প্রতীকী ছবি।
পদের প্রভাব খাটিয়ে লক্ষ লক্ষ টাকার তহবিল তছরুপের অভিযোগ উঠেছে একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের ডেপুটি সার্কেল হেডের বিরুদ্ধে। উচ্চ পর্যায়ের তদন্তে প্রাথমিক ভাবে অভিযোগের সারবত্তা মেলায় ওই ডেপুটি সার্কেল হেড যশপাল সিংহ ভাট্টির বিরুদ্ধে কোতোয়ালি থানায় অভিযোগ দায়ের করেছেন ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষ। তাঁকে সাসপেন্ডও করা হয়েছে বলে ব্যাঙ্ক সূত্রের খবর।
ওই রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্ক সূত্রের খবর, ব্যাঙ্কের নদিয়া ডেপুটি সার্কেল হেড ছিলেন যশপাল সিংহ ভাট্টি। মাস কয়েক আগে ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষের নজরে আসে যে কৃষ্ণনগর, গোবরাপোতা-সহ বিভিন্ন শাখা থেকে তিনি ব্যাঙ্কের নামে কোটি কোটি টাকার ডিমান্ড ড্রাফট তৈরি করিয়েছেন। বিষয়টি জেনে খটকা লাগে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের। তাঁরা উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত শুরু করেন। ভিজিল্যান্স ও অডিট ইনস্পেকশন শুরু হয়। সেই অভ্যন্তরীণ তদন্ত রিপোর্ট গত ২৩ সেপ্টেম্বর পাঠানো হয় ব্যাঙ্কের জেনারেল ম্যানেজার ও জ়োনাল হেডের কাছে।
ব্যাঙ্ক সূত্রে জানা গিয়েছে, সেই অভ্যন্তরীণ রিপোর্ট অনুযায়ী যশপাল সিংহ ভাট্টি তাঁর পদের প্রভাব খাটিয়ে বিভিন্ন শাখা থেকে কোটি কোটি টাকার ডিমান্ড ড্রাফট তৈরি করান। তার মধ্যে বেশ কয়েক লক্ষ ড্রাফটের টাকা তুলেও নেওয়া হয়েছে। ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষের তরফে জানা গিয়েছে, ওই ব্যক্তি বিভিন্ন শাখার ম্যানেজারদের দিয়ে সংশ্লিষ্ট ব্যাঙ্কের নামে ডিমান্ড ড্রাফট তৈরি করিয়ে নিজের কাছে নিয়ে নেন। আর সেই ড্রাফটের টাকা ব্যাঙ্কের নিজস্ব তহবিল থেকে নিতে বলেন। বেশ কয়েক মাস ধরে এমনটা চলছিল। এখনও পর্যন্ত এমন প্রায় তিন কোটি টাকার ড্রাফটের সন্ধান মিলেছে। ব্যাঙ্কের এক কর্তার দাবি, “একে একে তিনি সেই ড্রাফটগুলি ভাঙাতে শুরু করেন। কিছু টাকা তিনি নগদে তুলে নেন। আর কিছু ড্রাফট তাঁর আত্মীয়-পরিচিতের অ্যাকাউন্ট থেকেও ভাঙিয়ে নেওয়া হয়েছে।”
ওই ব্যাঙ্ককর্তা জানান, ড্রাফট থেকে নগদে টাকা তুলতে গেলে টাকার পরিমাণ ২০ হাজারের কম হতে হবে। তাঁর দাবি, “সেই কারণে শেষের দিকে বিভিন্ন শাখায় মোটা অঙ্কের ড্রাফট ফিরিয়ে দিয়ে ২০ হাজার টাকা করে ভেঙে একাধিক ড্রাফট তৈরি করে দেওয়ার নির্দেশ দেন ওই অফিসার। আর তাতেই নিজের বিপদটা ডেকে আনলেন তিনি। কারণ এর পরেই সংশ্লিষ্ট শাখার ম্যানেজারদের সন্দেহ হতে থাকে।”
ওই ম্যানেজারেরাই প্রথমে বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানান। গত জুলাই মাস নাগাদ বিষয়টি প্রথম সামনে আসার পরে শুরু হয় তদন্ত। তদন্ত শুরু হতেই ছুটি নিয়ে কৃষ্ণনগর থেকে বেপাত্তা হয়ে যান ওই ডেপুটি সার্কেল হেড। এর পরে আর কোনও ভাবেই তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি বলে কর্তৃপক্ষের দাবি। তিনিও কোনও যোগাযাগ করেননি। তদন্তের রিপোর্ট সামনে আসার পরে গত ২৮ সেপ্টেম্বর ব্যাঙ্কের বর্তমান নদিয়া সার্কেল হেড বিরাজমান কেরকেট্টা কোতোয়ালি থানায় গোটা বিষয়টি জানিয়ে অভিযোগ দায়ের করেন। যশপাল সিংহকে সাসপেন্ডও করে দেওয়া হয়। ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষের দাবি, সাসপেনশনের চিঠি ডাকযোগে পঞ্জাবের অমৃতসরে তাঁর বাড়ির ঠিকানায় পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে।
তবে প্রথম থেকেই প্রশ্ন উঠছিল যে এত বড় একটা প্রতারণা কি কারও একার পক্ষে করা সম্ভব? এক ব্যাঙ্ক কর্তার দাবি, “প্রথম থেকে আমাদের মনে হয়েছিল যে এই কাজ এক জনে করেনি। সঙ্গে আরও কেউ আছে। সেই আশঙ্কাই মনে হয় সত্যি প্রমাণিত হতে চলেছে। যশপাল সিংহ ভাট্টির অধস্তন এক অফিসারের জড়িত থাকার প্রমাণ মিলতে শুরু করেছে। তাঁর এক আত্মীয়ের অ্যাকাউন্ট থেকেও কয়েক লক্ষ টাকার ড্রাফট ভাঙিয়ে নেওয়ার প্রমাণ মিলেছে। তবে যতক্ষণ না নিশ্চিত প্রমান পাওয়া যাচ্ছে, তত দিন তাঁর বিরুদ্ধে কোনও আইনি পদক্ষেপ করা সম্ভব হচ্ছে না।”
বর্তমান সার্কেল হেড বিরাজমান কেরকেট্টা বলেন, “এখনও পর্যন্ত প্রায় ২২ লক্ষ ৩৫ হাজার টাকা তুলে নেওয়ার প্রমাণ মিলেছে। আরও কত টাকা এভাবে তুলে নেওয়া হয়েছে, তা ভিজিল্যান্স ও অডিট ইনস্পেশনে দেখা হচ্ছে।” তাঁর দাবি, “পদের অপব্যবহার করে উনি বিভিন্ন শাখার ম্যানেজারদের দিয়ে কোটি কোটি টাকার ডিমান্ড ড্রাফট তৈরি করেছিলেন। সেটা ভাঙাতেও শুরু করেন। বিষয়টি আমাদের নজরে চলে আসায় সবটা তুলে নিতে পারেননি।”
নদিয়ার ব্যাঙ্ক লিড ম্যানেজার তপু দত্ত বলছেন, “ঊর্ধ্বতন কতৃপক্ষ সবটা খতিয়ে দেখেছেন। প্রাথমিক ভাবে অভিযোগ প্রমাণ হওয়ার পর পুলিশে অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। এখন আইন তার নিজের পথেই চলবে।” কোতোয়ালি থানার পুলিশ নথিপত্র খতিয়ে দেখতে শুরু করেছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy