রাজকোষের দুরবস্থার ছায়া পড়তে চলেছে লক্ষ্মীর ভান্ডারের উপরে। ফাইল চিত্র।
হাজার হাজার ভুয়ো রেশন কার্ডের মতো ভুয়ো সুবিধাভোগীর প্রাদুর্ভাবে লক্ষ্মীর ভান্ডারের মতো কল্যাণ প্রকল্পেও দুর্নীতির ছায়াপাত ক্রমশ স্পষ্ট হচ্ছে। পুজো-অনুদান এক লাফে দশ হাজার টাকা বাড়িয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যে-সরকারি মঞ্চ থেকে উদ্যোক্তাদের মুখে চওড়া হাসি ফুটিয়েছিলেন, সেখানেই তাঁর অকপট ঘোষণা ছিল, রাজ্যের ভাঁড়ার কিন্তু শূন্য! প্রশাসনের খবর, রাজকোষের সেই দুরবস্থার ছায়া পড়তে চলেছে লক্ষ্মীর ভান্ডারের উপরে। তবে ভুয়ো প্রাপক শনাক্ত করে ওই প্রকল্পে শুরু হয়েছে দুর্নীতির প্রতিবিধানও।
নবান্ন সূত্রের খবর, ১.৬ কোটি পরিবার ইতিমধ্যেই লক্ষ্মীর ভান্ডারের সুবিধা পেতে শুরু করেছে। তবে ওই প্রকল্পের ব্যাপারে মুক্তকচ্ছ না-হয়ে এ বার রাশ টানার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। গত বছর চালু হওয়া ওই জনমুখী প্রকল্পের এক শীর্ষ কর্তা বলেন, ‘‘মহিলাদের স্বনির্ভর করার এই সামান্য টাকার প্রকল্পের উপরেও দুর্নীতির লম্বা ছায়া পড়েছে। সেই দুর্নীতি রুখতেই এ বার কড়া হচ্ছে রাজ্য সরকার।’’ বিরোধী শিবিরের আশঙ্কা, রাজ্য জুড়ে শিক্ষা কিংবা গরু পাচার দুর্নীতির সঙ্গে অচিরেই জায়গা করে নেবে লক্ষ্মীর ভান্ডারের দুর্নীতিও।
সরকারি সূত্রের বক্তব্য, লক্ষ্মীর ভান্ডার প্রকল্পে দুর্নীতির উৎস মূলত জাল শংসাপত্র। গত বছরের সেপ্টেম্বরে লক্ষ্মীর ভান্ডার প্রকল্পে গৃহিণীদের স্বাবলম্বী করতে মাসিক ১০০০ এবং ৫০০ টাকা অনুদান চালু করে সরকার। নিয়মানুযায়ী পরিবারে বয়োজ্যেষ্ঠ মহিলার ওই অনুদান পাওয়ার কথা। বরাদ্দের অঙ্ক তফসিলি জাতি-জনজাতি ও অন্যান্য অনগ্রসর জনজাতিভুক্ত মহিলাদের ক্ষেত্রে পরিবার-পিছু ১০০০ এবং ‘জেনারেল কাস্ট’ বা সাধারণ শ্রেণিভূক্ত পরিবারের মহিলার প্রাপ্য ৫০০ টাকা। অনুদানের শর্ত, প্রাপক মহিলার অন্য কোনও উপার্জনের সংস্থান থাকা চলবে না। অন্য কোনও সরকারি প্রকল্প থেকে সুবিধাভোগীরাও এই অনুদানের আওতায় আসবেন না।
অথচ সাম্প্রতিক এক সরকারি সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে, বিভিন্ন সরকারি প্রকল্পের সুবিধা পাওয়া সত্ত্বেও লক্ষ্মীর ভান্ডারের টাকা দিব্যি হাত পেতে নিচ্ছেন অনেকে। সেই তালিকায় এমনকি সরকারি চাকরিরত মহিলারাও আছেন। প্রশ্ন উঠছে, এই ধরনের মহিলার নাম লক্ষ্মীর ভান্ডারের তালিকাভুক্ত হল কী ভাবে? প্রকল্পের এক কর্তার জবাব, ‘‘দুর্নীতিটা এতটাই স্পষ্ট!’’ সাধারণ শ্রেণিভুক্ত অনেক মহিলা তফসিলি জাতি-জনজাতির জাল শংসাপত্র দেখিয়ে দ্বিগুণ টাকা আদায় করছেন বলে অভিযোগ।
এমনও অভিযোগ আসছে যে, ব্যক্তিগত অ্যাকাউন্ট না-দেখিয়ে অনেক মহিলা পরিবারের অন্য সদস্য বা অনেকের সঙ্গে থাকা অ্যাকাউন্ট দেখিয়েও লক্ষ্মীর ভান্ডারের সুবিধা ভোগ করছেন। প্রকল্পের দায়িত্বে থাকা এক কর্তা বলেন, ‘‘অনেক ক্ষেত্রে মহিলার পরিবারের কেউ নন, এমন কারও অ্যাকাউন্টে জয়েন্ট হোল্ডার বা যুগ্ম ভাবে নাম ঢুকিয়েও টাকা তোলা হচ্ছে। প্রশ্ন উঠছে, সংশ্লিষ্ট পঞ্চায়েত বা পুরসভা নথিপত্র খুঁটিয়ে না-দেখেই কি তাঁদের নাম নথিভুক্ত করেছিলেন? নাকি সব দেখেওতাঁরা চোখ বুজে ছিলেন! এই ধরনের যে-সব ফাঁকফোঁকর দিয়ে দুর্নীতির অনুপ্রবেশ, সেগুলো এখনই বন্ধ করা উচিত।’’
অসঙ্গতি যা চোখে পড়েছে, তা নিয়ে সতর্ক করা হয়েছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে। রাজ্যের বেশ কয়েকটি পঞ্চায়েত ও পুরসভা এলাকায় ইতিমধ্যেই এই ধরনের ভুয়ো সুবিধাভোগীদের চিহ্নিত করে তাঁদের নাম লক্ষ্মীর ভান্ডারের তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে বলেও খবর। বন্ধ হয়ে গিয়েছে তাঁদের অনুদান।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy