তা ধরে ফেলছেন। তাই এমন ভাবে সেই কুঁড়ের ছবি তোলা হচ্ছে যাতে পিছনে আসল বাড়ির ছবিটা ধরে পড়ে।

স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ‘ছদ্ম-দারিদ্র’ দেখিয়ে আবাসের টাকা হাতাতে চাওয়া এই সব লোকেদের প্রায় সকলেই তৃণমূলে ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত। কেউ-কেউ তৃণমূল নেতা তথা গ্রাম পঞ্চায়েত বা পঞ্চায়েত সমিতির সদস্যের আত্মীয়। তবে তৃণমূলেরই একটা অংশ আবাস তালিকায় বিরোধী গোষ্ঠীর ঘনিষ্ঠ লোকজনের নাম থাকার কথা প্রকাশ্যে আনতে শুরু করেছেন। যদিও চাপড়ার ‘দোর্দণ্ডপ্রতাপ’ নেতাদের ভয়ে এখনও কেউ প্রকাশ্যে মুখ খোলার সাহস পাচ্ছেন না।

চাপড়ার ১৩টি গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায় আবাস প্লাসের তালিকায় প্রায় ন’হাজার উপভোক্তার নাম আছে। এর মধ্যে ব্লক প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রায় ৬৩ শতাংশ নামের সমীক্ষা হয়ে গিয়েছে, যাদের একটা বড় অংশই ঘর পাওয়ার যোগ্য নয়। কিন্তু সেই সমস্ত নাম তালিকা থেকে বাদ দেওয়া কতটা সম্ভব হবে তা নিয়েও প্রশ্ন উঠছে। কারণ ওই সমস্ত নাম তালিকা থেকে বাদ না দেওয়ার জন্য তৃণমূলের স্থানীয় নেতৃত্বের তরফে প্রবল চাপ আছে বলে ব্লক প্রশাসনের কর্মীদের একাংশের অভিযোগ।

তবে চাপড়ার তৃণমূল বিধায়ক রুকবানুর রহমানের দাবি, “আমাদের দল চায়, অযোগ্যেরা যেন কোনও ভাবেই ঘর না পায়। প্রকৃত যোগ্যেরা যেন বঞ্চিত না হন। মুখ্যমন্ত্রী তেমনই নির্দেশ দিয়েছেন। এর পরও যদি কেউ অন্য রকম কিছু করার চেষ্টা করে তা হলে দল পদক্ষেপ করবে।” চাপড়ার বিডিও সমীররঞ্জন মান্না বলেন, “সরকারি নির্দেশিকা মেনেই সমীক্ষা করা হচ্ছে। যাতে অযোগ্যদের নাম কোনও ভাবে তালিকায় না থাকে তার জন্য সর্বস্তরে নজর রাখা হচ্ছে।”

অন্য বিষয়গুলি:

Awas Yojana brick kiln
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy