দুর্নীতির অভিযোগ বেতাই-১ পঞ্চায়েতে। নিজস্ব চিত্র।
নদিয়ার তেহট্টের বেতাই-২ গ্রাম পঞ্চায়েতে ১০০ দিনের আইবিএস প্রকল্পের কাজে দুর্নীতির অভিযোগ এনে থানায় এফআইআর দায়ের করলেন বিডিও! প্রায় ২৯ লক্ষ টাকা তছরুপের অভিযোগে ওই গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান এবং ১৩ জন কর্মীর নাম রয়েছে ওই এফআইআর-এ। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে শুরু হয়েছে রাজনৈতিক চাপানউতর।
এফআইআর দায়ের করে বিডিওর অভিযোগ, ওই গ্রাম পঞ্চায়েতে ১০০ দিনের কাজে তিনটি অর্থবর্ষ ধরে কয়েক লক্ষ টাকা তছরুপ হয়েছে। ২০১৮-’১৯, ২০১৯-’২০ এবং ২০২০-’২১ অর্থবর্ষে বেতাই-১ গ্রাম পঞ্চায়েতের বিরুদ্ধে ১ কোটি ৬৯ লক্ষ টাকা তছরুপের অভিযোগ তুলেছেন তিনি। বিডিওর অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ।
স্থানীয় সূত্রের খবর, ১০০ দিনের কাজে আর্থিক দুর্নীতির প্রথম অভিযোগ এনেছিলেন গ্রামবাসীদের একাংশ। অভিযোগ করেছিলেন, তাঁদের ভুল বুঝিয়ে আধার কার্ড, জমির দলিলের মতো গুরুত্বপূর্ণ নথি হাতিয়ে নিয়ে তাঁদের নামে লক্ষ লক্ষ টাকা উঠিয়ে নেওয়া হয়েছে সরকারি কোষাগার থেকে। অভিযোগকারী এক গ্রামবাসী রমেন বিশ্বাস বলেন, ‘‘আমার কলাবাগান ও পেঁপেবাগানে ১০০ দিনের প্রকল্প বাবদ ২৮ হাজার এবং ৬৮ হাজার টাকা বরাদ্দ হয়েছে বলে সরকারি নথিতে উল্লেখ আছে। কিন্তু আদপে সেখানে কোনও কাজই হয়নি! আর আমিও কোন টাকা পাইনি!’’
এমন বেশ কয়েক জন গ্রামবাসী মিলে বিডিওর কাছে পূর্ণাঙ্গ তদন্ত চেয়ে স্মারকলিপি জমা দিয়েছিলেন। এর পর যুগ্ম বিডিওর নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের কমিটি তৈরি করে তদন্ত শুরু হয়। তদন্তে পঞ্চায়েত প্রধান সঞ্জিত পোদ্দার এবং পঞ্চায়েত কর্মী সুজিত মণ্ডল, গৌতম হীরা, উজ্জ্বল রায়, অসিত বিশ্বাস-সহ ভিএলপি, জিআরএস , এক্সিকিউটিভ অ্যাসিস্ট্যান্ট মিলিয়ে মোট ১৩ জনকে দুর্নীতির প্রেক্ষিতে কারণ দর্শানোর নোটিস দেওয়া হয়।
উত্তর সন্তোষজনক না হওয়ায় গত ৬ অগস্ট তেহট্ট-১ ব্লকের বিডিও তেহট্ট থানায় অভিযুক্তদের নামে বিশ্বাসভঙ্গ, প্রতারণা, সরকারি অর্থ নয়ছয়, সংগঠিত অপরাধ-সহ বেশ কিছু জামিন অযোগ্য ধারায় মামলা দায়ের করেন। তারপর থেকেই পলাতক বেতাই-২ গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান সঞ্জিত।
নদিয়া জেলা প্রশাসন সূত্রের খবর, এক দিকে পুলিশ যেমন এই ঘটনার তদন্ত করছে, তেমনই এক ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে ঘটনা তদন্ত করছে জেলা প্রশাসন। অভিযোগ প্রমাণিত হলে প্রয়োজনীয় আইনি পদক্ষেপ করা হবে। দুর্নীতির অভিযোগ সামনে আসতেই নদিয়া উত্তর বিজেপির জেলা সভাপতি অর্জুন বিশ্বাস শাসক দলকে কটাক্ষ করে বলেছেন, ‘‘তৃণমূল ও দুর্নীতি সমার্থক। তবে আশার কথা প্রশাসনিক কর্তারা এর বিরুদ্ধে সরব হচ্ছেন।’’ স্থানীয় সিপিএম নেতা শুভঙ্কর বলেন, ‘‘পঞ্চায়েতের ক্ষমতায় আসার আগে তৃণমূলের যে সদস্যেরা ভাঙা সাইকেল চড়ত তাদের বাড়িতে আজ বিলাসবহুল গাড়ি, কোথা থেকে পয়সা এল তার উত্তর জনগণকে দিতে হবে।’’
অন্য দিকে, তৃণমূলের সংগঠনিক জেলা সভাপতি কল্লোল খানের প্রতিক্রিয়া, ‘‘তৃণমূল কখনওই দুর্নীতিকে সমর্থন করে না। প্রশাসনিক ভাবে তদন্ত শুরু হয়েছে। দোষী ব্যক্তিরা নিশ্চিত ভাবেই শাস্তি পাবে।’’ বেতাই-২ পঞ্চায়েত দফতরে তালা ঝোলানো। প্রধান সঞ্জিতের সঙ্গে যোগাযোগ করার বারবার চেষ্টা করা হলেও তা সম্ভব হয়নি। বাড়িতে যোগাযোগ করা হলে তাঁর স্ত্রী বলেন, ‘‘দীর্ঘ দিন বাড়িতে নেই। কোথায় আছে বলতে পারব না।’’ পুলিশ জানিয়েছে, অভিযুক্ত ব্যক্তির খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না, তাঁকে গ্রেফতার করার চেষ্টা চলছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy