আচমকাই মঙ্গলবার রাতে অসুস্থ হয়ে পড়েন ঐন্দ্রিলা শর্মা।
বহরমপুর বাসস্ট্যান্ড থেকে ইন্দ্রপ্রস্থ মোড় হয়ে একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের এটিএমের পাশের গলি। সেখানে ঢুকে দুটো বাড়ির পরে সাদা রঙের দোতলা বাড়িতে বুধবার সকাল থেকে প্রতিবেশীদের আনাগোনা লেগেই রয়েছে। সকলের চোখেমুখে উদ্বেগের ছাপ রয়েছে ঠিকই। তা সত্ত্বেও ওঁদের সকলের আশা, এ বারও জীবনযুদ্ধে ঐন্দ্রিলারই জয় হবে। মেয়ের আচমকা অসুস্থতায় মা মানসিক ভাবে ভেঙে পড়লেও টলি-অভিনেত্রীর পরিবারকে এখন শক্তি জোগাচ্ছেন ওই পড়শিরাই। ওঁদের দৃঢ় বিশ্বাস, আবারও ‘মিরাকেল’ ঘটবে। দুরারোগ্য ব্যাধিকে হারিয়ে মেয়ে ঘরে ফিরবেই।
মঙ্গলবার রাতে স্ট্রোক হয় ঐন্দ্রিলা শর্মার। আশঙ্কাজনক অবস্থায় তাঁকে ভর্তি করানো হয় হাওড়ার একটি বেসরকারি হাসপাতালে। হাসপাতাল সূত্রে খবর, অভিনেত্রীর মাথায় রক্ত জমাট বেঁধে গিয়েছে। ভেন্টিলেশনে রাখা হয়েছে তাঁকে। এর আগেও ঐন্দ্রিলার শরীরে দু’বার থাবা বসিয়েছে মারণ রোগ ক্যানসার। তবে দু’বারই লড়াই করে তিনি ফিরে এসেছেন। ঐন্দ্রিলার জীবনযুদ্ধের সেই কাহিনিই পড়শিদের মুখে মুখে। এক জনের কথায়, ‘‘ঈশ্বর ওঁর মধ্যে ক্যানসারের সঙ্গে লড়াই করার মতো জীবনীশক্তি ঢেলে দিয়েছেন।’’
বেলার দিকে ঐন্দ্রিলার বাড়িতে এসেছিলেন তাঁর ছোটবেলার নাচের শিক্ষিকা রেবা মজুমদার। পুরনো স্মৃতি হাতড়াতে হাতড়াতে তিনি বলতে থাকেন, ‘‘ছোট থেকে নাচ, গান, আঁকা এবং পড়াশোনা— সবেতেই দারুণ ঐন্দ্রিলা। কোনও নাচ ওকে দু’বার শেখাতে হয়নি। আর কী ভাল যে আবৃত্তি করে!’’ এসেছিলেন স্কুলের ভূগোলের শিক্ষিকা সঞ্চিতা তিওয়ারিও। তাঁর কথায়, ‘‘ঐন্দ্রিলা যে কী শক্ত মনের মেয়ে, তা আমরা যাঁরা ওঁকে চিনি, সকলেই জানি। এই লড়াইয়েও ওঁর জয় হবেই।’’
ঐন্দ্রিলার মা শিখা শর্মা নার্সিং হস্টেলের ইনচার্জ। বাবা উত্তম শর্মা মুর্শিদাবাদের পাঁচগ্রাম হাসপাতালের চিকিৎসক। ঐন্দ্রিলাও কলকাতার একটি নামী ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে ভর্তি হয়েছিলেন। কিন্তু শারীরিক অসুস্থতার কারণে পড়াশোনা শেষ করতে পারেননি। ১৮ বছর বয়সে প্রথম বার তাঁর শরীরে ক্যানসার ধরা পড়ে। তখন একাদশ শ্রেণিতে পড়তেন অভিনেত্রী। তবে টানা দেড় বছর মারণ রোগের সঙ্গে লড়াই করে ফিরে এসেছিলেন হাসিমুখে। এর পর অভিনয় জগতে পা রেখে বিস্তর প্রশংসা কুড়িয়েছিলেন ঐন্দ্রিলা। বিপুল জনপ্রিয়তা পেয়েছিলেন ‘জিয়নকাঠি’ ধারাবাহিকে কাজ করে। ঠিক তার পরেই দ্বিতীয় বার ক্যানসারে আক্রান্ত হন তিনি। কিন্তু অভিনেত্রী কথা দিয়েছিলেন, অসুখকে হারিয়ে অভিনয় দুনিয়ায় আবার ফিরবেন এক গাল হাসি নিয়ে। তিনি সেই কথা রেখেওছিলেন।
এত কম সময়ে মেয়েকে এত বার করে অসুস্থ হতে দেখে স্বাভাবিক ভাবেই বিধ্বস্ত মা শিখা। তিনি জানান, মেয়ের অবস্থা এখনও আশঙ্কাজনক। এখনও কোমাতেই রয়েছেন ঐন্দ্রিলা। এই পরিস্থিতিতে কথা বলতে চাইলেন না বাবা উত্তম। তাঁর কথায়, ‘‘কথা বলতে ভাল লাগছে না। সমস্ত রকম চেষ্টা চালানো হচ্ছে। আমার বিশ্বাস, মেয়ে আবারও ফিরে আসবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy