Advertisement
২৪ নভেম্বর ২০২৪
BJP

জয়ের গন্ধেই সুশাসনের কথা বিজেপির মুখে

প্রয়োজনে রাষ্ট্রপতি শাসন জারি করে ভোট করার পক্ষে বিজেপি।জেলা বিজেপি নেতাদের দাবি, ঠিকঠাক পরিকল্পনা মতো চললে নদিয়া ১৭টির মধ্যে ১৫টি বিধানসভা কেন্দ্রে তাঁরা জয়লাভ করার মতো অবস্থায় আছেন।

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

সুস্মিত হালদার 
শেষ আপডেট: ০৬ নভেম্বর ২০২০ ০১:১৩
Share: Save:

কখনও কালীগঞ্জ তো কখনও কল্যাণী। কোথাও গণধর্ষণের অভিযোগ তো কোথাও যুবকের ঝুলন্ত দেহ উদ্ধারকে ঘিরে প্রবল ভাবে ‘সক্রিয়’ হয়ে ওঠার চেষ্টা চালাচ্ছে বিজেপি। সে তাদের সঙ্গে ঘটনার কোনও সম্পর্ক থাক বা না-ই থাক। রাজনৈতিক মহলের অনেকেরই ধারণা, এ বার বিধানসভা ভোটে নদিয়ায় ভাল ফল হতে পারে এমন আভাস পেয়েই সর্বশক্তি প্রয়োগ করতে চাইছে তারা। আর তা-ই যে কোনও ঘটনায় নিজের কোলে ঝোল টানতে চাইছে।

গত লোকসভা ভোটে রানাঘাট কেন্দ্রে বিজেপি বিপুল ভোটে জিতেছিল। কৃষ্ণনগর কেন্দ্রে তৃণমূল জিতলেও সেই জয় মূলত সংখ্যালঘু ভোটের জোরে বলেই রাজনৈতিক মহলের ধারণা। কিন্তু লোকসভা ভোটের পর অন্তর্দলীয় কোন্দলের জেরে তাদের সক্রিয়তা অনেকটাই ঝিমিয়ে পড়ে। এখন আবার তারা সক্রিয় হওয়ার চেষ্টা করছে। দলেরই একাংশের দাবি, এর পিছনে আছেন মুকুল রায়। তৃণমূলে থাকার সময়ে মুকুল দীর্ঘদিন নদিয়ার পর্যবেক্ষক ছিলেন। এই জেলা তাঁর হাতের তালুর মতো চেনা। জেলা বিজেপি নেতৃত্বেরই একটা অংশের দাবি, মুকুল দলের সর্বভারতীয় সহ-সভাপতি হওয়ার পর থেকেই নদিয়ায় বিজেপি চাঙ্গা হয়ে উঠতে শুরু করেছে।

জেলা বিজেপি নেতাদের দাবি, ঠিকঠাক পরিকল্পনা মতো চললে নদিয়া ১৭টির মধ্যে ১৫টি বিধানসভা কেন্দ্রে তাঁরা জয়লাভ করার মতো অবস্থায় আছেন। প্রয়োজনে রাষ্ট্রপতি শাসন জারি করে ভোট করার পক্ষে তাঁরা। নদিয়ারই বাসিন্দা, বিজেপির কিসান মোর্চার রাজ্য সভাপতি মহাদেব সরকারের দাবি, “গোটা রাজ্য জুড়েই তৃণমূল খুন-ধর্ষণ, সন্ত্রাস চালাচ্ছে। জঙ্গলরাজে পরিণত করছে এই রাজ্যকে। রাষ্ট্রপতি শাসন জারি করে ভোট না করলে মানুষের প্রকৃত রায় উঠে আসা সম্ভব নয়।”

মহাদেব সরাসরি না বললেও তাঁর দলের অনেকেই ঠারেঠোরে মেনে নিচ্ছেন, বিভিন্ন অপরাধমুলক কাজকে বড় করে দেখানোর পিছনে রাষ্ট্রপতি শাসন জারি করার চেষ্টাই কাজ করছে। উদ্দেশ্য, ভোটের আগে আইনশৃঙ্খলা অবনতির যুক্তি যাতে জোরালো হয়।

মোটের উপর, বড়সড় জয়ের ‘গন্ধ’ পেতে শুরু করেছেন জেলা বিজেপি নেতারা। রানাঘাটের বিজেপি সাংসদ জগন্নাথ সরকারের দাবি, “নদিয়ার দক্ষিণাংশের প্রতিটি বিধানসভাতেই আমরা জিতব। তৃণমূলকে খুঁজে পাওয়া যাবে না।” রানাঘাটের বাসিন্দা, তৃণমূলের মুখপাত্র বাণীকুমার রায় পাল্টা বলেন, “মানুষ লোকসভায় ভুল বুঝেছিল। এখন তাদের সেই ভুল ভেঙেছে। দক্ষিণের সব ক’টি আসনেই আমরা জয়ের জায়গায় আছি।” যদিও নেতার এই দাবি বিশ্বাস করতে পারছেন না দলের কর্মীরা অনেকেই। গোষ্ঠী কোন্দলে জেরবার দল আদৌ কতটা ঘুরে দাঁড়াতে পারবে তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে অনেকেরই। বিশেষ করে রবিবার দলের নতুন জেলা ও ব্লক কমিটি ঘোষণার পর সেই কোন্দল তথা সন্দেহ আরও উসকে উঠেছে। অভিজ্ঞ বর্ষীয়ান নেতাদের সরিয়ে দল আদৌ কতটা ঘুরে দাঁড়াতে পারবে, সেই প্রশ্ন তুলতে শুরু করেছেন দলের পুরনো নেতাকর্মীরা।

বিজেপি নেতারা অবশ্য শুধু দক্ষিণ নয়, জেলার উত্তরাংশ নিয়েও বড়সড় আশা করছেন। তাঁদের মতে, কৃষ্ণনগর লোকসভা কেন্দ্রের মধ্যে একমাত্র চাপড়া ও কালীগঞ্জ বিধানসভা কেন্দ্র বাদে প্রতিটা আসনেই তাঁরা জয়ের জায়গায় আছেন। বিজেপির নদিয়া উত্তর সাংগঠনিক জেলা সভাপতি অশুতোষ পাল বলছেন, “লোকসভা ভোটে মাত্র তিনটি বিধানসভা কেন্দ্রের দেওয়া লিডেই জয়ী হয়েছে তৃণমূল। এখন সেই অবস্থাও নেই। চাপড়া বাদে সব ক’টি কেন্দ্রেই আমাদের জয় নিশ্চিত। চাপড়াতেও জয়ের পরিস্থিতি তৈরি হচ্ছে।” যা শুনে তৃণমূলের উত্তর এলাকার কো-অর্ডিনেটর নাসিরুদ্দিন আহমেদ পাল্টা বলেন, “বিজেপি দিবাস্বপ্ন দেখছে। উত্তরের সব ক’টি আসনেই আমরা জয়ের জায়গায় আছি। ওরা যতই সাম্প্রদায়িক তাস খেলুক, মৃতদেহের রাজনীতি করুক, মানুষ ওদের ছুড়ে ফেলে দেবে।”

তৃণমূল-বিজেপির দড়ি টানাটানির ভোট কেটে কিছু হিসেব পাল্টে দিতে পারে বাম-কংগ্রেস জোট। সিপিএমের জেলা সম্পাদক সুমিত দে-র কটাক্ষ, “কল্যাণীতে মৃতের পরিবারই বলছে যে সে বিজেপি করত না। মৃতদেহ সওদা করে ভোটে ফায়দা লোটার চেষ্টা করছে বিজেপি। আগে তৃণমূল এটা করত। ওরা তো আসলে একই পরিবারের সদস্য!”

অন্য বিষয়গুলি:

BJP West Bengal Assembly Election Nadia
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy