Advertisement
১৯ নভেম্বর ২০২৪
Nadia

লুকিয়েই কি টাকার খেলা

কলেজ শিক্ষক থেকে শুরু করে ছাত্রছাত্রী, অভিভাবক এবং ছাত্রনেতাদের অনেকেই জানিয়েছেন, ছাত্রভর্তি নিয়ে এত দিনের লক্ষ-লক্ষ টাকার কারবার এক দিনে উঠে যাওয়া অসম্ভব।

ফাইল চিত্র।

ফাইল চিত্র।

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ০৫ জুলাই ২০১৮ ০৩:৪৫
Share: Save:

এত দিন যা ছিল খুল্লমখুল্লা, সরকার কড়া হওয়ার পর সেটাই চলছে ঢাকাচাপা দিয়ে, লুকিয়ে।

কলেজ শিক্ষক থেকে শুরু করে ছাত্রছাত্রী, অভিভাবক এবং ছাত্রনেতাদের অনেকেই জানিয়েছেন, ছাত্রভর্তি নিয়ে রাজ্য জুড়ে এত দিনের লক্ষ-লক্ষ টাকার কারবার এক দিনে উঠে যাওয়া কার্যত অসম্ভব। ভর্তির কারবারিরা এখন বেপরোয়া থেকে শুধু একটু সতর্ক হয়েছে মাত্র। ভর্তি প্রক্রিয়া অনলাইনে চলবে বলে সরকার নির্দেশ জারি করার পরেও অভিযোগ, মোটা টাকা নিয়ে ভর্তির বেআইনি ব্যবসা থামেনি, গোপনে চলছে। শান্তিপুর কলেজের এক প্রবীণ অধ্যাপক তো বলেই ফেললেন, ‘‘এরা রক্তবীজের ঝাড়! এক জন মরলে আরও হাজার জন মাথা তুলবে। আপাতত কিছুদিন চুপচাপ থাকবে, আবার পরিস্থিতি একটু ঠাণ্ডা হলে স্বরূপ বেরোবে।’’ দুর্নীতিকে স্বমূলে বিদেয় করা যে অত সহজ নয় তা বললেন করিমপুর পান্নালাল কলেজের এক অধ্যাপক।

বুধবারই শান্তিপুর কলেজের অধ্যক্ষ-র কাছে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন রাজপুতপাড়ার বাসিন্দা বিশ্বজিৎ বিশ্বাস। ওই কলেজে শারীরশিক্ষা বিভাগে ভর্তি হতে এসেছিলেন তিনি। তাঁর অভিযোগ, তাঁর থেকে কম নম্বর থাকা ছেলেমেয়েরা ভর্তি হয়ে গেলেও তাঁর নাম মেধাতালিকায় ওঠেনি। তা নিয়ে কলেজে খোঁজ নিতে এলে কলেজের ‘দাদা’রা তাঁর কাছ থেকে টাকা চেয়েছেন। তাঁদের নেতৃত্ব দিয়েছেন কলেজের এজিএস নিজে। তাঁর কথায়, “আমি টাকা দিতে পারিনি বলে আমার নাম ওঠেনি। অধ্যক্ষকে সব জানিয়েছি। জানি না খোদ মুখ্যমন্ত্রী এ বিষয়ে উদ্যোগী হওয়ার পরেও কেন এদের নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না।’’

যদিও শান্তিপুর কলেজের অধ্যক্ষ চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য দাবি, অভিযোগ জমা পড়লেও আদতে তেমন কিছু ঘটেনি। তিনি বলেন, “আমি খোঁজ নিয়ে দেখেছি যে, ছেলেটির নাম বাদ যাওয়ার কথা সত্য কিন্তু ভর্তির জন্য টাকা চাওয়ার অভিযোগ ঠিক নয়। আমাদের কলেজে এ সব হচ্ছে না।’’ তাঁর ব্যাখ্যা, ‘‘আসলে যে সংস্থাকে ভর্তির প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল তারা ভুলবশত ওয়েবসাইটে তালিকা প্রকাশ করার সময় নামটি বাদ দিয়ে দিয়েছিল। আমরা ঠিক করে নিয়েছি। ছাত্রটিকে ভর্তি করে নেওয়া হবে।” অভিযোগ অস্বীকার করেছেন কলেজের এজিএস টিএমসিপির ফিরোজ আলি শেখ।

এ সবের মধ্যেই এ দিন নদিয়ার প্রতিটি কলেজের অধ্যক্ষরাই জোর গলায় দাবি করেছেন, যেমন করেই হোক ভর্তি নিয়ে তোলাবাজি রুখে দেওয়া হবে। কিন্তু কি ভাবে, তার স্পষ্ট উত্তর দিতে পারেননি প্রায় কেউই। তবে, শিক্ষা দফতরের নির্দেশ পাওয়ার পর ছাত্রছাত্রীদের যাতে ‘ভেরিফিকেশন’ এর জন্য কলেজে আসতে না-হয় তার জন্য নোটিস জারি করতে ব্যস্ত হয়ে পড়ছেন কলেজ কতৃপক্ষ। কৃষ্ণনগরের দ্বিজেন্দ্রলাল কলেজের অধ্যক্ষ সাহাজাহাল আলি যেমন বলছেন, “আমরা তো এসএমএস করে সবাইকে জানিয়েছি।” কৃষ্ণনগর গভর্নমেন্ট কলেজের ভারপ্রাপ্ত শিক্ষক শোভন নিয়োগীর কথায়, “বাংলায় বিষয়টি লিখে ওয়েবসাইটে দিয়েছি।” অনেক কলেজ রাতারাতি ফ্লেক্স তৈরি করে টাঙিয়ে দিয়েছে। তাতে বড়-বড় করে লেখা— ভর্তি হওয়ার জন্য আর সশরীরে কলেজে আসতে হবে না। নির্দিষ্ট টাকা জমা দিয়ে ভর্তি হতে হবে অনলাইনে। পুলিশের পদস্থ কর্তাদেরকেও বিভিন্ন কলেজে আচমকা হানা দিতে দেখা গিয়েছে। বুধবার বিকেলে নবান্ন থেকে কলেজগুলিতে নির্দেশ এসেছে, ১০ তারিখের মধ্যে ভর্তি প্রক্রিয়া শেষ করতে হবে। উচ্চশিক্ষা অধিকর্তার তরফ থেকে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, ভর্তির পরেই কোন বিষয়ে কত আসন ফাঁকা পড়ে থাকছে তা প্রত্যেক কলেজকে জানাতে হবে।

যদিও বুধবার কৃষ্ণনগরের কাছে ভান্ডারখোলায় কর্মিসভা করার পরে বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ বলছেন, “সবটাই নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গিয়েছে। সেটা ভাগাড় হোক বা ভর্তি। টিএমসিপির ছেলেরাই তো টাকা তুলছে।”

আবার এসএফআই এর জেলা সম্পাদক শান্তুনু সিংহ বলছেন, “নতুন নিয়মে এক জন একাধিক জায়গায় ভর্তি হবে। তাতে সমস্যা আরও বাড়বে। গোপনে টাকা তোলাও বাড়বে।” যদিও টিএমসিপির জেলা সভাপতি তা উড়িয়ে দিয়ে বলেন,“বিজেপি বা সিপিএম কী বলল তাতে কিছু আসা যায় না। কারণ, ছাত্রছাত্রীরাই দেখছে নদিয়ায় সর্বত্র স্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় ভর্তি চলছে।”

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy