Advertisement
২৩ ডিসেম্বর ২০২৪

গুলি-কাণ্ডের জের, জলে নিষেধ, ডাঙায় ডিঙি

সেই পদ্মা। সেই ইলিশের মরসুম। এবং এখনও দগদগে ‘কুবের’দের সেই অসহায়তা। উপন্যাসে কুবের শরীর খারাপ সত্ত্বেও মাছ ধরতে বেরিয়েছিল।

হতাশ হয়ে পদ্মাপাড় থেকে ফিরে যাচ্ছেন ধীবরেরা। বুধবার কাকমারি চরে। ছবি: সাফিউল্লা ইসলাম

হতাশ হয়ে পদ্মাপাড় থেকে ফিরে যাচ্ছেন ধীবরেরা। বুধবার কাকমারি চরে। ছবি: সাফিউল্লা ইসলাম

সুজাউদ্দিন বিশ্বাস
জলঙ্গি শেষ আপডেট: ২৪ অক্টোবর ২০১৯ ০৪:০০
Share: Save:

‘‘...উপার্জন যা হয় এ ইলিশের মরশুমে। শরীর থাক আর যাক, এ সময় একটা রাত্রেও ঘরে বসিয়া থাকিলে কুবেরের চলিবে না।...’’

—পদ্মানদীর মাঝি, মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়

সেই পদ্মা। সেই ইলিশের মরসুম। এবং এখনও দগদগে ‘কুবের’দের সেই অসহায়তা। উপন্যাসে কুবের শরীর খারাপ সত্ত্বেও মাছ ধরতে বেরিয়েছিল। জলঙ্গির পদ্মাপাড়ের ধীবরেরাও এই মরসুমে শরীর খারাপকে বিশেষ গুরুত্ব দেন না। জ্বর-জ্বালা নিয়েও ডিঙি ভাসান পদ্মায়।

কিন্তু সপ্তাহখানেক থেকে পদ্মা সুনসান। ডিঙি বাঁধা রয়েছে পাড়ে। কিন্তু ধীবরদের পদ্মায় নামার হুকুম নেই। গত ১৭ অক্টোবর পদ্মায় মাছ ধরাকে কেন্দ্র করে বিএসএফ-বিজিবি-র টানাপড়েনে গুলিবিদ্ধ হয়ে বিএসএফের এক জওয়ান মারা যান। জখম হন এক জন। জলঙ্গির শিরচরের ধীবর প্রণব মণ্ডলকে বিজিবি আটক করে। পরে তাঁকে তুলে দেওয়া হয়েছে বাংলাদেশ পুলিশের হাতে। বুধবার বিএসএফের তরফে এই প্রথম সরকারি ভাবে ঘোষণা করা হল যে, ঘটনার দিন কোনও প্ররোচনা ছাড়াই গুলি চালিয়েছিল বিজিবি। এবং এই ঘটনার নিন্দাও করেছে বিএসএফ।

তার পর থেকেই চেনা পদ্মা অচেনা হয়ে উঠেছে। ডিঙি তৈরি। জালও মজুত। কিন্তু পদ্মায় নামতে গেলেই বাধা দিচ্ছে বিএসএফ। কিছু জানতে চাইলে ভাঙা রেকর্ডের মতো তারা শুনিয়ে যাচ্ছে, ‘উপরওয়ালা কা অর্ডার হ্যায়।’

নিট ফল, ইলিশের ভরা মরসুমে ধীবরদের অন্তহীন হয়রানি। গত বৃহস্পতিবার থেকে ঝুড়িতে ইলিশ তো দূরের কথা, একটা ছোট মাছও ওঠেনি। ঠায় বাড়িতে বসেই দিন কাটছে ধীবরদের। যত দিন যাচ্ছে, কপালের ভাঁজ ততই চওড়া হচ্ছে তাঁদের।

হতাশ ধীবরেরা জানাচ্ছেন, ইলিশের মরসুমে তাঁদের অনেকেই জমি ‘লিজ’ কিংবা স্ত্রীর গয়না বন্ধক দিয়ে জাল ও নৌকার ব্যবস্থা করেছেন। এখন মাছ ধরা বন্ধ। ফলে সংসার চালাতে গিয়ে বাকি গয়নাও বন্ধক রাখছেন তাঁদের অনেকেই।

বুধবার ভোর থেকেই কাকমারি চরে পদ্মার পাশে সাইকেলে জাল, ঝুড়ি বেঁধে দাঁড়িয়েছিলেন সুনীল মণ্ডল। তিনি বলছেন, ‘‘মঙ্গলবার রাতে শুনেছিলাম, বুধবার থেকে বিএসএফ পদ্মায় নামতে দেবে। কিন্তু এসে শুনলাম, এখনও পদ্মায় নামার হুকুম নেই। কী ভাবে সংসারটা চলবে, বুঝতে পারছি না। মঙ্গলবারেই সাগরপাড়ার একটি গয়নার দোকানে স্ত্রীর গয়না বন্ধক দিয়ে কিছু টাকা এনেছি। জানি না, সেই গয়না আর উদ্ধার করতে পারব কি না।’’

সুনীলের মতো শতাধিক ধীবরদের অবস্থা একই রকম। তাঁরা কেউ জানেন না, ফের কবে থেকে তাঁরা পদ্মায় নামতে পারবেন। কাকমারি চরের রফিকুল শেখ বলছেন, ‘‘ইলিশের এই মরসুমে যে ক্ষতি আমাদের হয়ে গেল তা কোনও ভাবেই পূরণ হবে না।’’

দক্ষিণবঙ্গ মৎস্যজীবী ফোরামের মুর্শিদাবাদের সম্পাদক বিদ্বানকুমার দাস বলছেন, ‘‘বুধবারেও আমরা বিএসএফের সঙ্গে বৈঠক করেছি। আশা করি, দ্রুত সমস্যা মিটে যাবে।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Kakmari Firing Fishermen River Padma
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy