Advertisement
২৩ ডিসেম্বর ২০২৪

রদবদলে কি জগন্নাথের হাত

শুধু ওই তিন জন নয়, আরও এক মণ্ডল সভাপতিকে সরানো হতে পারে বিজেপি সূত্রের খবর। শান্তিপুর শহরের দুই মণ্ডল সভাপতি এবং বীরনগরের সভাপতিও পরিবর্তন করা হয়েছে। শান্তিপুর শহর ১ নম্বর মণ্ডল সভাপতি সুভাষ মণ্ডলকে সরিয়ে তাঁর জায়গায় আনা হয়েছে বিপ্লব করকে।

জগন্নাথ সরকার।

জগন্নাথ সরকার।

সুস্মিত হালদার
কৃষ্ণগঞ্জ শেষ আপডেট: ০৩ জানুয়ারি ২০২০ ০৪:৩৩
Share: Save:

নদিয়া দক্ষিণ সাংগঠনিক জেলার কৃষ্ণগঞ্জ বিধানসভা এলাকায় তিন মণ্ডল সভাপতিকে সরানো নিয়ে ফের প্রকাশ্যে চলে এল বিজেপির গোষ্ঠী কোন্দল। কৃষ্ণগঞ্জের বিধায়কের অভিযোগ, তাঁকে অন্ধকারে রেখেই এই রদবদল ঘটানো হয়েছে। দলের এই সিদ্ধান্ত মানতে পারছেন না বহু নেতাকর্মীও। বিষয়টি পুনর্বিবেচনা করার জন্য তাঁরা রাজ্য নেতৃত্বকে অনুরোধ জানিয়েছেন।

শুধু ওই তিন জন নয়, আরও এক মণ্ডল সভাপতিকে সরানো হতে পারে বিজেপি সূত্রের খবর। শান্তিপুর শহরের দুই মণ্ডল সভাপতি এবং বীরনগরের সভাপতিও পরিবর্তন করা হয়েছে। শান্তিপুর শহর ১ নম্বর মণ্ডল সভাপতি সুভাষ মণ্ডলকে সরিয়ে তাঁর জায়গায় আনা হয়েছে বিপ্লব করকে। শান্তিপুর শহর ২ নম্বর মণ্ডল সভাপতি আশিস দত্তের জায়গায় এসেছেন সুব্রত কর। বীরনগর শহর মণ্ডল সভাপতি সুজন বালাকে সরিয়ে আনা হয়েছে শঙ্কর দাসকে। শান্তিপুরে ২৯ নম্বর মণ্ডল সভাপতি নির্মল বিশ্বাসের বদলে এসেছেন ব্রজগোপাল দাস।

বিজেপিরই একটা অংশের দাবি, নতুন সভাপতিরা সকলেই রানাঘাটের সাংসদ জগন্নাথ সরকরের ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত। বিভিন্ন মণ্ডল সভাপতি পদে নিজের লোকদের বসিয়ে এবং বর্তমান জেলা সভাপতিকে সামনে রেখে প্রাক্তন দক্ষিণ জেলা সভাপতি জগন্নাথ সংগঠনে নিজের কর্তৃত্ব ফের কায়েম করতে চাইছেন।

এর আগে মানবেন্দ্রনাথ রায়কে সরিকে অশোক চক্রবর্তীকে দক্ষিণ সাংগঠনিক জেলা সভাপতি করার পরেই দলের একটা বড় অংশ দাবি করেছিলেন, নিজের অনুগামীকে পদে বসিয়ে প্রাক্তন সভাপতি জগন্নাথই ফের পিছন থেকে দল পরিচালনা করবেন। এ বার সেই দাবি আরও জোরদার হল। যদিও বর্তমান দক্ষিণ সাংগঠনিক জেলা সভাপতি অশোক চক্রবর্তীর দাবি, “এমন ভাবার কোনও কারণ নেই। যাঁদের সরানো হয়েছে, তাঁদের কারও মেয়াদ শেষ হয়েছে, আবার কারও বয়স হয়ে গিয়েছে। এটা একটা সাংগঠনিক প্রক্রিয়ার মধ্যে দিয়েই হয়েছে।”

তবে কৃষ্ণগঞ্জে অপসারিত মণ্ডল সভাপতিদের কারও কারও অভিযোগ, ওই বিধানসভায় উপনির্বাচনের আগে তৎকালীন জেলা সভাপতি জগন্নাথ তাঁর ঘনিষ্ঠ এক জনকে প্রার্থী করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু এলাকার চার মণ্ডল সভাপতি তাঁর বিরোধিতা করে আশিস বিশ্বাসকে প্রার্থী পদে চান। রাজ্য নেতৃত্বের কাছে তাঁরা লিখিত আবেদনও করেন। দল আশিসকে প্রার্থী করার পর থেকেই জগন্নাথের সঙ্গে তাঁদের দূরত্ব তৈরি হয়।

৩৭ নম্বর মণ্ডলে তাপস ঘোষকে সরিয়ে রথীন বিশ্বাসকে সভাপতি করা হয়েছে। ৩৫ নম্বরে গৌতম ঘোষকে সরিয়ে আনা হয়েছে প্রণব সরকারকে। ৩৪ নম্বর মণ্ডলে পরিতোষ বিশ্বাসকে সরিয়ে নির্মল বিশ্বাসকে সভাপতি করা হয়েছে। আবার ৩৬ নম্বরের ক্ষেত্রে কোনও ঘোষণাই করা হয়নি। ওই মণ্ডলের সভাপতি প্রণত বিশ্বাসকেও সরিয়ে দেওয়ার প্রস্তুতি চলছে বলে দলের একটি সূত্রের দাবি।

বিজেপি সূত্রের খবর, বিধায়ক আশিসের সঙ্গে সাংসদ জগন্নাথের সম্পর্কে গোড়া থেকেই বিশেষ মধুর নয়। বরং সদ্য অপসারিত জেলা সভাপতি মানবেন্দ্রনাথ রায়ের সঙ্গে বিধায়কের সম্পর্ক ভাল ছিল। সেই কারণে ওই চার মণ্ডল সভাপতিও জগন্নাথের বিরোধী বলে পরিচিত হয়ে উঠেছিলেন। ৩৭ নম্বরের অপসারিত সভাপতি তাপসের দাবি, “আমাদের অপরাধ, আমরা জগন্নাথ সরকারের পছন্দের লোকের পরিবর্তে আশিস বিশ্বাসকে প্রার্থী হিসেবে চেয়েছিলাম। আর সেই কারণেই উনি নানা কলকাঠি নেড়ে আমাদের সরিয়ে দিলেন।”

৩৫ নম্বরের অপসারিত সভাপতি গৌতমের ঘোষের দাবি, “জগন্নাথ সরকার ফের দক্ষিণ সাংগঠনিক জেলা সভাপতি হতে চেয়েছিলেন। তার জন্য আমাদের সই করতে বলেছিলেন। আমরা তা করিনি। আশিসবাবুকে প্রার্থী হিসেবে চাওয়ার পাশাপাশি এটাও আমাদের বিরুদ্ধে গিয়েছে।”

বিধায়কের আক্ষেপ, “আমায় অন্ধকারে রেখে মণ্ডল সভাপতিদের বদল করা হয়েছে। আমি রাজ্য নেতৃত্বের সঙ্গে কথা বলছি। তাদের কী কারণে সরিয়ে দেওয়া হল, সেটা তো পরিষ্কার হওয়া দরকার।” জগন্নাথের দাবি, “একটা সাংগঠনিক প্রক্রিয়ার মধ্যে দিয়ে মণ্ডল সভাপতিদের নির্বাচন করা হয়েছে। এতে বিধায়ক বা সাংসদের কোনও ভূমিকা থাকে না। যাঁরা এ সব কথা বলছেন, তাঁরা মনে হয় নিজের দলের সাংগঠিনক বিষয়টা ঠিক জানেন না।”

তবে দলে এই রদবদলের সিদ্ধান্ত মানতে পারছেন না অনেক কর্মীই। তাঁদের বক্তব্য, সাংগঠনিক শক্তির উপরে ভর করেই কয়েক মাস আগে কৃষ্ণগঞ্জ বিধানসভা উপনির্বাচনে ৩১ হাজার এবং লোকসভা ভোটে এই কেন্দ্র থেকে ২২ হাজার ভোটে এগিয়ে ছিল তৃণমূল। তার পরেও দলীয় কোন্দলের জেরে এই রদবদল ২০২১ সালের বিধানসভা ভোটে প্রভাব ফেলবে। যদিও দলেরই একটা অংশের দাবি, ভোটে সাফল্যের পরে কোনও কোনও মণ্ডল সভাপতি দুর্নীতির সঙ্গে জড়িয়ে গিয়েছিল। তাদের না সরিয়ে কোনও উপায় ছিল না। নদিয়া দক্ষিণ সাংগঠনিক জেলায় দলের নির্বাচন আধিকারিক বিজয় বন্দ্যোপাধ্যায় অবশ্য সাংসদের পাশেই দাঁড়িয়েছেন। তিনি বলেন, “সব পরিবারেই মতপার্থক্য থাকে। তবে এটা দলের সিদ্ধান্ত, কারও ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত নয়।”

অন্য বিষয়গুলি:

BJP Jagannath Sarkar Conflict
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy