Advertisement
২৩ ডিসেম্বর ২০২৪

সামিমের রক্তে সুস্থ হয়ে উঠলেন মমতা

দু’দিন ধরে হন্যে হয়েও ঘুরে রক্ত জোটেনি মমতা মণ্ডলের। তাঁর রক্তের গ্রুপ এবি নেগেটিভ। অবশেষে শনিবার দুপুরে এক পরিচিতের সাহায্য নিয়ে মিলল রক্ত।

 সামিম আকতার (বাঁ দিকে)। নিজস্ব চিত্র

সামিম আকতার (বাঁ দিকে)। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
শমসেরগঞ্জ শেষ আপডেট: ২১ জুলাই ২০১৯ ০১:০৫
Share: Save:

ওসমান রক্ত দেওয়ার পরে গত বুধবার সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে গিয়েছেন সুতির গাজিপুর গ্রামের ষাটোর্ধ্ব রামলাল সরকার। শনিবার জঙ্গিপুর হাসপাতালে প্রসূতি মমতা মণ্ডলকে বাঁচাতে ওসমানের মতোই এ বারে রক্ত দিতে এগিয়ে এলেন ধুলিয়ানের আর এক যুবক সামিম আকতার। স্ত্রী মমতার জীবনরক্ষায় সামিমের এই পদক্ষেপে উচ্ছ্বসিত দিনমজুর স্বামী উদয়চাঁদ মণ্ডল। তিনি বলছেন, “রক্তের জন্য পাগলের মতো ঘুরেছি। জনে জনে ধরে আর্জি জানিয়েছি। বিপদের সময় সামিমের এই সাহায্য তাই কখনও ভুলব না। ওর কাছে আমি সারাজীবন ঋণী হয়ে থাকলাম।’’

যা শুনে নিজের বাড়িতে বসে রামলালের প্রতিক্রিয়া, “ওসমান, সামিমের মতো ছেলেরা আছে বলেই সমাজটা এখনও টিকে আছে।”

দু’দিন ধরে হন্যে হয়েও ঘুরে রক্ত জোটেনি মমতা মণ্ডলের। তাঁর রক্তের গ্রুপ এবি নেগেটিভ। অবশেষে শনিবার দুপুরে এক পরিচিতের সাহায্য নিয়ে মিলল রক্ত। ধুলিয়ানের রতনপুরের বাসিন্দা সামিম আকতার জীবনের প্রথম রক্ত দিলেন এ দিন।

প্রসব যন্ত্রণা নিয়ে জঙ্গিপুর সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন মমতা। বিড়ি কারখানায় কাজ করেন মমতার বাবা প্রদীপ মণ্ডল। জামাই দিনমজুর। শুক্রবার ভর্তির সময়েই চিকিৎসক জানিয়ে দেন, রক্ত ছাড়া জীবন সংশয় হতে পারে প্রসূতির।

প্রদীপ বলছেন, “হাসপাতালে রক্ত নেই। দু’একটি সংস্থার সঙ্গে যোগাযোগ করেও ফল হয়নি। শেষ পর্যন্ত গ্রামেরই এক পরিচিতের কাছ থেকে খোঁজ মিলেছিল ধুলিয়ান ডাক বাংলোর এক সংস্থার। তাদেরই সদস্য সামিম আকতারের রক্তের গ্রুপ এবি নেগেটিভ। ওই সংস্থাই শনিবার দুপুরে সামিমকে নিয়ে হাজির হয় হাসপাতালে।”

বেলা ৩টের মধ্যেই রক্ত দিয়ে বাড়ি ফিরেছে সামিম। বিএ দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র সামিম সাত ভাইবোনের মধ্যে ছোট। তাঁরা বাবা নেই। মা বিড়ি শ্রমিক। জীবনে এই প্রথম রক্ত দিলেন তিনি। সামিম বলছেন, “বাড়িতেই ছিলাম। একটি সংস্থার সঙ্গে আমি যুক্ত রয়েছি। সংস্থার সভাপতি যখন ফোন করলেন তখন খেতে বসেছিলাম। দ্রুত খাওয়া সেরেই মোটরবাইকে করে বন্ধুর সঙ্গে সোজা হাসপাতালে যাই। জীবনের প্রথম রক্তদান যে এ ভাবে কাজে লাগবে, ভাবতেই পারিনি।”

হাসপাতালে রাতেই সেই রক্ত দেওয়া হয়েছে মমতা মণ্ডলকে। তাঁর মা সুন্দরী মণ্ডল বলছেন, “রক্তের খোঁজে বহরমপুর ও কান্দিতে গিয়েও ফিরে এসেছে জামাই। শুধু ভগবানকে ডেকেছি, যাতে ভালয় ভালয় রক্ত মেলে।”

সংস্থার সভাপতি উমর ফারুক বলছেন, ‘‘এই কারণেই তো ১৭৩ জন আগ্রহী যুবককে নিয়েই গড়ে তোলা হয়েছে সংস্থাটি। সাধ্য থাকলে আমরা কাউকে ফেরাই না।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Blood Donation Hindu Muslim
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy