নাবালিকার মৃত্যু ঘিরে শোরগোল। প্রতীকী ছবি।
নাবালিকা প্রেমিকাকে জন্মদিনের পার্টিতে ডেকে ধর্ষণের অভিযোগ উঠল তৃণমূল নেতার ছেলের বিরুদ্ধে। শুধু তাই নয়, অত্যধিক রক্তপাতে ওই নাবালিকার মৃত্যুও হয়েছে। এমনকি রাতারাতি ওই নাবালিকার দেহ জোর করে দাহ করানোর অভিযোগও উঠেছে ওই তৃণমূল নেতার ছেলের বিরুদ্ধে। গত সোমবার এই ঘটনা ঘটেছে নদিয়ার হাঁসখালি এক নম্বর ব্লকের গাজনা গ্রাম পঞ্চায়েতের শ্যামনগর এলাকায়। তা প্রকাশ্যে আসতেই শোরগোল পড়ে গিয়েছে।
অভিযোগ উঠছে, গাজনা গ্রাম পঞ্চায়েতের সদস্য সমর গয়ালির ছেলে ব্রজগোপালের বিরুদ্ধে। অভিযোগ, গত সোমবার ব্রজগোপালের জন্মদিনের পার্টি ছিল। সেখানে আমন্ত্রণ জানানো হয় বগুলার বাসিন্দা ওই নাবালিকাকে। নাবালিকার পরিবারের দাবি, ওই রাতে এক জন মহিলা এবং কয়েক জনকে দিয়ে মেয়েকে ব্রজগোপালদের বাড়িতে পাঠানো হয়েছিল। ১৪ বছরের ওই নাবালিকার বাড়ির লোকজনের দাবি, ব্রজগোপালের বাড়ির লোকেরা জানান, পার্টিতে মেয়েটি ‘অসুস্থ’ হয়ে পড়েছে। নাবালিকাকে স্থানীয় কোনও ‘হাতুড়ে ডাক্তার’-এর কাছে নিয়ে যাওয়ার পরামর্শও দেওয়া হয় বলে দাবি নাবালিকার পরিবারের। ওই নাবালিকাকে হাসপাতাল বা বেসরকারি কোনও হাসপাতালে নিয়ে যেতে তাঁদের ‘নিষেধ’ করা হয় বলেও অভিযোগ পরিবারের।
ওই নাবালিকাকে স্থানীয় এক হাতুড়ে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যান তার পরিবারের লোকজন। কিন্তু ওই নাবালিকাকে বাঁচানো যায়নি। সোমবার ভোর রাতে তার মৃত্যু হয়। অত্যধিক রক্তপাতে ওই নাবালিকার মৃত্যু হয় বলে পরিবারের দাবি। তার পরিবারের সদস্যদের আরও অভিযোগ, মঙ্গলবার মেয়ের মৃত্যুর পর জোর করে তার দেহ স্থানীয় শ্মশানে দাহ করিয়ে দেন ওই তৃণমূল নেতা এবং তাঁর দলবল।
নাবালিকার পরিবারের দাবি, মেয়ের মৃত্যুর পর থেকে তাঁরা আতঙ্কে ছিলেন। তবে চাইল্ড লাইনের কর্মীদের আশ্বাসে তাঁরা শেষ পর্যন্ত হাঁসখালি থানায় অভিযোগ দায়ের করেন। নাবালিকার পরিবারের অভিযোগ, তাকে গণধর্ষণ করা হয়েছে। তৃণমূল নেতার ছেলের জন্মদিনের ওই পার্টিতে চার-পাঁচ জন পুরুষ আমন্ত্রিত ছিলেন বলেও অভিযুক্তের পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে। আমন্ত্রিতদের মধ্যে এক প্রৌঢ়ও ছিলেন বলে তৃণমূল নেতার পরিবার সূত্রে খবর। পুলিশের দিকেও অভিযোগের আঙুল তুলেছেন নাবালিকার বাড়ির লোকজন। তাঁদের বক্তব্য, হাঁসখালি থানার ওসি মুকুন্দ চক্রবর্তী গণধর্ষণের অভিযোগ নিতে চাননি। স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশের মত, তৃণমূল নেতার ছেলের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক ছিল ওই নাবালিকার।
যাঁর ছেলের বিরুদ্ধে অভিযোগ, সেই তৃণমূল নেতা সমরের বক্তব্য, ‘‘মেয়েটির সঙ্গে আমার ছেলের সম্পর্ক ছিল বলে শুনেছি। তবে ওই দিন বাড়িতে কোনও পার্টির আয়োজন করা হয়নি। যদি ওরা পার্টির আয়োজন করে থাকে, তবে সেটা বন্ধুমহলেই। আমার তা জানা নেই।’’
এ প্রসঙ্গে তৃণমূলের রানাঘাট সাংগঠনিক জেলার সভাপতি রত্না ঘোষ কর বলেন, ‘‘আমরা পুলিশকে বলেছি তদন্ত করতে। তদন্তের পর গোটা ঘটনাটি জানা যাবে। অভিযুক্তরা জড়িত কি না তা স্পষ্ট হবে।’’ ওই ঘটনায় পুলিশকে দু’জনকে জিজ্ঞাসাবাদ করে।
অনেকেই এই ঘটনার সঙ্গে উত্তরপ্রদেশের হাথরস-কাণ্ডের তুলনা টানছেন। দুটি ঘটনাই ধর্ষণ এবং নির্যাতনের ফলে মৃত্যুর। দুটি ক্ষেত্রেই দেহ জ্বালিয়ে দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে। তবে হাথরসে নির্যাতিতার দেহ পরিবারের হাতে তুলে না দিয়ে জোর করে দাহ করে দিয়েছিল পুলিশ। এ ক্ষেত্রে অবশ্য নাবালিকার পরিবারই দেহ দাহ করেছে। যদিও অভিযোগ উঠেছে, নাবালিকার পরিবারকে মৃতদেহ দাহ করতে বাধ্য করেছিলেন অভিযুক্তেরা। হাথরস-কাণ্ডে জড়িয়ে ছিল জাতপাতের বিদ্বেষও। কিন্তু এ ক্ষেত্রে তেমন কিছু নেই। তবে পুলিশি নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগ রয়েছে দু’ক্ষেত্রেই। ঘটনার প্রতিবাদে সোমবার ১২ ঘণ্টার হাঁসখালি বন্ধের ডাক দিয়েছে বিজেপি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy