Advertisement
E-Paper

Nabanna: রাস্তার আয়ু বাড়াতে ম্যাস্টিক মোড়ক চাইছে নবান্ন

আমজনতার অভিজ্ঞতা হল, খানাখন্দহীন রাস্তারও উপরিভাগ এত এবড়োখেবড়ো যে, ঝাঁকুনিতে গাড়ির আরোহীকে হয়রান হতে হচ্ছে।

—ফাইল চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৬ ডিসেম্বর ২০২১ ০৭:১৪
Share
Save

চিরাচরিত বিটুমিন বা পিচ দিয়ে তৈরি রাস্তাই এখনও বঙ্গবাসীর মূল ভরসা। কিন্তু সেই উপাদানে রাস্তা তৈরির সময় যে-দূষণ ছড়ায়, তা নিয়ে প্রশ্ন জোরদার হচ্ছে। অমসৃণতার দরুন রাস্তার ‘রাইডিং কোয়ালিটি’ বা যান চলাচলের গুণমান নিয়েও প্রশ্ন আছে। সর্বোপরি আছে স্থায়িত্বের প্রশ্ন। এই অবস্থায় রাস্তা তৈরির বিকল্প উপকরণ হিসেবে চিরাচরিত বিটুমিনের (পিচ) বদলে ম্যাস্টিক অ্যাসফল্ট চাইছে পূর্ত দফতর। প্রশাসনিক কর্তারা জানান, পরীক্ষামূলক ভাবে কয়েকটি রাস্তায় প্রয়োগের পরে ধীরে ধীরে জেলার মূল রাস্তাগুলিকেও ম্যাস্টিক অ্যাসফল্টে মুড়ে দিতে পারে রাজ্য সরকার।

এই উদ্যোগের মূলেও আছে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কিছু পর্যবেক্ষণ ও প্রশ্ন। আমজনতার অভিজ্ঞতা হল, খানাখন্দহীন রাস্তারও উপরিভাগ এত এবড়োখেবড়ো যে, ঝাঁকুনিতে গাড়ির আরোহীকে হয়রান হতে হচ্ছে। আর রাস্তায় যদি ক্ষত থাকে, তা হলে তো কথাই নেই। অতীতে রাস্তার এমন ‘রাইডিং কোয়ালিটি’ নিয়ে একাধিক বার প্রশ্ন তুলেছিলেন মমতা। তার পর থেকেই টেকসই রাস্তা তৈরি এবং তার ‘রাইডিং কোয়ালিটি’ বাড়ানোর ভাবনাচিন্তা শুরু হয় প্রশাসনের অন্দরে।

সমস্যা দেখা দেয় তিনটি বিষয়কে ঘিরে। প্রথমত, অর্থ। সরকারের কোষাগারের অবস্থা বিশেষ সুবিধার নয়। দ্বিতীয়ত, রাস্তার স্থায়িত্ব। যা নিয়ে আমজনতার হাজারো অভিযোগ। তৃতীয়ত, পিচরাস্তার নির্মাণ পর্বে পরিবেশ আদালতের নজরদারি। মূলত এই ত্র্যহস্পর্শ এড়াতেই ম্যাস্টিক অ্যাসফল্টের রাস্তা চায় পূর্ত দফতর।

সাধারণ পিচরাস্তার মূল শত্রু জল। অনেক সময়েই ভারী যানবাহনের চাকায় পিচের আস্তরণ উবে গিয়ে রাস্তা বেআব্রু হয়ে পড়ে। সড়ক বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য, পিচের তুলনায় ম্যাস্টিক অ্যাসফল্ট অনেক বেশি সহনশীল। এক দিকে এই উপাদান জলের সঙ্গে লড়াই করে, তেমনই মজবুত বাঁধুনির কারণে ভারী গাড়িও তার তেমন ক্ষতি করতে পারে না। ফলে তুলনায় কিছুটা ব্যয়সাপেক্ষ হলেও স্থায়িত্ব এবং পরিবেশের কথা মাথায় রেখে ম্যাস্টিক অ্যাসফল্টের রাস্তা অনেক বেশি উপযোগী হবে বলে মনে করছে পূর্ত দফতর।

অনেক প্রশাসনিক পর্যবেক্ষক জানাচ্ছেন, রাজ্যের বর্তমান আর্থিক পরিস্থিতিতে রাস্তার স্থায়িত্বের দিকে বিশেষ ভাবে লক্ষ রাখতে হচ্ছে। সাধারণত, কোনও রাস্তা তৈরির পরে তিন বছর রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব নিতে হয় সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারকে। চতুর্থ বছরে রাস্তা ভাঙলে সারাইয়ের খরচ সরকারের। ফলে রাস্তার আয়ু বা স্থায়িত্ব বাড়লে আখেরে লাভ সরকারেরই। পিচের থেকে ম্যাস্টিক অ্যাসফল্টের খবচ বেশি। সে-ক্ষেত্রে রাস্তা তৈরির সময় বেশি টাকা ঢাললে দীর্ঘমেয়াদি লাভ হবে বলে মনে করছেন প্রশাসনের কর্তারা। এক কর্তা বলেন, ‘‘রক্ষণাবেক্ষণ নিয়ে পিচের রাস্তা সাধারণ ভাবে ৪-৫ বছর চলে। সেই জায়গায় ম্যাস্টিক অ্যাসফল্টের রাস্তা ১০-১৫ বছর বা তার বেশি সময় ধরে ঠিক থাকে। ম্যাস্টিকের রাস্তার উপরিভাগের গঠনগত চরিত্রের কারণে গাড়ি পিছলে গিয়ে দুর্ঘটনার আশঙ্কাও তুলনায় কম। আবার স্বাভাবিক একটা গতি নিয়ন্ত্রণও হয়ে থাকে এই রাস্তায়।’’

আধিকারিক মহল জানাচ্ছে, এশিয়া-ইউরোপের বহু দেশ এখন এই পদ্ধতিতেই রাস্তা তৈরি করছে। রয়েছে ম্যাস্টিক অ্যাসফল্টের আন্তর্জাতিক সংগঠনও। ভারতের বাণিজ্যিক রাজধানী মুম্বইয়ের বহু প্রধান রাস্তা এই উপকরণেই তৈরি হয়েছে। রাজ্য প্রশাসনের এক কর্তা বলেন, ‘‘মুম্বইয়ে প্রবল বৃষ্টি ও জল জমার সমস্যা দেশের মধ্যে সব চেয়ে বেশি। সেখানকার সড়ক পরিকাঠামো দেখেই বোঝা যায়, উপাদান কতটা মজবুত।’’

রেড রোড, স্ট্র্যান্ড রোড, দ্বিতীয় হুগলি সেতুর রাস্তা ম্যাস্টিক অ্যাসফল্টেই তৈরি। তবে তা তৈরিতে যন্ত্র বা প্রযুক্তির ব্যবহার হয়নি। এ বার যন্ত্রের সাহায্য নিয়ে ভিআইপি রোড-সহ কলকাতার বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ রাস্তা ম্যাস্টিক দিয়ে মুড়ে ফেলার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। জার্মানি থেকে সেই যন্ত্র আনা হচ্ছে। যা পরিবেশবান্ধব বলে প্রশাসনের দাবি। ময়দান এলাকার ৭৯০০ মিটার রাস্তাও ম্যাস্টিকে তৈরি করার প্রস্তাব রয়েছে। বিশেষজ্ঞ শিবির জানাচ্ছে, পরিবেশ আদালতের বিধি মেনে শহরের বাইরে হট-মিক্স প্লান্টে উপকরণ তৈরি করে যন্ত্রের সাহায্যে তা দিয়ে রাস্তা তৈরি হবে। সেই পরিকাঠামো তৈরি। ফলে শহরে কালো ধোঁয়ার মধ্যে রাস্তা তৈরি করতে হবে না। শহরের রাস্তাগুলির কাজ সফল হলে জেলাগুলির প্রধান সড়কেও এমন উপকরণ ব্যবহারের পরিকল্পনা রয়েছে সরকারের।

Nabanna Mastic Asphalt Road Renovation

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

{-- Slick slider script --}}