Advertisement
২৫ নভেম্বর ২০২৪

দর্জিকে দিতে হল নতুন বেনারসির দাম

ঢাকের দায়ে মনসা বিক্রির প্রবাদ তিনি ঢের শুনেছেন। কৌপিনের জন্য এক সাধুর গৃহী হওয়ার গল্পটাও তাঁর অজানা নয়। কিন্তু ব্লাউজ তৈরি করতে গিয়ে যে আস্ত বেনারসির দাম ‘জরিমানা’ হিসাবে দিতে হবে, তা অবশ্য ঘূণাক্ষরেও বুঝতে পারেননি রঘুনাথগঞ্জের আশাদুল শেখ (নাম পরিবর্তিত)। পেশায় দর্জি আশাদুল গত বিশ বছর ধরে সুনামের সঙ্গে পোশাক তৈরি করছেন। তারপরেও ব্লাউজ পিস কাটতে গিয়ে তিনি বেমালুম আঁচলটাই কেটে ফেলেছিলেন! আশাদুল বলছেন, “কী করে যে এমন ভুল হয়ে গেল, আমিও বুঝতে পারছি না।

বিমান হাজরা
রঘুনাথগঞ্জ শেষ আপডেট: ২৭ নভেম্বর ২০১৪ ০০:১১
Share: Save:

ঢাকের দায়ে মনসা বিক্রির প্রবাদ তিনি ঢের শুনেছেন। কৌপিনের জন্য এক সাধুর গৃহী হওয়ার গল্পটাও তাঁর অজানা নয়। কিন্তু ব্লাউজ তৈরি করতে গিয়ে যে আস্ত বেনারসির দাম ‘জরিমানা’ হিসাবে দিতে হবে, তা অবশ্য ঘূণাক্ষরেও বুঝতে পারেননি রঘুনাথগঞ্জের আশাদুল শেখ (নাম পরিবর্তিত)।

পেশায় দর্জি আশাদুল গত বিশ বছর ধরে সুনামের সঙ্গে পোশাক তৈরি করছেন। তারপরেও ব্লাউজ পিস কাটতে গিয়ে তিনি বেমালুম আঁচলটাই কেটে ফেলেছিলেন! আশাদুল বলছেন, “কী করে যে এমন ভুল হয়ে গেল, আমিও বুঝতে পারছি না। আর ধন্যি ওই মহিলাও! সোজা থানায় চলে গিয়েছিলেন। জরিমানার দিয়ে এ যাত্রা খুব বেঁচে গিয়েছি মশাই। না হলে এক আঁচল কাটার দায়ে হয়তো জেলের ঘানি টানতে হত।”

দিনকয়েক আগে মায়ের সঙ্গে বিয়ের বেনারসি কিনতে বেরিয়েছিলেন রঘুনাথগঞ্জের রেশমি পাল (নাম পরিবর্তিত)। এ দোকান, সে দোকান ঘুরে মেরুন রঙের জরির কাজ করা বেনারসিটা নজর কেড়েছিল মা-মেয়ে দু’জনের। সেই দিনই বাড়ি ফেরার পথে আশাদুলের দোকানে তাঁরা বেনারসিটা দিয়েছিলেন ব্লাউজ তৈরির জন্য। হাতের অন্য কাজ থামিয়ে কাঁচি দিয়ে শাড়ির একটা অংশ কেটে আশাদুল বেনারসিটা ফেরত দিয়েছিলেন রেশমির হাতে। হাসি মুখেই বলেছিলেন, “একদম চিন্তা করবেন না দিদি। দিন সাতেকের মধ্যেই ব্লাউজ দিয়ে দেব।”

কিন্তু নতুন বেনারসিটা ভাঁজ করতে গিয়ে মা-মেয়ের চক্ষু চড়কগাছ! শাড়ির আঁচল গেল কোথায়? শো-কেসের ভিতর থেকে বেনারসির কাটা অংশটা বের করে আশাদুলও ততক্ষণে বুঝতে পেরেছেন কী মারাত্মক ভুল হয়ে গিয়েছে। ব্লাউজ পিসটা কাটতে গিয়ে ওই দর্জি কেটে ফেলেছেন শাড়ির আঁচলটাই!

কিন্তু সে কথা মা-মেয়ে মানবেন কেন? রেশমি সাফ জানিয়ে দিয়েছিলেন, “বিয়ের বেনারসিতে আঁচল থাকবে না! এ শাড়ি আমি কিছুতেই নেব না।”

হইচই শুনে ততক্ষণে দোকানে ভিড় জমতে শুরু করেছে। তাঁরা কেউ দর্জি, কেউ ওই মহিলার পক্ষে সওয়াল শুরু করেন। এরপর আর দেরি করেননি রেশমি। মাকে সঙ্গে করে সোজা রঘুনাথগঞ্জ থানায় গিয়ে গোটা ঘটনা খুলে বলেন। সব শুনে পুলিশের এক আধিকারিক ওই তরুণীকে বুঝিয়ে বলেন যে, এটা নেহাতই ভুল। বিষয়টি নিজেদের মধ্যে মিটিয়ে নেওয়াই ভাল।

এক দিকে থানা-পুলিশ, অন্য দিকে দোকানের সুনাম নষ্ট হওয়ার ভয়ে আর কথা বাড়াননি আশাদুলও। বেনারসির দাম পাঁচ হাজার টাকা তিনি ওই তরুণীকে দিয়ে দেন। রেশমিও মেরুন রঙের বেনারসিটা আশাদুলের হাতে তুলে দিয়ে দোকান থেকে আর একটি নতুন বেনারসি কিনে নিয়েছেন। বলাই বাহুল্য, রেশমি ব্লাউজ তৈরির জন্য এ বার আর আশাদুলের দোকানে আসেননি। আশাদুল বলছেন, “দেড়শো টাকা মজুরির ব্লাউজ তৈরি করতে গিয়ে পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা দিতে হল! এমন ভুল জীবনে আর দ্বিতীয় বার হবে না।”

কিন্তু মেরুন বেনারসিটার কী হল? “এই বয়সে বেনারসি হাতে বাড়ি ঢুকতে দেখে বিবি তো প্রথমে খুব ঘাবড়ে গিয়েছিল। পরে সবটা খুলে বললাম। না, রাগ করেনি। ভুল তো সকলেরই হয়। মেরুন বেনারসিটা গায়ে জড়িয়ে বিবি সামনে দাঁড়াতেই সেই বিয়ের দিনটার কথা মনে পড়ে গেল। শত লোকসানের মধ্যে এটা কিন্তু কম প্রাপ্তি নয়, কী বলেন?” হাসতে হাসতে বললেন আশাদুল।

অন্য বিষয়গুলি:

benarashi raghunathganj biman hajra
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy