হাটপাড়ার প্রাচীন সভ্যতার বিকাশ কত দূর পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল তা জানতে উৎখনন চালিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দিয়ে যান পুনের দুই বিশেষজ্ঞ শরদ রাজগুরু ও ভাস্কর দেওতার। প্রত্নতত্ত্বের ইতিহাসে মুর্শিদাবাদে নতুন এক সম্ভাবনাময় দিগন্ত খুলে যাওয়ার আশার আলো সেদিন দেখেছিলেন রাজ্য প্রত্নতত্ত্ব দফতর।
পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমানের বীরভানপুরে ১৯৫৪ ও ৫৭ সালে খনন চালিয়ে ভারতীয় পুরাতত্ত্ব সর্বেক্ষণ বিভাগ এই ধরনের প্রস্তর সভ্যতার নিদর্শন আবিষ্কার করেন বি বি লাল। সরকারি রিপোর্টে প্রাপ্ত সেখানকার প্রস্তর নিদর্শনগুলিকে ১০ হাজার বছরের প্রাচীন সভ্যতার নিদর্শন বলে উল্লেখ করা হয়েছে। হাটপাড়া তারও অতীত।
হাটপাড়ায় সপ্তাহ তিনেক ধরে খনন কাজ চালিয়ে কিছুটা হতাশ হয়ে পড়ে রাজ্য প্রত্নতত্ত্ব দফতর একসময় এই খনন বন্ধ করে দিতে চেয়েছিলেন। কারণ তখনও পর্যন্ত হোসেন শাহের আমল ছাড়া সেভাবে কোনও নিদর্শনই মেলেনি। খননের গভীরতা বাড়তেই আশার আলো দেখেন প্রত্ন কর্তারা। জমির সিজুয়া স্তর দেখেই হাটপাড়ায় প্রাগৈতিহাসিক জনবসতির প্রমাণ পান ডেকান কলেজের দুই বিশেষজ্ঞ। ২ মিটার হলুদ মাটির স্তরে মেলে বিভিন্ন প্রকার মাছের অজস্র কাঁটা ও হাড় যা এত দীর্ঘ সময় কাল পরেও অক্ষত রয়েছে। মিলেছে টেরাকোটার ছোট ছোট পাত্র। তাতে নকশা করার জন্য পোড়া মাটির তৈরি ড্যাবারও মিলেছে। উদ্ধার হওয়া প্রস্তর আয়ুধ থেকে এটা স্পষ্ট এখানে অস্ত্র তৈরির কারখানা গড়ে তোলা হয়েছিল।
বিশেষজ্ঞদের মতে, এই এলাকার মানুষের খাদ্যাভাসের মধ্যে মাছের ব্যাপক ব্যবহার ছিল এবং সেগুলি যে পুড়িয়ে খাওয়া হয়েছে তাও বোঝা যায় কাঁটাগুলির তামাটে রং দেখে। প্রশ্ন জাগে, এগুলি কি নদীর মাছ, নাকি সামুদ্রিক? নদীর মাছ হলে এটা স্বাভাবিক ঘটনা কারণ গঙ্গা পদ্মার জ়োন এই এলাকা। আর সামুদ্রিক মাছ হলে তা কিভাবে এই এলাকায় আসা সম্ভব? তবে কি এই এলাকাও সামুদ্রিক জোয়ার ভাটার নাগালে ছিল?
হাটপাড়ায় পাওয়া গিয়েছে অসংখ্য শস্য জাতীয় দানা। মাছের হাড় ও শস্য দানা সহ সমস্ত জৈব সামগ্রী পরীক্ষার জন্য পাঠানোর কথা হয় আমেদাবাদ রিসার্চ ল্যাবরেটরিতে। যা থেকে জানা সম্ভব সেই যুগের মানুষের খাদ্যাভাস এবং তা বহু দিনের প্রাচীন। হাটপাড়ার সেই ইতিহাসের খোঁজ এখন ফাইল বন্দি রাজ্য প্রত্ন দফতরের ।
রাজ্য প্রত্ন বিশেষজ্ঞদের মতে, হাটপাড়ার প্রাগৈতিহাসিক সভ্যতা গণকর থেকে মহীপাল পর্যন্ত ভাগীরথীর পাড় বরাবর বিস্তৃত ছিল। পরবর্তীতে তা ধ্বংস প্রাপ্ত হয় অথবা ভূপ্রাকৃতিক পরিবর্তনে পরবর্তীতে সেভাবে জনবসতি গড়ার সুযোগ হয় নি। আবিষ্কারের বিচারে তাই হাটপাড়ার সাফল্য ছিল এক বিরাট মাইল স্টোন। কিন্তু সেই সাফল্যকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা হয় নি হাটপাড়ায় প্রগৈতিহাসিক সভ্যতার নাগাল পেয়েও।
শরদ রাজগুরু ও ভাস্কর দেওতার খননের বিভিন্ন মাটির স্তর ও উদ্ধার হওয়া প্রস্তর আয়ুধগুলি প্রাথমিক ভাবে পর্যবেক্ষণের পর রাজ্য প্রত্ন দফতরকে জানান, বহু আগে প্রস্তর-অস্ত্র নির্মাণের কারখানা গড়ে তোলা হয়েছিল হাটপাড়া এলাকায়।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy