শেষ যাত্রা: বন্ধুর দেহ কাঁধে নিয়ে শাহিদ খান (বাঁ দিকে)। নিজস্ব চিত্র
বিদায়গড় শ্মশানে তখন বিদায় দেওয়ার পালা। চিতা সাজানো শেষ। দেহ প্রদক্ষিণও সারা। শুক্রবার রাজস্থানের বাসিন্দা সুরেন্দ্র ভগত আগরওয়ালের মুখাগ্নি করার আগে বন্ধু পশ্চিম বর্ধমানের নিয়ামতপুরের শাহিদ খান বলে উঠলেন, ‘‘বাঁচাতে পারলাম না ওকে!’’ বন্ধুত্বের সেই টান দেখে অনেকের চোখই তখন ভেজা।
বন্ধুত্বের শুরু ১৯৯৪-এ। সুরেন্দ্র তখন বছর ৩৫-এর। শাহিদ বছর ৩২। দু’জনেই দেশের দু’প্রান্ত থেকে পাড়ি দিয়েছেন মুম্বইয়ে, রোজগারের আশায়। মুম্বইয়ের কাশ্মীরা রোডে ভাতের হোটেল দেন শাহিদ। পাশেই ভাড়াবাড়িতে থাকতেন প্রযুক্তিকর্মী সুরেন্দ্র। আরব সাগরের তীরের আড্ডা, পাওভাজি ভাগ করে খাওয়া— জমে ওঠে বন্ধুত্ব। গড়িয়ে যায় বছরও।
শাহিদ জানান, বছর তিনেক আগে অসুস্থ হন সুরেন্দ্র ‘ভাইয়া’। ফিরে যান রাজস্থানের অজমেরে নিজের বাড়িতে। অকৃতদার সুরেন্দ্রের সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ রাখতেন তিনি। ন’মাস আগে হঠাৎ এক দিন সুরেন্দ্র বলেন, ‘এক বার আয়। খুব অসুস্থ আমি।’ রাজস্থানে গিয়ে শাহিদ ডাক্তার দেখান সুরেন্দ্রকে। ডাক্তারেরা জানান, মুখে ক্যানসার। আয়ু বেশি নয়।
শেষ ক’টা দিন বন্ধুকে কাছছাড়া করেননি শাহিদ। তিনি বলেন, ‘‘ভাইয়ার কেউ ছিল না। বাবা, মা, ভাই-বোন, কেউ না। তাই ক’টা দিন আমার সঙ্গেই থাক, এই ভেবে বাড়িতে আনি ওকে।’’ বন্ধুর জন্য বাড়ির দোতলায় পাকা ঘর তোলেন শাহিদ। সুরেন্দ্র যা খেতে ভালবাসেন, এই ক’মাসে সেই সব ‘মশলাদার’ রান্নাই করেছেন শাহিদের স্ত্রী রেশমা। বলেন, ‘‘উনি আমাদের ঘরের লোক। কী ভাল আড্ডা দিতেন!’’
কিন্তু কর্কট-যন্ত্রণা চরমে ওঠে বৃহস্পতিবার রাতে। শাহিদ বলেন, ‘‘ডাক্তার এসে বলে গেলেন, আর কিছু ক্ষণ।’’ শুক্রবার দুপুরে মারা যান সুরেন্দ্র। শাহিদের বাড়িতে তখন কান্নার রোল। যাবতীয় খরচ দিয়ে ফুলের মালা, কাপড় কিনে সুরেন্দ্রকে ‘সাজিয়ে’ দেন শাহিদ। তার পরে বন্ধুকে কাঁধে তুলে রওনা দেন ভুড়ভুড়িয়া নদীর তীরে শ্মশানের দিকে। আসেন পুরোহিত। সাহায্য করেন পড়শি করিম, ফয়জ়ল, রাজেশ, দীপকেরা।
‘ভাইয়া’র স্মৃতিতে এ দিন সব রান্না করা খাবার ফেলে দেওয়া হয়েছে শাহিদের বাড়িতে। পাতে শুধুই ফল। আগামী ক’দিন নিরামিষ খাবেন এমনটাই ঠিক করেছেন। তার পরে ইচ্ছে, শ্রাদ্ধ উপলক্ষে ক’জনকে ডেকে খাওয়ানোর। কিন্তু এত কিছু কেন? ঢোলা শার্টের হাতা ভেজে চোখের জলে। শাহিদ বলেন, ‘‘এত দিনের সম্পর্ক। এটুকু করতেই হত।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy