নিহত তৃণমূল কর্মীর শোকার্ত পরিবার। (ইনসেটে) নিহত শান্তনু মাহাতো। শান্তিপুরে মঙ্গলবার। ছবি: প্রণব দেবনাথ
ভর দুপুরবেলা জুয়ার ঠেকে কুপিয়ে খুন করা হল এক তৃণমূল কর্মীকে। এবং সেই খুনের ষড়যন্ত্রে জড়িত থাকার অভিযোগে এফআইআর হয়েছে খোদ শান্তিপুরের বিধায়ক অরিন্দম ভট্টাচার্যের বিরুদ্ধে।
মঙ্গলবার ব্রহ্মতলা বাজারে এই খুনকে কেন্দ্র করে শান্তিপুরে তৃণমূলের অভ্যন্তরীণ বিরোধ যেমন তীব্র হয়েছে তেমনই দলীয় বিধায়কের নাম খুনের সঙ্গে জড়ানোর অস্বস্তিতে পড়েছে তৃণমূল। ফের সামনে চলে এসেছে অজয় দে-অরিন্দম ভট্টাচার্যের দীর্ঘদিনের পুরনো লড়াইয়ের প্রসঙ্গ।
শান্তনু মাহাতো ওরফে গনা নামে যে খুন হয়েছে সে শান্তিপুরের পুরপ্রধান অজয় দের ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত। এবং এই ঘটনার পিছনে শান্তিপুরের বিধায়ক অরিন্দম ভট্টাচার্যের হাত রয়েছে বলে অভিযোগ। যদিও অরিন্দমবাবু এই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। এবং তৃণমূলের নেতারা আপ্রাণ প্রকাশ্যে বোঝানোর চেষ্টা করছেন যে, এই খুনের সঙ্গে অজয়-অরিন্দম সংঘাতের কোনও সম্পর্ক নেই। তবে মঙ্গলবার রাতে অরিন্দমের বিরুদ্ধে এফআইআর হওয়ায় তৃণমূল যথেষ্ট চাপে পড়েছে বলে দলীয় সূত্রের খবর।
নিহতের স্ত্রী ঝুম্পা মাহাতো প্রকাশ্যে বলেছেন, “এই ঘটনায় ১০০ শতাংশ অরিন্দম জড়িত। আমরা অজয় দের সঙ্গে তৃণমূল করি। অরিন্দম ভট্টাচার্য তা চাইতেন না। তিনি আমার স্বামীকে নিজের দলে টানতে নানা ভাবে চাপ দিতেন। তাতেও কাজ না হওয়ায় মিথ্যে মামলায় জেল খাটিয়েছেন। এই গোষ্ঠী কোন্দলের জেরেই খুন হতে হল আমার স্বামীকে।”
তৃণমূলের জেলা পর্যবেক্ষক রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায় অবশ্য মন্তব্য করেছেন, ‘‘এই ধরণের খুনখারাপি আমাদের দল কোনও ভাবেই বরদাস্ত করবে না। গোষ্ঠী কোন্দলের কোনও তথ্য আমার কাছে নেই। আমরা পুলিশকে বলে দিয়েছে, এই ঘটনার সঙ্গে যেই যুক্ত থাকুক না কেন তার বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপ করতে হবে, তা তিনি যে দলেরই হোন না কেন।’’ রানাঘাট পুলিশ জেলার সুপার ভিএসআর অনন্তনাগ বলেন, ‘‘তদন্তে যা উঠে আসবে সেই মতো পদক্ষেপ করা হবে।’’
পুলিশ ও স্থানীয় তৃণমূল সূত্রের খবর, গনা বিভিন্ন সমাজবিরোধী কার্যকলাপের সঙ্গে জড়িত ছিল। তার বিরুদ্ধে শান্তিপুর থানায় একাধিক অভিযোগও আছে। মাস কয়েক আগে পুলিশ তাকে মাদাক পাচারের অভিযোগে গ্রেফতার করে। এর পিছনেও অরিন্দম ভট্টাচার্যের ভূমিকা ছিল বলে অভিযোগ। সম্প্রতি সে জেল থেকে ছাড়া পেয়ে ব্রহ্মতলা বাজারে জুয়ার ঠেক চালাতে থাকে।
প্রাথমিক তদন্তের পর পুলিশ জানিয়েছে, দিন দু’য়েক আগে শান্তিপুরে একটা ক্রিকেট ম্যাচের ফাইনাল ছিল। সেখানে অমন্ত্রিত অতিথি ছিলেন অরিন্দম ভট্টাচার্য। তাঁকে মঞ্চে নিয়ে যাওয়ার সময় ধাক্কাধাক্কি হয়। তা নিয়ে নিহত গনার সঙ্গে ঝামেলা হয় বিধায়ক ঘনিষ্ঠদের। অনেকের দাবি, তারই জেরে এই খুন। অভিযোগ উঠেছে, খুনের ঘটনার ঘণ্টা দু’য়েক আগে বিধায়ক অরিন্দম ভট্টাচার্যকে গাড়ি নিয়ে ওই এলাকায় ঘুরতে দেখা গিয়েছে। ঘটনার সময় কাছাকাছি এলাকায় ছিলেন অরিন্দম।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছে, বেলা দেড়টা নাগাদ মুখে কাপড় ঢেকে বেশ কয়েক জন দুষ্কৃতী জুয়ার ঠেকে ঢুকে শান্তনু ওরফে গনাকে এলোপাথাড়ি কোপাতে থাকে। মুহূর্তে এলাকার দোকানপাট বন্ধ হয়ে যায়। দুষ্কৃতীরা নিরাপদে পালিয়েও যায়। পরে পুলিশ গিয়ে রক্তাক্ত অবস্থায় গনাকে উদ্ধার করে শান্তিপুর স্টেট জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখান থেকে তাকে শক্তিনগর জেলা হাসপাতালে রেফার করে হয়। কিন্তু পথেই তার মৃত্যু হয়।
অরিন্দমবাবুর দাবি, “আমি ওই এলাকা দিয়ে যাচ্ছিলাম। ফোনে খবর পাই, বাজারের ভিতরে গোলমাল হচ্ছে। বিষয়টি দেখতে এলাকায় যাই। তবে গাড়ি থেকে নামতে পারিনি। তার আগেই স্থানীয় মানুষ আমাকে এলাকা থেকে চলে যেতে বলেন। আমি চলে আসি।” তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা খুনের ষড়যন্ত্রের অভিযোগ সম্পর্কে তাঁর বক্তব্য, “আমরা দলের সকলে এক সঙ্গে আছি। যাঁরা এ সব বলছেন তাঁরা আসলে দলের কেউ নন।” আর পুরপ্রধান অজয় দে-র কথায়, “কারা এই ঘটনা ঘটিয়েছে সেটা শহরের মানুষ ভাল করেই জানে। পুলিশও জানে। আমরা চাই, পুলিশ তদন্ত করে এই ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের শাস্তির ব্যবস্থা করুক। নিহত যুবক তৃণমূলের সক্রিয় সমর্থক ছিলেন। তাঁকে এ ভাবে খুন করাটা শহরের মানুষ ভাল চোখে দেখছেন না।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy