Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪

ওদেরকে ওদের মতো থাকতে দিন, নিদান পুলিশের

মাস ছয়েকের লাল-নীল সংসারের পরেও সেই সম্পর্কে ছেদ টানতে চাইছিলেন কেউ কেউ। কিন্তু রাখে পুলিশ, মারে কে! এ দিকে, মিঞা-বিবিও একে অন্যকে চোখে হারান।

সুষমা ও সন্ত্ু। সুতি থানায়। নিজস্ব চিত্র

সুষমা ও সন্ত্ু। সুতি থানায়। নিজস্ব চিত্র

বিমান হাজরা
সুতি শেষ আপডেট: ১৩ নভেম্বর ২০১৯ ০১:৪১
Share: Save:

প্রেম থেকে পরিণয়। কিন্তু তার পরেও ঝঞ্ঝাট পিছু ছাড়ছিল না।

মাস ছয়েকের লাল-নীল সংসারের পরেও সেই সম্পর্কে ছেদ টানতে চাইছিলেন কেউ কেউ। কিন্তু রাখে পুলিশ, মারে কে! এ দিকে, মিঞা-বিবিও একে অন্যকে চোখে হারান।

নিট ফল, ফের দু’জনের চার হাত এক করে দিল সুতি থানার পুলিশ। জয় হল প্রেমেরই। রবিবার রাতে সবাইকে মিষ্টিমুখ করিয়ে নিজের টোটোতে স্ত্রীকে নিয়ে বাড়ি ফিরলেন সন্তু সাহা।

সুষমা সিংহ ও সন্তু সাহা দু’জনেই সুতির বাসিন্দা। এক দেখাতেই প্রেম। তার পরে গড়ে ওঠে সম্পর্ক। সে কথা জানাজানি হতে তাঁদের মেলামেশায় বাদ সাধেন পরিবারের লোকজন। কিন্তু ভালবাসা আর কবে কাকে পরোয়া করছে! বাড়ি থেকে পালিয়ে ঘর বাঁধেন তাঁরা।

তার পরে সচরাচর যেমন হয়। দুই পরিবারই বিষয়টি ‘মেনে’ নিয়েছিলেন। স্ত্রী সুষমাকে নিয়ে নিজের বাড়ি ফিরেছিলেন সন্তু। সুষমাও বাবার বাড়ি যাতায়াত শুরু করেছিলেন। চাকরি না পেয়ে সন্তুও টোটো কেনেন।

সব ঠিকঠাকই চলছিল। তাল কাটল রবিবার সকালে। সুষমাকে নিয়ে তাঁর বাবা হাজির হলেন সটান সুতি থানায়। অভিযোগ শুনে পুলিশ থানায় ডেকে পাঠাল সন্তুকে। সুতি থানায় ঢুকেই জোর ধাক্কা খান সন্তু।

সুষমা ও তাঁর বাবা থানায় বসে!

ততক্ষণে সন্তুকে বসিয়ে শুরু হয়ে গিয়েছে পুলিশের জেরা। চেয়ারে মুখ নিচু করে বসে স্ত্রী সুষমা। টুঁ শব্দটিও নেই তাঁর মুখে। তার পরেই কান্নায় ভেঙে পড়েন সন্তু, ‘‘আমি সুষমাকে ভালবাসি স্যর। ওকে ছাড়া আমি বাঁচতেই পারব না। আমার বিরুদ্ধে ওর কোনও অভিযোগ থাকতেই পারে না! ওকে জিজ্ঞাসা করুন।”

অভিযোগ তো বহু দূরের কথা, সুষমাও কাঁদতে কাঁদতে বলেন, ‘‘আমিও তোমাকে খুব ভালবাসি। তোমাকে ছাড়া আমিও থাকতে পারব না। ”

স্থান, কাল ভুলে তখন একে অন্যকে জড়িয়ে ধরে কেঁদেই চলেছেন। থানার ওসি সন্দীপ সেন হতভম্ব। পরে অবশ্য তিনিও বুঝে গিয়েছেন, এই কাবাব কেসে হাড্ডি কে! সন্দীপ বলছেন, ‘‘এত দিন চাকরি করছি, মশাই। কিন্তু এমন নিষ্পাপ ভালবাসার আগে দেখিনি! তা ছাড়া সব দেখে আমিও বুঝি গিয়েছি, গন্ডগোল কোথায়!”

শেষ পর্যন্ত পুলিশের হস্তক্ষেপে জল অবশ্য বেশি দূর গড়ায়নি। চার হাত এক করে দেওয়ার পরে সন্তু জড়িয়ে ধরেন ওসিকে। সব অভিমান তখন গলে জল। তার পরেই ওসির নিদান, ‘‘ওদেরকে ওদের মতো থাকতে দিন। কেউ ওদের বিরক্ত করবেন না।’’ যা শুনে ঘাড় নেড়েছেন দু’পক্ষের পরিজনেরাও। এর পরে থানাতেই মিষ্টি আনানো হয়। হেমন্তের সাঁঝে শুধু সানাইটাই যা বাজেনি!

অন্য বিষয়গুলি:

Love story Couple Police station
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy