Advertisement
০২ নভেম্বর ২০২৪

আনসার-ই তন্ময়, পাকড়াও বগুলায়

অ্যাসিড হামলার ঘটনায় শেষমেশ এক সন্দেহভাজনকে পাকড়াও করেছে পুলিশ। বগুলার কাছে ছোট চুপরিয়া এলাকায় এক আত্মীয়ের বাড়িতে সে গা-ঢাকা দিয়ে ছিল। নাম ইমান শেখ। শনিবার দিনভর তাকে দফায়-দফায় জেরা করা হয়। শেষ পর্যন্ত শনিবার রাতে তাকে গ্রেফতার করা হয়।

সুস্মিত হালদার
হাঁসখালি শেষ আপডেট: ১৬ অক্টোবর ২০১৬ ০১:১৩
Share: Save:

অ্যাসিড হামলার ঘটনায় শেষমেশ এক সন্দেহভাজনকে পাকড়াও করেছে পুলিশ। বগুলার কাছে ছোট চুপরিয়া এলাকায় এক আত্মীয়ের বাড়িতে সে গা-ঢাকা দিয়ে ছিল। নাম ইমান শেখ। শনিবার দিনভর তাকে দফায়-দফায় জেরা করা হয়। শেষ পর্যন্ত শনিবার রাতে তাকে গ্রেফতার করা হয়।

সোমবার রাতে হাঁসখালির গাজনা দক্ষিণপাড়ায় বিছানা তাক করে ছোড়া অ্যাসিডে ঝলসে গিয়েছিল গাজনা হাইস্কুলের একাদশ শ্রেণির ছাত্রী এবং তার মায়ের দেহ। মেয়েটি এখনও কলকাতায় এনআরএসে ভর্তি। সেখানে গিয়ে দু’বার তার সঙ্গে কথা বলেছেন তদন্তকারী অফিসারেরা। তার এক ঘনিষ্ঠ বান্ধবীকেও একাধিক বার জিজ্ঞাসাবাদ করেছে পুলিশ।

পুলিশের দাবি, দু’টি মেয়ের দেওয়া বর্ণনার সঙ্গেই পাকড়াও হওয়া ইমানের অনেক মিল। বয়স ৩৭-৩৮, দিনমজুর, তিন ছেলেমেয়ের বাবা। একটি মিসড কলের মাধ্যমে ছাত্রীটির বান্ধবীর সঙ্গে তার প্রথম আলাপ হয়। এবং তার কাছ থেকেই ছাত্রীর মোবাইল নম্বর পায় সে। এর পরে দু’টি আলাদা নামে দু’টি আলাদা নম্বর থেকে দু’জনকে সে ফোন করতে থাকে। এক জনের কাছে তার নাম ‘আনসার’, আর এক জনের কাছে ‘তন্ময় হালদার’। ভুয়ো পরিচয়ে দু’টি সিমও কিনেছিল সে।

ছাত্রীটির বান্ধবীর কথা অনুযায়ী, বিষয়টা প্রথমে নিছক বন্ধুত্বের পর্যায়ে ছিল। কিন্তু কিছু দিনের মধ্যেই নানা রকম প্রস্তাব দিতে শুরু করেছিল ইমান। কথাবার্তায় শালীনতার সীমা ছাড়ি়য়ে যাচ্ছিল। উত্ত্যক্ত হয়ে এক দিন সে ইমানকে বেশ কড়া কথা শুনিয়ে দেয়। একাদশ শ্রেণির ছাত্রীটিও এক দিন বিরক্ত হয়ে গালিগালাজ করে ইমানকে। এতেই সে খেপে ওঠে।

দু’টি মেয়েই পুলিশকে জানিয়েছে, গাজনা হাইস্কুলের সামনে মোবাইলের দোকানি তার পরিচিত বলে ইমান তাদের জানিয়েছিল। ওই দোকানিকে হাঁসখালি ডেকে আগেই জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। তবে তাঁর কাছ থেকে তেমন কোনও সূত্র না মেলায় পরে ছেড়েও দেওয়া হয়। আক্রান্ত ছাত্রীর বলা একটি নাম ধরে আটক করা হয় আরও দু’জনকে। কিন্তু তাদের ছবি দেখে মেয়েটি চিনতে পারেনি। ফলে, তাদেরও ছেড়ে দেওয়া হয়।

এর পরেই অ্যাসিড বিক্রির সূত্র ধরে খোঁজখবর নিতে থাকে পুলিশ। জেলায় যে সব জায়গায় সালফিউরিক অ্যাসিড বিক্রি হয়, সে সব দোকানে খোঁজ নেওয়া হয়। পুলিশের দাবি, এক দোকানদার খবর দেন, কয়েক দিন এক যুবক তাঁর কাছ থেকে কিছুটা অ্যসিড কিনে নিয়ে গিয়েছে। চেহারার বর্ণনা ছাত্রীর কথার সঙ্গে অনেকটাই মিলে যায়। কথা প্রসঙ্গে দোকানিকে সে জানিয়েছিল, তার বাড়ি বগুলার কাছে ছোট চুপরিয়ায়। ওই এলাকায় খোঁজ নিয়ে শুক্রবার রাতেই যুবকের বাড়ির সন্ধান পায় পুলিশ। লোকটির বাড়ির লোকজন জানান, গত কয়েক দিন ধরে সে এক আত্মীয়ের বাড়িতে রয়েছে। বাড়িরই এক জনকে সঙ্গে নিয়ে মাঝরাতে সেখানে হানা দেয় পুলিশ। ইমান ধরা পড়ে যায়।

তবে এর পরেও পুলিশের কিছু ধন্দ রয়ে গিয়েছে। শুধু গালিগালাজ করার কারণেই কেউ অ্যাসিড ছুড়তে পারে কি না, সেই প্রশ্নটা পুলিশকে ভাবাচ্ছে। তাই ছাত্রীটির বান্ধবী ও ওই লোকটিকে দফায়-দফায় জেরা করা হচ্ছে। প্রয়োজনে দু’জনকে মুখোমুখি বসিয়ে জিজ্ঞাসাবাদও করা হবে বলে পুলিশকর্তারা জানিয়েছেন। ইমানকে কেন অবৈধ ভাবে অ্যাসিড বিক্রি করা হয়েছিল, তার সদুত্তরও মেলেনি।

অন্য বিষয়গুলি:

Acid attackers Police Victims
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE