Advertisement
২৫ নভেম্বর ২০২৪

‘নবীন’ ধান চাষে এখন উত্‌সাহ বাড়ছে নদিয়ায়

ধান চাষ করেও ‘ভিআইপি’ হওয়া যায়! সামান্য কিছু জমিতে ‘নবীন’ ধানের চাষ করার পর এমনটাই মনে হয়েছিল শিকারপুরের নফরুদ্দিন শেখ কিংবা দেবগ্রামের সন্তোষ গুপ্তের। নদিয়ার ওই দুই চাষি এখন বলছেন, “এই ধানটা নতুন প্রজাতির।

জমিতে নবীন ধান।—ফাইল চিত্র।

জমিতে নবীন ধান।—ফাইল চিত্র।

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ০৩ সেপ্টেম্বর ২০১৪ ০১:১৭
Share: Save:

ধান চাষ করেও ‘ভিআইপি’ হওয়া যায়!

সামান্য কিছু জমিতে ‘নবীন’ ধানের চাষ করার পর এমনটাই মনে হয়েছিল শিকারপুরের নফরুদ্দিন শেখ কিংবা দেবগ্রামের সন্তোষ গুপ্তের। নদিয়ার ওই দুই চাষি এখন বলছেন, “এই ধানটা নতুন প্রজাতির। তাই একটু ভয়ে ভয়েই সামান্য জমিতে চাষ করেছিলাম। কিন্তু সেই ধান দেখতে রোজ দিন আশপাশের এলাকার লোকজন ভেঙে পড়ত খেতে। তারপর ধান ওঠার পর অন্ত শ’পাঁচেক চাষি ওই ধানের বীজ নিয়ে গিয়েছেন। এখনও বহু চাষি আমাদের কাছে চাষের পদ্ধতি জানার জন্য বাড়িতে ভিড় করছেন।”

কিন্তু নতুন এই ধানের এত চাহিদা কেন? করিমপুর উদ্যান ও কৃষি কল্যাণ সমিতির সম্পাদক বিশ্বনাথ বিশ্বাস জানান, গত বছর সেপ্টেম্বরের প্রথম দিকে নদিয়া থেকে দু’জন কৃষি আধিকারিক ও ১৮ জন কৃষককে পাঠানো হয়েছিল ওড়িশার সেন্ট্রাল রাইস রিসার্চ ইনস্টিটিউশনে। সেখানে ওই কুড়ি জনকে নবীন ধানের চাষের জন্য সাত দিন প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। বিশ্বনাথবাবু বলেন, “ওই প্রশিক্ষণে গিয়ে আমরা এই নতুন ধরনের ধানের কথা জানতে পারি। এটাও জানতে পারি যে ওই রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর নাম অনুসারেই ধানের এই বীজের নাম রাখা হয়েছে নবীন। কী ভাবে খুব কম খরচে, সহজে এই ধান চাষ করা যায় সে বিষয়ে ওখানকার কৃষি বিজ্ঞানীরা আমাদের প্রশিক্ষণ দিয়েছিলেন।”

এরপর বাড়ি ফিরে বিশ্বনাথবাবু সেই বীজ দিয়েছিলেন মুরুটিয়ার গান্ধিনা ফার্মার্স ক্লাবের মুখ্য সংযোগকারী চাষি নফরুদ্দিন শেখকে। সীমান্তের ওই চাষি বলছেন, “বিশ্বনাথদা কেজি দুয়েক ধানের বীজ এক বিঘা জমিতে লাগাতে বলেছিলেন। কিন্তু এমন ধান এর আগে চাষ করিনি। তাই ঝঁুকি না নিয়ে মাত্র আট কাঠা জমিতে চাষ করেছিলাম। কিন্তু এই ধানের যা ফলন হয়েছে তা এর আগে অন্য কোনও ধানে হয়নি।” ওই সামান্য জমিতেই ৫ কুইন্টাল ৬০ কিলোগ্রাম ধান হয়েছে। চাষে মোট খরচ হয়েছিল মাত্র দু’ হাজার টাকা। সেই টাকা বিচালি বিক্রি করেই উঠে গিয়েছে। হাসতে হাসতেই নফরুদ্দিন বলছেন, “ধান তো হল। কিন্তু সেই ধানের চাল করে ভাত খাওয়া আর হল কই! বীজ হিসাবে ধান দিতেই তো সব ফুরিয়ে গেল।”

প্রায় একই হারে ফলন পেয়েছেন দেবগ্রামের চাষি সন্তোষ গুপ্তও। তিনি দু’ কিলোগ্রাম ওই ধানের বীজ লাগিয়েছিলেন এক বিঘা জমিতে। তিনি প্রায় ১২ কুইন্টাল ধান ঘরে তুলতে পেরেছেন। সেই ধানের বীজও তিনি বহু লোককে দিয়েছেন। সন্তোষবাবুর কথায়, “কৃষি বিজ্ঞানীদের কথা মতো প্রথমে ধানের বীজকে রোদে শুকোতে দিয়ে ঠাণ্ডা করা হয়েছিল। তারপর বীজ শোধন করে চটের বস্তায় রেখেছিলাম। বীজতলায় ২১ দিন রাখার পর একটা করে চারা ৬ ইঞ্চি ব্যবধানে রোপণ করেছিলাম। ঠিক ১২০ দিনের মাথায় ধান ঘরে তুলেছি। রাসায়নিক সার ব্যবহার না করেই জৈব সারেই এমন ফলন হয়েছে।”

নদিয়ার জেলাশাসক পি বি সালিম বলেন, “নতুন ধরনের এই ধান চাষে উত্‌সাহিত করতে বেশ কিছু চাষিকে প্রশিক্ষণের জন্য ওড়িশায় পাঠানো হয়েছিল। রাজ্যে প্রথম এই জেলায় সেই চাষও শুরু হয়েছে।”

রাজ্যের কৃষি অধিকর্তা পরিতোষ ভট্টাচার্য বলেন, “কেন্দ্রীয় সরকারের অনুরোধে আমরা ওই ধানের বীজ পরীক্ষামূলক ভাবে ব্যবহার করেছিলাম। তবে সার্টিফায়েড বীজ না হলে চাষিদের দেওয়ার ক্ষেত্রে কিছু অসুবিধা আছে। কেমন চাষ হয়েছে তা দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

বিশ্বনাথবাবু বলছেন, “আউস, আমন ও বোরো এই তিনটি মরসুমেই এই ধানের চাষ করা যাবে। এখানকার চাষিরা প্রচলিত যে ধানের চাষ করেন তাতে এক বিঘা জমিতে সর্বাধিক ৮ কুইন্টাল ফলন হয়। অথচ নবীন ধানে বিঘা প্রতি সর্বাধিক ১৪ কুইন্টাল পর্যন্ত ফলন হবে। ইতিমধ্যে সেটা বুঝতেও পেরেছেন নফরুদ্দিন কিংবা সন্তোষবাবু। কৃষি দফতর ও জেলা প্রশাসন আরও উদ্যোগী হলে জেলার ধান চাষের চেহারাটাই বদলে যেতে পারে।”

তবে প্রশাসন কিংবা কৃষি দফতর কবে কী করবে সে ভরসায় বসে থাকতে রাজি নন এলাকার অন্যান্য চাষিরা। প্রশিক্ষণ থেকে ফিরে এসে যাঁরা এই ধানের চাষ করেছেন তাঁদের কাছ থেকেই চাষের পদ্ধতি জেনে চাষও শুরু করে দিয়েছেন চাষিরা। করিমপুর ১ ব্লকের প্রায় শ’তিনেক চাষি নফরুদ্দিনের কাছ থেকে বীজ নিয়ে নবীন ধানের চাষ করেছেন।

হোগলবেড়িয়ার হরেকৃষ্ণপুরের লক্ষ্মণ প্রামাণিক, তারাপুরের বিকাশ প্রামাণিক, নন্দলালপুরের নূরবক্স শেখরা সমস্বরে বলছেন, “নফরুদ্দিনের জমিতে গিয়েই বুঝতে পেরেছিলাম এ ধানের জাত আলাদা। মাসখানেক আগে আমরা বীজতলা থেকে চারা এনে জমিতে লাগিয়েছি। এই ধানের সব কিছুই অন্য ধানের থেকে আলাদা। আশা করছি নফরুদ্দিনের মতোই ফলন পাব।”

অন্য বিষয়গুলি:

nabin paddy nadia
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy