অসীম হালদার। নিজস্ব চিত্র
প্রতিদিনের মতো প্রাতর্ভ্রমণে বেরিয়েছিলেন তিনি। অগ্রহায়ণের ভোরে জলঙ্গির পদ্মাপাড়ে ঠান্ডাও পড়ছে বেশ। তাই বাড়ি থেকে বেরোনোর সময় গায়ে চাপিয়ে নিয়েছিলেন সোয়েটার। কিছুটা পথ হাঁটার পরে সোয়েটার খুলে হাঁটছিলেন জলঙ্গির গৌরীপুরের বাসিন্দা, প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক অসীম হালদার। কোমরে সোয়েটার বেঁধে অসীমকে ও ভাবে হাঁটতে দেখে পাচারকারী বলে সন্দেহ হয় জলঙ্গির ১৪১ নম্বর ব্যাটেলিয়নের চার জওয়ানের।
অভিযোগ, স্রেফ সন্দেহের বশেই তাঁদের মধ্যে এক জওয়ান বেধড়ক মারধর শুরু করেন অসীমকে। লাঠির আঘাতে তাঁর মাথাও ফেটে যায়। অসীমের অভিযোগ, ‘‘হিন্দিতে ওঁদেরকে আমার পরিচয় দেওয়ার পরেও কোনও কথা শুনতে রাজি হননি। মারধর করতে করতে ওঁরা নো ম্যানস ল্যান্ডের দিকে টেনে নিয়ে গিয়ে গুলি করবেন বলেও হুমকি দিচ্ছিলেন। সেই সময় আরও কিছু প্রাতর্ভ্রমণকারীকে ওই পথ দিয়ে আসতে দেখে ওঁরা ছেড়ে দেন।’’
শনিবার ভোরে জলঙ্গির বিশ্বাসপাড়ার ওই ঘটনার পরে ক্ষুব্ধ স্থানীয় বাসিন্দারা ঘণ্টাখানেক করিমপুর-বহরমপুর রাজ্যসড়ক অবরোধ করেন। ঘটনাস্থলে ছুটে আসেন স্থানীয় গ্রাম পঞ্চায়েত প্রধান, জলঙ্গির বিধায়ক তৃণমূলের আব্দুর রাজ্জাক মণ্ডল ও জলঙ্গি থানার পুলিশ। পরিস্থিতি সামাল দিতে বিএসএফ ওই ঘটনায় ক্ষমা চেয়ে দায় সারে। গুরুতর জখম অসীমকে ভর্তি করানো হয় সাদিখাঁরদিয়াড় গ্রামীণ হাসপাতালে। তাঁর মাথায় সাতটি সেলাই হয়েছে।
অসীমের আক্ষেপ, ‘‘বিএসএফ সাধারণ মানুষকে কী ভাবে, বলুন তো! হাঁটতে হাঁটতে গরম লেগেছিল বলে সোয়েটারটা খুলে কোমরে জড়িয়ে নিয়েছিলাম। আর সেটা দেখেই আমাকে ওদের পাচারকারী বলে মনে হল! বহু বার নিজের পরিচয় দিয়েছি। বলেছি লোকজনের কাছে আমার বিষয়ে খোঁজ নিতে। সে সব না করে ওরা মেরে মাথা ফাটিয়ে দিল!’’
শনিবার দুপুরেই জলঙ্গি থানায় বিএসএফের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেছেন অসীমের স্ত্রী অঞ্জনা হালদার। অঞ্জনা বলেন, ‘‘ভোরে হাঁটতে বেরনো ওর দীর্ঘ দিনের অভ্যাস। এক জন শিক্ষকের সঙ্গে ওরা এমন আচরণ করল কী ভাবে সেটা ভেবেই অবাক হচ্ছি।’’ পুলিশ জানিয়েছে, ওই ঘটনার তদন্ত শুরু হয়েছে। আর বিএসএফের তরফে ভুল স্বীকার করে জানানো হয়েছে, অভিযুক্ত জওয়ানের বিরুদ্ধে বিভাগীয় তদন্ত শুরু হয়েছে।
বিধায়ক আব্দুর রাজ্জাক মণ্ডল বলেন, ‘‘বিএসএফের ভূমিকায় আমরাও ক্ষুব্ধ। ওদের যেখানে ডিউটি করার কথা সেখানে ওদের পা পড়ে না। উল্টে গ্রামের মধ্যে ঢুকে সাধারণ মানুষের উপর অত্যাচার করাটা ওদের রোজনামচা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই ঘটনার আমরা তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছি এবং অভিযুক্ত জওয়ানের উপযুক্ত শাস্তি চাইছি।’’
অসীম যে স্কুলের প্রধান শিক্ষক সেই রাজানগর প্রাথমিক বিদ্যালয়ও সীমান্ত ঘেঁষা। অসীম বলছেন, ‘‘বেশ কয়েক বছর ধরে ওই স্কুলে শিক্ষকতা করছি। সেখানেও বিএসএফ রয়েছে। তারা কখনও কখনও জেরা-টেরা করে। কিন্তু এমন ঘটনা যে আমার সঙ্গে ঘটবে তা কখনও কল্পনা করিনি।’’
স্থানীয় বাসিন্দারা জানাচ্ছেন, সীমান্তে বিএসএফের হেনস্থা নতুন নয়। নতুন ব্যাটেলিয়ন আসার পরে এই সমস্যা আরও বাড়ে। জলঙ্গিতেও তেমনটাই ঘটেছে। জলঙ্গির বাসিন্দা কাইমউদ্দিন মণ্ডল বলছেন, ‘‘বিএসএফ যদি এক জন প্রধান শিক্ষকের সঙ্গে এমনটা করতে পারে, তা হলে আমাদের সঙ্গে কী করে, ভাবুন এক বার! অভিযুক্ত ওই জওয়ানের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হওয়া দরকার। যাতে বিএসএফ এমনটা করার আগে দু’বার ভাবে!’’
জলঙ্গির এবিপিটিএ-র সম্পাদক অম্বুজাক্ষ মণ্ডল বলেন, ‘‘ওই ঘটনার তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছি। এর আগেও বহু বার বিএসএফের হয়রানির শিকার হয়েছেন আমাদের শিক্ষকেরা। আমরা গোটা ঘটনা জানিয়ে বিডিও-র কাছে লিখিত অভিযোগ জানাব।’’
রাজ্য তৃণমূল প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির জলঙ্গি চক্রের সভাপতি ইমাদুল হক বলছেন, ‘‘এই ঘটনা কোনও ভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। ঘটনার পরেই বিএসএফ আমাদের কাছে ক্ষমা চেয়েছে ঠিকই। কিন্তু অভিযুক্ত জওয়ানের উপযুক্ত শাস্তি চাই আমরা।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy