রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড় ও মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ফাইল চিত্র
সোমবার বিজয়া সম্মেলনীর আসরে যে সমীকরণ তৈরি হয়েছিল, ২৪ ঘণ্টার মধ্যে তা ১৮০ ডিগ্রি ঘুরে গেল। সাদরে পাশে বসিয়ে মুখ্যমন্ত্রী রাজ্যপালকে বলেছিলেন, ‘‘শিল্প সম্মেলনে দেশ-বিদেশের শিল্পপতি ও বিনিয়োগকারীদের রাজ্যে আমন্ত্রণ জানানো হয়। তাঁরা আসেন। আমি চাই, রাজ্যপাল হিসেবে আপনিও রাজ্যের এই উদ্যোগে সক্রিয় ভূমিকা নিন। আপনি বিদেশে যান। বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে কথা বলুন। আমিও একই উদ্দেশ্যে বিদেশ যাওয়ার চেষ্টা করব।’’ কিন্তু মঙ্গলবার বিকেলের মধ্যেই ফের শুরু হল নবান্ন-রাজভবনের মধ্যে টানাপড়েন। সোমবার রাজ্য সরকার আয়োজিত বিজয়া সম্মেলনীতে সস্ত্রীক উপস্থিত হন রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়। অভ্যাগতদের সঙ্গে সৌজন্য বিনিময়ের মধ্যেই মুখ্যসচিবকে একান্তে ডেকে নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী আগামী বছর বিশ্ববঙ্গ বাণিজ্য সম্মেলনের (বিজিবিএস) দিনক্ষণ স্থির করে নেন। তার পরেই তিনি রাজ্যপালের উদ্দেশে রাজ্যে শিল্প আনতে সাহায্য করার কথা বলেছিলেন। প্রত্যুত্তরে রাজ্যপালও মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্যকে স্বাগত জানিয়ে বলেন, ‘‘সাংবিধানিক প্রধান হিসেবে রাজ্যের সার্বিক উন্নতির জন্য যেখানে যা করার, তা আমি করব। পশ্চিমবঙ্গ অগ্রগতির পথে চলেছে। এ বিষয়ে মুখ্যমন্ত্রীর উদ্যম যথেষ্ট প্রশংসনীয়।’’
সকলে মনে করেছিলেন, নবান্ন-রাজভবন সঙ্ঘাত সহাবস্থানের দিকে চলেছে। কিন্তু মঙ্গলবার দুপুরে রাজ্যপালের করা টুইট সম্পূর্ণ পরিস্থিতিকে আগের অবস্থায় নিয়ে গেল। সরকারের পক্ষে সরাসরি কেউ কিছু কিছু না বললেও, অন্তরালে উষ্মা প্রকাশ করেছেন তাঁরা। এই ঘটনায় নবান্ন যে রাজভবনের ওপর বেজায় ক্ষুব্ধ, তাও স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে।
মঙ্গলবার দুপুরে টুইট করেন রাজ্যপাল। টুইটে মুখ্যমন্ত্রীর পাঁচ বছরের শিল্প সম্মেলনের উদ্যোগকেই প্রশ্নের মুখে ফেলেছেন তিনি। জোড়া টুইটে যেমন রাজ্যপাল মুখ্যমন্ত্রীর শিল্পোদ্যোগের সমালোচনা করেছেন, তেমনই ২০২০ সালের অগস্ট মাসে লেখা একটি চিঠিও টুইট করেছেন। সেই চিঠিতে তিনি মুখ্যমন্ত্রীর কাছে গত পাঁচ বছরের শিল্প সম্মেলনে আসা বিনিয়োগ প্রসঙ্গে জানতে চেয়েছিলেন। প্রথম টুইটে তিনি লেখেন, ‘মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে বিজিবিএস নিয়ে শ্বেতপত্র প্রকাশ করার আহ্বান জানাচ্ছি, যাতে সব ক্ষেত্রেই তথ্য ও স্বচ্ছতা বজায় রেখে জবাবদিহি করা যায়। এই আমাদের বাধ্যবাধতা, তাই সত্য ও পবিত্রতা যেন আমরা বজায় রাখি, কেবলমাত্র বিজ্ঞাপন ও বিবৃতি দিয়েই নিজের কাজ জাহির না করি।’ দ্বিতীয় টুইটে তিনি আরও লেখেন, ‘ এক বছর আগেই বিজিবিএস-এর পাঁচটি সম্মেলনের তথ্য চেয়েও পাওয়া যায়নি। জমিতে আসলে কেমন ফসল হয়েছে, তাতেই জমির পরিচয়। আইনের শাসন, মানবাধিকার এবং গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের প্রতি শ্রদ্ধাই বিনিয়োগের জন্য অপরিহার্য। এই বিষয়গুলির জন্য অনেক কিছু করা দরকার।’
রাজ্যপালের এমন টুইটের পর মুখ্যমন্ত্রীও ঘনিষ্ঠ মহলে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। সরকার পক্ষের কথায়, রাজ্যপাল নিজের কাজ নিয়ে থাকুন। তিনি কেন বার বার রাজ্য সরকারের কাজে হস্তক্ষেপ করছেন? রাজ্যে কত বিনিয়োগ এল, তার হিসেব নেওয়া ওঁর কাজ নয়। আর মুখ্যমন্ত্রী তাঁকে বিনিয়োগ আনতে সহায়তা করতে বলেছেন। রাজ্যের বদনাম করতে নয়। প্রসঙ্গত, রাজ্যপাল মুখ্যমন্ত্রীর উদ্যোগে আয়োজিত শিল্প সম্মেলনের বিনিয়োগ নিয়েও যেমন প্রশ্ন তুলে দিয়েছেন, তেমনই রাজ্যে যে বিনিয়োগের পরিবেশ নেই, তাও উল্লেখ করেছেন। এ ভাবে রাজ্যের ‘ভাবমূর্তি নষ্ট করা’র টুইটে ক্ষুব্ধ রাজ্য প্রশাসন। কিন্তু সোমবার রাতের সহাবস্থানের চিত্রের পর কেন এমন টুইট? প্রশ্ন উঠছে প্রশাসনেও।
বিধানসভার একটি সূত্র জানাচ্ছে, অধিবেশনে মুখ্যমন্ত্রী নিজের বক্তৃতায় স্পিকার ও ডেপুটি স্পিকারের মধ্যে বিভেদ তৈরি করতে চাওয়ার কথা বলেছেন। তার নিশানা যে রাজ্যপালের দিকেই ছিল, তা বুঝতে অসুবিধে হয়নি কারও। কারণ, সোমবার সন্ধ্যা পর্যন্ত নতুন চার বিধায়ককে শপথগ্রহণের দায়িত্ব নিজের ক্ষমতাবলে রাজ্যপাল দিয়েছিলেন ডেপুটি স্পিকারকেই। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রীর হস্তক্ষেপেই রাতে সিদ্ধান্ত বদল করে রাজ্যপাল সেই দায়িত্ব ফিরিয়ে দেন স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়কে। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রীর তাঁকে উদ্দেশ্য করে স্পিকার-ডেপুটি স্পিকারের মধ্যে বিভেদ তৈরির অভিযোগের পাল্টা হিসেবে, টুইট করে বিজিবিএস-কেই কি প্রশ্নের মুখে ফেলে সঙ্ঘাত জারি রাখলেন ধনখড়?
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy