প্রাচীন সংসারের চিহ্ন।
গুপ্তযুগের স্বর্ণমুদ্রা মিলেছিল সুতির আহিরণে। জাতীয় সড়ক নির্মাণের মাটিতে। সেই মাটি আনা হয়েছিল গণকরের কাটনাই এলাকা থেকে। তিন বছর পর ২০১৬ সালে সেই এলাকায় খনন চালিয়ে সমীক্ষা করতে গিয়ে রাজ্য প্রত্ন দফতর উদ্ধার করেছিল প্রচুর সংখ্যায় টেরাকোটার কাজ করা বিভিন্ন ধরনের মৃৎপাত্র। প্রদীপ, চাকা, পুঁতি, মাটির বল।
দেড় হাজার বছর আগে দীপটি জ্বালিয়ে হয়ত এমনই প্রার্থনা করতেন এখনকার মুর্শিদাবাদে গণকরের কোনও বধূ? তাঁর কণ্ঠে থাকত মাটির পুঁতির মালা। তাঁর ছেলে খেলত মাটির গোলক নিয়ে। হয়তো প্রার্থনা করত “শুভ করো, কল্যাণ করো, আরোগ্য করো, ধনসম্পদ দাও, বুদ্ধিনাশ করো শত্রুর। তুমি দীপ-জ্যোতি, তোমাকে নমস্কার করি।”
গণকরের ঢিবি কাটা মাটি থেকেই পাওয়া গিয়েছিল ‘স্বর্ণযুগে’র স্বর্ণমুদ্রা। এ বার সেই গুপ্তযুগেরই দীপ, পুঁতি, বল ছাড়াও নানা মৃৎপাত্র পাওয়া গেল গণকরের মাটি খুঁড়ে। গুপ্তযুগের এই প্রদীপটির নীচে জল ধরে রাখারও বন্দোবস্ত ছিল। যাতে, প্রদীপটি ধরলে, হাতে তাত না লাগে। পুরাতত্ত্ব সর্বেক্ষণের বিশেষজ্ঞদের মতে, এমন প্রদীপের ব্যবহার এখনও বহু গ্রামে রয়েছে। ভারতীয় সভ্যতায় সাংস্কৃতিক বৈশিষ্টের এই প্রবাহমানতা অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। কিন্তু বাংলার এই অঞ্চল সম্পর্কে পুরাতাত্ত্বিক ধারণা এখনও স্পষ্ট নয়। এ বার বিস্তৃত ক্ষেত্র অনুসন্ধান দরকার।
কিন্তু তার পরেও কেটে গেছে ৪টি বছর। গণকরের শিয়ালকালী তলায় এখনও জ্বল জ্বল করছে রাজ্য পুরাতত্ত্ব দফতরের লেখা ‘এক্সকাভেসন সাইট’ লেখা বোর্ড।
তিন দিন ধরে রাজ্য প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের উপ অধিকর্তা বিনয় মনি’র নেতৃত্বে ৮ সদস্যের প্রতিনিধি দল পুরাতত্ত্ব নিয়ে গণকর এলাকায় সমীক্ষা চালান। গণকর লাগোয়া কাটনাই, বোধপুর সহ কয়েকটি এলাকায় রাজ্য প্রত্ন দফতর যে সমীক্ষা চালায় তারই অন্যতম মির্জাপুরের “শিয়াল কালিতলা”। সেখানে ১৬০০ বর্গ মিটার এলাকাকে চিহ্নিত করে খনন করা হয়।
রাজ্য পুরাতত্ত্ব দফতরের আধিকারিকেরা জানান, আহিরণের যে স্বর্ণমুদ্রা পাওয়া গিয়েছিল সেগুলি গুপ্তযুগের। তার কাছাকাছি এলাকা থেকেই যদি ঘর-সংসারের অস্তিত্ব প্রমাণিত হয়, তা হলে কি বুঝে নিতে হবে যে, এখানে দীর্ঘ দিন ধরেই যখন যেমন তখন তেমন সম্পন্ন মানুষের বসবাস ছিল?
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy