‘তালমার রোমিও জুলিয়েট’ ওয়েব সিরিজ়ে জুলিয়েট, অর্থাৎ জাহানারার চরিত্রে অভিনয় করেছেন হিয়া রায়। গ্রাফিক: আনন্দবাজার অনলাইন।
মফস্সল থেকে কলকাতায় স্বপ্ন নিয়ে এসেছিলেন সাবালক হওয়ার আগেই। ইচ্ছে ছিল অভিনেত্রী হওয়ার। কিন্তু মাত্র ১৯ বছরেই এমন সব অভিজ্ঞতা হল যে থমকে যেতে বাধ্য হলেন নিজেই। কিন্তু থেমে গেলে চলবে কী করে! তাই একটা বিরতি নিয়ে ফের নতুন করে চেষ্টা করতে শুরু করলেন। তার পরই অনির্বাণ ভট্টাচার্যের ‘বল্লভপুরের রূপকথা’ ছবিতে সুযোগ পেলেন। কিন্তু সে তো কয়েক সেকেন্ড মাত্র। তাতেই কেল্লাফতে! একেবারে নায়িকার চরিত্র উঠে এল হাতে। ‘তালমার রোমিও জুলিয়েট’ সিরিজ়ে জাহানারার চরিত্র। নায়িকা হিসাবে প্রথম কাজ, তাতেই পর্দায় সাহসিনী। চুম্বন থেকে অন্তরঙ্গ দৃশ্যে কোনও ছুতমার্গ রাখেননি হিয়া রায়। আনন্দবাজার অনলাইনের প্রশ্নের সামনে অভিনেত্রী।
প্রশ্ন: ‘তালমার রোমিও জুলিয়েট’ মুক্তির পর কতটা বদল হল জীবনে?
হিয়া: অনেকটাই বদলেছে জীবন। এক সময়ে ভাবতাম এসভিএফ কিংবা হইচইয়ের সমাজমাধ্যমের পাতায় কবে আমি নিজেকে দেখতে পাব! এখন সিরিজ়ের পোস্টারে নিজেকে দেখতে পাচ্ছি। ভাল লাগছে। লোকজন রাস্তায় চিনতে পেরে এগিয়ে আসছেন। বাবা-মাকে লোকজন জিজ্ঞেস করছে। তাঁরা গর্ব অনুভব করছেন।
প্রশ্ন: শুরুর দিনের গল্পটা ঠিক কেমন ছিল?
হিয়া: আমি মধ্যমগ্রামের মেয়ে। স্কুলের পড়াশোনা সেখানেই। দশম শ্রেণিতে পড়ার সময়ই সাধারণ ক্যামেরায় ছবি তুলে ইনস্টাগ্রামে পোস্ট করতাম। সেখান থেকে বেশ কিছু চিত্রগ্রাহকের আমার ছবি পছন্দ হয়। তখন কিন্তু টাকাপয়সা তেমন উপার্জন হত না। উচ্চ মাধ্যমিকের পর মডেলিং শুরু করি। কলেজ শেষ হল ২০২২ সালে। তার পর থেকে অভিনয়ের জন্য অডিশন দিতে শুরু করলাম।
প্রশ্ন: তা হলে কি মডেলিং করে উপার্জন করা সহজ নয় বলেই অভিনেত্রী হওয়া, না কি প্রথম থেকেই অভিনেত্রী হওয়ার ইচ্ছে ছিল?
হিয়া: সেই স্কুলে পড়ার সময় থেকে অভিনেত্রী হওয়ার ইচ্ছে আমার। কিন্তু চাইলেই তো অভিনেত্রী হওয়া যায় না। আমার পরিবারের কেউ এই জগতের সঙ্গে যুক্ত নয়, তাই কোন রাস্তায় যে যাব সেটা পরিষ্কার করে বুঝতে পারছিলাম না। গোটাটাই ধোঁয়াশা ছিল আমার কাছে। কিন্তু মডেলিংয়ের প্রস্তাবটা পেতেই আর সাত-পাঁচ ভাবিনি। শুরু করে দিয়েছিলাম কাজ। সেখান থেকে প্রস্তাব আসতে শুরু করে।
প্রশ্ন: খুব বেশি দিন তা হলে হয়নি নায়িকা হওয়ার চেষ্টা করছেন! কেউ কি সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছিলেন?
হিয়া: ছোটবেলা থেকে চাকুরিজীবী পরিবারে বড় হয়ে ওঠা। বাবা আয়কর দফতরের আধিকারিক। তাই সেই ভাবে কারও সাহায্য পাইনি। যা করছি নিজের চেষ্টায়। এমনকি বাবার আপত্তিও ছিল। প্রথম দিকে মোটেও চাইতেন না এই পেশায় আসি। চাইতেন সরকারি চাকরি করি। প্রস্তুতির জন্য বিশেষ ক্লাসেও গিয়েছিলাম। এক মাস করেই চলে আসি, মন বসাতে পারিনি।
প্রশ্ন: ‘তালমার রোমিও জুলিয়েট’-এর প্রস্তাবটা পেলেন কী ভাবে?
হিয়া: আমি ‘জাতিস্মর’ সিরিজ়ে একটা পার্শ্বচরিত্রে অভিনয় করেছিলাম। এ ছাড়াও এসভিএফের একটা ধারাবাহিক সদ্য শুরু করেছিলাম। তখন অডিশনের ডাক আসে। অনির্বাণদা ও অর্পণদার প্রথমে বারই ভাল লেগে যায়। আমাকে জাহানারার চরিত্রে বেছে নেন।
প্রশ্ন: তা হলে সে ভাবে অভিনয় শেখা হয়নি বলা যায়! সিরিজ়টা করার সময় অনির্বাণ ভট্টাচার্যের থেকে কী শিখলেন?
হিয়া: হ্যাঁ ঠিক। আমি থিয়েটার করিনি, অভিনয়ের কোনও প্রথাগত শিক্ষা নেই। তাই সিরিজ়টা শুরু হওয়ার আগে প্রায় চার থেকে পাঁচ মাস কর্মশালায় যোগ দিয়েছিলাম। তখনই অনির্বাণদা হাতে ধরে সবটা শিখিয়েছেন। চরিত্রটা কেমন, সে সব কিছু বুঝতে সাহায্য করছেন। অর্পণদা (পরিচালক) অনেক সাহায্য করেছেন। আর শুটিং চলাকালীনও অনির্বাণদার কথা শুনে চলেছি।
প্রশ্ন: প্রথম কাজ, সেখানেই বেশ অনেকগুলো চুম্বনের দৃশ্য, অন্তরঙ্গ মুহূর্ত ছিল, বাবা-মা দেখছে?
হিয়া: (মৃদু হেসে) আসলে তাঁরা দেখছেন আমি পরিচিতি পাচ্ছি। লোকে আমাকে চিনছে। তাই আগে যে চিন্তাভাবনা ছিল তাঁদের সেগুলো পরিবর্তন হচ্ছে।
প্রশ্ন: নায়িকারা সাধারণ নিজের ভাবমূর্তি নিয়ে সচেতন থাকেন, বাংলা সিরিজ়ে বা সিনেমায় নায়িকাদের সচরাচর খোলামেলা দৃশ্যে খুব একটা দেখা যায় না, আপনি তা হলে একটু বেশিই সাহসী?
হিয়া: আমাদের সিরিজ়ে ভালবাসার উদ্যাপনটাই দেখানো হয়েছে। এর মধ্যে অশ্লীলতা ছিল না। তাই চরিত্রের প্রয়োজনে আমরা তেমন দৃশ্যে অভিনয় করেছি। তবে সব কিছুরই একটা সীমা থাকে। আমার পরিচালক কখনও সেই সীমা অতিক্রম করতে বলেননি বলেই এত সহজে করতে পেরেছি।
প্রশ্ন: সিরিজ়ে একটা আবেগঘন মুহূর্তে নায়কের সঙ্গে আপনাকে দেখা যায় অন্তর্বাস পরিহিতা অবস্থায়। কোনও পূর্বপ্রস্তুতির প্রয়োজন ছিল?
হিয়া: বেশ কয়েক মাসে ধরেই কর্মশালা চলেছে। তখনই দৃশ্যটা বোঝানো হয়েছিল আমাদের। কী ভাবে শুট করা হবে সেটা বোঝানো হয়। খুব টেকনিক্যালি শুটটা করা হয়। সেই কারণে মানসিক ভাবে প্রস্তুত ছিলাম। আর আমার যে নায়ক সে-ও মধ্যমগ্রামের ছেলে। ওর সঙ্গে ভাল বন্ধুত্ব হয়ে গিয়েছিল। আমাদের দেখা-সাক্ষাৎ হত, আড্ডা হত। তাই ওই ইতস্তত বোধটা ছিল না।
প্রশ্ন: আপনি কি নিজেকে ‘বোল্ড’ অভিনেত্রী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে চান?
হিয়া: (খানিক ভেবে) আসলে ‘বোল্ড’ কথাটা অর্থ তো সাহসী। আর আমি নিজেকে সাহসী বলেই মনে করি। জাহানারা চরিত্রটা যেমন, আমি সে ভাবেই নিজেকে পর্দায় তুলে ধরেছি।
প্রশ্ন: খুব অল্প বয়সে কাজ শুরু করেছেন। ইন্ডাস্ট্রিতে সব অভিজ্ঞতাই কি খুব মধুর?
হিয়া: না একদম নয়, ফুলের পাপড়ি দিয়ে সাজানো রাস্তা পেয়েছি তেমনটা নয়। ২০১৯ সাল থেকে একটু একটু করে কাজ করছি। অডিশন দিতে আসতাম কলকাতায়, কখনও একা, কখনও মাকে নিয়ে আসতাম। আর টলিপাড়ায় এত ব্যাঙের ছাতার মতো প্রযোজনা সংস্থা আছে যা নবাগতদের বিভ্রান্ত করে। যাঁদের কিছু করার নেই, তাঁরা তো বিশ্বাস করেন। এ সব জায়গা থেকে অনেক কুপ্রস্তাব পেয়েছি। আমাকে শুনতে হয়েছে, ‘‘মা-বাবাকে সঙ্গে নিয়ে ঘুরলে কাজ পাবে না। সবইকে আপস করতে হয়।’’ এমনও শুনেছি, ‘‘যত বড় অভিনেত্রী আছে সবাই এ ভাবেই বড় হয়েছে।’’ আমি তখন খুব ভেঙে পড়েছিলাম। কেউ আমার প্রতিভা দেখতে চাইছে না, বলছে ‘ওইটা’ করতে পারব কি না!
প্রশ্ন: তার পর ফের নতুন করে শুরু করলে কবে থেকে?
হিয়া: মাঝে বছরখানেকের বেশি সময় ভেবেছিলাম সরিয়ে নেব নিজেকে। থমকে গিয়েছিলাম। কিন্তু হার মানিনি। তাই ২০১৯ থেকে শুরু করলেও প্রথম ব্রেকটা পেতে ২০২৪, প্রায় পাঁচ বছর লেগে গেল।
প্রশ্ন: টলিপাড়ায় তা হলে নরমসরম নায়িকা নয়, বরং ডাকাবুকো হওয়া প্রয়োজন?
হিয়া: ডাকাবুকো কি না জানি না। তবে এতটা চতুর হতে হবে যে, কে কী ভাবে কোনও প্রস্তাব নিয়ে আসছে, সে বিষয়ে স্বচ্ছ ধারণা থাকতে হবে। পরিস্থিতি বুদ্ধি দিয়ে সামাল দিতে হবে। কিন্তু আমি খুব নরম গোছের মানুষ।
প্রশ্ন: নবাগতা আপনি। এই সিরিজ়ে সৃজনশীল পরিচালক অনির্বাণ ভট্টাচার্য কী কী জিনিস ভবিষ্যতে আর না করতে বলেছেন?
হিয়া: অনির্বাণদা প্রথম সিরিজ়ে কাজের নিরিখে প্রশংসা করেছেন যেমন, তেমনই বলে দিয়েছেন ট্রোলে কান না দিতে । লোকে খারাপ কিছু বললে সেটা মনে নিতে নিষেধ করেছেন।
প্রশ্ন: অনির্বাণের থেকে কোনও টিপ্স পেলেন?
হিয়া: গুরুজনের মতো আগলে রাখেন। একটা কথা আমাকে বলেছেন, ‘‘পরিশ্রম করে যেতে হবে, সাফল্য আসবেই।’’
প্রশ্ন: প্রথম সিরিজ়ে কাজ করলেন। সমাজমাধ্যমে তো এখনই ২ লাখের বেশি অনুসরণকারী?
হিয়া: এই সিরিজ়ে কাজ করার আগে থেকেই আমার প্রায় দেড় লক্ষের বেশি অনুসরণকারী ছিল। এখন আর একটু বেড়েছে। যদিও একটা সময় সমাজমাধ্যমে খুব বেশি সক্রিয় ছিলাম। এখন আবার বেশি বেশি করে সক্রিয় থাকার চেষ্টা করছি।
প্রশ্ন: নতুন প্রজন্মের অভিনেত্রী, আপনার লক্ষ্য টলিউড, না কি পাখির চোখ বলিউড?
হিয়া: টলিউড আমার নিজের জায়গা। বংলা ভাষায় কাজ করি আমি। কিন্তু লক্ষ্য সব সময় বড় রাখাই উচিত। স্বপ্ন সব সময় বড় দেখাই উচিত।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy