প্রতীকী ছবি।
বাড়ির সামনে রাস্তার আলো আচমকা নিভে যেতেই প্রমাদ গণেছিলেন সিপিএম প্রার্থী। কয়েক মুহূর্তের মধ্যে গোটা বারো মোটরবাইক গর্জন করে বাড়ির সামনে এসে থামে। লাফিয়ে নামে জনা পঁচশি আরোহী। সকলেরই মুখ রুমালে ঢাকা। চাকদহর শিমুরালি, শুক্রবার রাত।
বেগতিক বুঝে খিড়কির দোর খুলে দৌড় দেন সিপিএম প্রার্থী। আর সামনের দরজা দিয়ে ঢোকে রুমালে মুখ ঢাকা যুবকরা। শুরু হয় হুমকি আর গালিগালাজ— “.... (ছাপার অযোগ্য) মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার না করলে জানে মেরে দেব।” এর পরেও অবশ্য শনিবার শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত মাটি কামড়ে পড়ে থেকেছেন ওই প্রার্থী। মনোনয়ন প্রত্যাহার করেননি। এই শিমুরালিতেই বিয়েবাড়ি থেকে তুলে নিয়ে গিয়ে হুমকি দেওয়া হয়েছিল সিপিএমের আর এক প্রার্থীকে।
সিপিএমের অভিযোগ, হুমকির মুখেই মনোনয়ন প্রত্যাহার করতে হয়েছে হাঁসখালির মামজোয়ানের দুই দলীয় প্রার্থীকে। তাঁদের মাথায় পিস্তল ঠেকিয়ে হুমকি দেওয়া হয়েছিল। একই ভাবে বেতনা-গোবিন্দপুর পঞ্চায়েত এলাকায় তিন জন ও দক্ষিণপাড়া-১ পঞ্চায়েত এলাকার চার জন খুনের হুমকিতে বিচলিত হয়ে পিছু হটেছেন। নবলা-৪ শাখা সম্পাদক আশুতোষ দত্তের বাড়িতে গিয়ে জেলা পরিষদের প্রার্থী কামিনী মণ্ডলকে হুমকি দেওয়া হয়েছে। গয়েশপুরে প্রার্থী পেশকার মণ্ডলের বাড়ি ভাঙচুর করা হয়েছে।
বারবাকপুরের দৌলতাবাদে বাড়ি বয়ে আসা যুবকদের বলা হয়েছিল, কংগ্রেস প্রার্থী প্রিয়াঙ্কা ঘোষ সেখানে নেই। তারা গ্রামেই প্রিয়াঙ্কার বাপের বাড়িতে খুঁজতে চললে শ্বশুর সঞ্জীব আর দেওর চিরঞ্জিত পিছু নেন। আর তাতেই চটে গিয়ে দুষ্কৃতীরা তাঁদের দিকে গুলি ছোড়ে। তাঁদের মুর্শিদাবাদ মেডিক্যালে ভর্তি করানো হয়েছিল। অবস্থার অবনতি হওয়ায় শনিবার ভোরে তাঁদের কলকাতায় এনআরএস হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। ওই রাতে কান্দিতেও বহু বিরোধী প্রার্থীর বাড়িতে বোমা পড়ে।
ফরাক্কায় বিরোধীদের মনোনয়ন তোলাতে পুলিশি সন্ত্রাসের অভিযোগ ফের উঠল শনিবার। কংগ্রেস বিধায়ক মইনুল হকের অভিযোগ, এক দিনের মধ্যে কংগ্রেস প্রার্থী শুভ্রা পাল ও তাঁর স্বামী ছাড়াও ৫০ জন কর্মীর বিরুদ্ধে ন’টি মামলা রুজু করেছে পুলিশ। সবেতেই বোমা মেরে খুনের চেষ্টার অভিযোগ দেওয়া হয়েছে। তৃণমূল ও পুলিশের যৌথবাহিনী ভগবানগোলা ২-এ গ্রাম পঞ্চায়েতের সাত প্রার্থীকে জোর করে মনোনয়ন প্রত্যাহার করিয়েছে বলেও কংগ্রেসের অভিযোগ। যদিও পুলিশ অভিযোগ অস্বীকার করেছে।
বিজেপির অভিযোগ, করিমপুরের মধ্যগোপালপুরে তাদের প্রেমানন্দ মণ্ডলের বাড়িতে হানা দিয়ে ভাঙচুর করেছে তৃণমূলের লোকজন। জেলার আরও বহু জায়গায় সন্ত্রাস হয়েছে বলে দলের নেতারা বলছেন। অন্য দিকে, চাপড়া, চাকদহ ও রানাঘাট-২ ব্লকের বিভিন্ন এলাকায় রাতের অন্ধকারে কার্যত দাপিয়ে বেড়িয়েছে বাইক বাহিনী। কিন্তু ওই সব জায়গায় গোষ্ঠীদ্বন্দ্বে জেরবার তৃণমূল।
শুক্রবার রাতে পুংলিয়া গ্রামে তৃণমূলের চাকদহের ব্লক সভাপতি দিলীপ বিশ্বাসের বাড়ির উঠোনে বোমা পড়ে। তৃণমূল বিরোধীদের দিকে আঙুল তুললেও সিপিএম ও বিজেপির দাবি, এটা আসলে ওই গোষ্ঠীদ্বন্দ্বেরই ফল।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy