মিলমিশ: প্রতিমার সামনে সূর্য ঘোষ (বাঁ দিকে) ও আহসানুর রহমান। ভগবানগোলায়। —নিজস্ব চিত্র।
এখানে ধর্মের নিগড় নেই। পুজোটা হিন্দু-মুসলমানের।
পুজো মানে বিশ্বাস, পুজো মানে পরব। অন্তত এমনটাই বুঝেছেন ওঁরা। মুর্শিদাবাদের ভগবানগোলা থানাপাড়া এলাকার কালীপুজোয় তাই নেতৃত্ব দেন আফরোজ সরকার, গোলাম রসুল, আহসানুর রহমানেরা।
দেশ জোড়া ভুল বোঝাবুঝির এই গোলমেলে সময়েও ওঁদের ভাবনায় কোনও গোলমাল নেই। নরনারায়ণ সেবায় মুসলমানের এঁটো পাতা তুলে আনে বামুনের ছেলে, হিন্দুর ফেলে যাওয়া প্রসাদের পাতা ফেলে আসে মুসলমানের পো।
ভগবানগোলার গোবরা মোড়ে এই পুজোর সভাপতি অনন্তলাল পোদ্দার, সম্পাদক আফরোজ সরকার, সহ-সভাপতি তারিফ মহলদার ও সালাম মণ্ডল। সমস্ত অনুষ্ঠানের মূল দায়িত্বে আহসানুর রহমান।
বহরমপুর লালগোলা রাজ্য সড়কে গোবরা মোড়। পাশেই গোবরা গ্রাম ও বাঁধপুর এলাকা। গ্রাম থেকে দু’টো রাস্তা হাইরোডে উঠছে। বাস, ট্রাক, ট্রাক্টর, ট্রেকার, ভ্যান চলছে সারাটা দিন। কয়েক কিলোমিটার এগোলেই বাংলাদেশ সীমান্ত।
বছর তিনেক আগে ওই মোড়ে পরপর কয়েকটি দুর্ঘটনা ঘটেছিল। এ সব ক্ষেত্রে সাধারণত যা হয়, লোকে ধরে নেয় পুজো-পাঠ-প্রার্থনা করলে তবেই দুর্যোগ কাটবে, এখানেও তার ব্যত্যয় হয়নি। ‘কুনজর’ কাটাতে এলাকার মুসলিমেরা বিশেষ প্রার্থনা বা ‘মিলাদ’-এর আয়োজন করেন। হিন্দুরা করেন রক্ষাকালী পুজো।
ভগবানগোলা থানার তদানীন্তন ওসি সমিত তালুকদারের (বর্তমানে বেলডাঙা থানায় কর্মরত) কথায়, ‘‘এর পরেই দুর্ঘটনা কমে যায় বলে এলাকার অনেকে বিশ্বাস করেন। ওই ২০১৪ সালের অক্টোবরেই গোলাম রসুল-আফরোজ সরকারদের নেতৃত্বে থানার পাড়ায় কালীপুজো শুরু হয়।’’
গোলাম রসুল বলেন, ‘‘চাঁদা তোলা থেকে প্রসাদ বিতরণ— পুজোর প্রতিটি কাজই দুই সম্প্রদায়ের মানুষ মিলেমিশে করেন।’’ হাসতে-হাসতে আফরোজ বলেন, ‘‘আগামী ২৩ অক্টোবর আমাদের নরনারায়ণ সেবা। দশ-বারো হাজার মানুষ পাত পেড়ে খাবেন। সে দিন দেখে বুঝতেই পারবেন না, হিন্দু-মুসলমানে কোনও ভেদাভেদ আছে।’’
‘আলির উপর কালী, না কালীর উপর আলি’— এই তরজা যে কত অসার তা তো কত আগেই বুঝেছিল বাঙালি। সংকীর্ণ স্বার্থে যে যতই ভুল বোঝাক, প্রয়োজনে এককাট্টা হওয়ার মতো মিলমিশ যে রক্তেই রয়েছে, তা ফের মনে করিয়ে দিল ভগবানগোলা
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy