শক্তিনগর জেলা হাসপাতালে ভাঙচুর। —নিজস্ব চিত্র।
কলকাতার নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজে জুনিয়ার ডাক্তারকে মারধর করার ঘটনার উত্তাল প্রতিবাদ হয়েছিল দেশ জুড়ে। এমনকি বিদেশ থেকেও চিকিৎসকেরা প্রতিবাদের পক্ষে সমর্থন জানিয়েছিলেন। নবান্নে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে জুনিয়ার ডাক্তারদের বৈঠক, চিকিৎসকদের নিরাপত্তা সংক্রান্ত একাধিক প্রস্তাব এবং হামলাকারীদের গ্রেফতারি—একের পর এক এগিয়েছে ঘটনাপ্রবাহ।
সেই রেশ মেটার আগেই ফের চিকিৎসকের উপর হামলার অভিযোগ উঠল শক্তিনগর জেলা হাসপাতালে। সেখানে সোমবার সকালে এক রোগীর মৃত্যুর পর তাঁর আত্মীয়েরা তুমুল গোলমাল শুরু করেন। কয়েক জন চেয়ার তুলে কর্তব্যরত মহিলা চিকিৎসকের দিকে তেড়ে যান বলে অভিযোগ। তাঁরা চিকিৎসককে গালাগাল দেওয়ার পাশাপাশি জরুরি বিভাগে ভাঙচুর চালান বসেও অভিযোগ। কোতয়ালি থানার পুলিশ এই ঘটনায় ভিত্তিতে পার্থ ভৌমিক ও প্রীতম দত্ত নামে দু’জনকে গ্রেফতার করেছে। যদিও অভিযুক্তদের দাবি, জরুরি বিভাগ থেকে ওয়ার্ডে ভর্তি করার পর রোগী প্রায় ৪০ মিনিট বিনা চিকিৎসায় পড়েছিলেন। কোনও ডাক্তার তাঁকে দেখতে আসেননি। চিকিৎসকদের অবহেলার কারণেই তাঁর মৃত্যু হয়েছে বলে পাল্টা অভিযোগ করেন তাঁরা।
সোমবার কোতোয়ালির গোয়ালপাড়ার বাসিন্দা গোপাল বিশ্বাস(৩০) মাঠ থেকে গোরুর গাড়িতে করে পাট নিয়ে আসছিলেন। সেই সময় কোনও ভাবে তিনি গাড়ির নীচে পড়ে যান এবং তাঁর বুকের উপর দিয়ে পাট বোঝাই গোরুর গাড়ির চাকা চলে যায়। গুরুতর জখম অবস্থায় তাঁকে শক্তিনগর জেলা হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়। রোগীর পরিবারের অভিযোগ, জরুরি বিভাগ থেকে মেল সার্জিক্যাল বিভাগে পাঠানোর পর ৪৫ মিনিট শয্যায় পড়ে ধড়ফড় করছিলেন তিনি। শেষে নিস্তেজ হয়ে যান। তখন নার্সরা এসে পরীক্ষা করে জানান যে, মৃত্যু হয়েছে গোপাল বিশ্বাসের।
এর পরেই ক্ষোভে ফেটে পড়েন তাঁর বাড়ির লোক। জরুরি বিভাগে তখন ছিলেন চিকিৎসক মৌসুমী মন্ডল ও জগন্নাথ সাহা। সেখানে ভাঙচুর শুরু হয়। কয়েক জন চেয়ার তুলে মৌসুমী দেবীকে মারার জন্য তেড়ে যান। তখনই পুলিশ এসে পরিস্থিতি সামলায়। চিকিৎসক জগন্নাথ সাহা-র দাবি, “জরুরি বিভাগ থেকে বেড ইনচার্জ চিকিৎসক প্রণব ঘোষকে জানানো হয়েছিল।” সার্জিক্যাল বিভাগের কর্তব্যরত নার্সও বলেছেন, “আমরা প্রণব ঘোষকে কল দিয়েছিলাম।”
তা হলে কেন তিনি এলেন না?
বার বার ফোন করেলেও তা ধরেননি প্রণববাবু। আর সুপার শচীন্দ্রনাথ সরকার বলছেন, “আউটডোরে অনেক রোগীর ভিড় থাকায় তিনি নিজে আসতে পারেননি। কিন্তু তাঁর এক ছাত্রকে পাঠিয়েছিলেন। রোগীর যা অবস্থা ছিল তাতে তিনি নিজে গেলেও কিছু করার ছিল না।” কিন্তু রোগী মরণাপন্ন বলে বেড ইনচার্জ শেষ চেষ্টা করবেন না? তাঁকে মরার জন্য ছেড়ে দেবেন? কেন তিনি মৃত্যুমুখে থাকা রোগীকে দেখতে নিজে না এসে ছাত্রকে পাঠালেন? সদুত্তর দিতে পারেননি হাসপাতালের সুপার শচীন্দ্রনাথ সরকার।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy