Advertisement
০৮ জানুয়ারি ২০২৫
Bangla Awas Yojana

আবাসের অর্থ বেহাত হ‌ওয়া রুখতে সতর্ক নবান্ন, টাকা পাঠানোর আগে ফের যাচাইয়ের সিদ্ধান্ত

১৭ ডিসেম্বর থেকে উপভোক্তাদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে সরাসরি আবাসের টাকা পাঠানোর কাজ শুরু করেছে রাজ্য সরকার। এই দফায় আবাসের মূল উপভোক্তা রয়েছেন ১১ লক্ষ।

গ্রাফিক: আনন্দবাজার অনলাইন।

চন্দ্রপ্রভ ভট্টাচার্য
শেষ আপডেট: ০৭ জানুয়ারি ২০২৫ ০৭:০৩
Share: Save:

আবাস প্রকল্পে অর্থ বরাদ্দ করলেও, উপভোক্তার অ্যাকাউন্টে তা পাঠানোর আগে ফের যাচাইয়ের সিদ্ধান্ত নিল রাজ্য সরকার। প্রশাসনিক সূত্রের দাবি, এই কারণেই সকলকে একবারে টাকা পাঠানো হচ্ছে না। বরং তা যাচ্ছে দফায় দফায়। এ ছাড়া যাচাইয়ের পরেও ‘অযোগ্য’ কারও হাতে টাকা কোনও ভাবে পৌঁছে গেলে, সঙ্গে সঙ্গে তা ফেরানোর নির্দেশও মৌখিক ভাবে জেলা-কর্তাদের দেওয়া হয়েছে। বিশ্লেষকদের একাংশের বক্তব্য, অতীতে আবাসের বরাদ্দ বেহাত হওয়া নিয়ে প্রবল বিতর্ক তৈরি হয়েছিল। কেন্দ্রের বরাদ্দ বন্ধের নেপথ্যে এটা অন্যতম একটি কারণ। এমনকি, সেই ‘অযোগ্য’ উপভোক্তাদের থেকে টাকা ফেরানোর সুপারিশও তারা করেছিল রাজ্যকে। তাই আগেভাগে এ বার বাড়তি সতর্ক থাকতে চাইছে রাজ্য। এতে ভবিষ্যতে কেন্দ্র প্রকল্পের বরাদ্দ ছাড়লে তখন রাজ্যের হিসাব দাখিল করতেও সুবিধা হবে।

১৭ ডিসেম্বর থেকে উপভোক্তাদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে সরাসরি আবাসের টাকা পাঠানোর কাজ শুরু করেছে রাজ্য সরকার। এই দফায় আবাসের মূল উপভোক্তা রয়েছেন ১১ লক্ষ। আরও ১ লক্ষ মানুষকে একই বরাদ্দ দেওয়া হচ্ছে, যাঁদের বাড়ি প্রাকৃতিক কোনও বিপর্যয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। জেলা প্রশাসনগুলি জানাচ্ছে, টাকা দেওয়ার কাজ অনেকটা শেষ হয়ে গেলেও, পুরোপুরি শেষ হতে আরও কিছুটা সময় লাগবে। কারণ, উপভোক্তার ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে সরাসরি টাকা পাঠানোর আগের মুহূর্তে ফের একবার যাচাই করতে হচ্ছে, সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি যোগ্য কি না।

জেলা-কর্তাদের অনেকেই জানাচ্ছেন, জেলাভিত্তিক বরাদ্দ নবান্ন পাঠাচ্ছে জেলাশাসকদের দায়িত্বে। যাচাইের পরে বিডিও উপভোক্তাদের ‘মাস্টার রোল’ তৈরি করে পাঠাচ্ছেন জেলা পরিষদে। সেখানেও যাচাইয়ের পরে তালিকা অনুমোদন পেলে তা যাচ্ছে ট্রেজারিতে। সেখানে জেলাশাসকের ছাড়পত্র নিয়ে টাকা পৌঁছচ্ছে উপভোক্তার ব‍্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে। এক কর্তার কথায়, “টাকা পাঠানোর প্রক্রিয়ার মধ্যে কোনও অভিযোগ পেলে তা থামিয়ে দেওয়া হচ্ছে। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশ, যদি দেখা যায় অর্থ অযোগ্য কারও অ্যাকাউন্টে পৌঁছে গিয়েছে, তা-ও সরকারি কোষাগারে ফেরানো হবে দ্রুত।”

প্রসঙ্গত, আবাসে এক একজন উপভোক্তা দু’টি কিস্তিতে পাবেন মোট ১ লক্ষ ২০ হাজার টাকাকরে (সরকারি বিধিতে দুর্গম এলাকার উপভোক্তাদের ক্ষেত্রে তা ১ লক্ষ ৩০ হাজার টাকা)। অর্থাৎ, ১২ লক্ষ উপভোক্তাকে প্রথম কিস্তিতে ৬০ হাজার করে টাকা দিচ্ছে নবান্ন। সেই সূত্রে এই দফায় প্রায় ৭,২০০ কোটি টাকা জেলাগুলির মধ্যে ভাগ করে দিয়েছে তারা।

প্রশাসনিক পর্যবেক্ষকদের একাংশ মনে করিয়ে দিচ্ছেন, ২০২১ সালের নভেম্বরে হাওড়ায় একটি প্রশাসনিক বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রশাসনিক কর্তাদের সতর্ক করে বলেছিলেন, “যার প্রয়োজন রয়েছে, একমাত্র সে-ই পাবে (বাড়ি)। যার চার তলা বাড়ি রয়েছে, সে বাংলার বাড়ি পেয়ে গেল, আর যার কিছু নেই, সে পেল না। এটা চলবে না।” তার পরে ২০২২ সালের নভেম্বরে প্রায় ১১ লক্ষ উপভোক্তা সম্বলিত রাজ্যের তালিকাকে অনুমোদন দিলেও, বরাদ্দ ছাড়েনি কেন্দ্র। অভিযোগ উঠেছিল, বহু যোগ্য উপভোক্তা বঞ্চিত হয়েছিলেন। তার পর থেকে রাজ্যে ঘন ঘন ঘুরে গিয়েছে অনেকগুলি কেন্দ্রীয় এবং পর্যবেক্ষক দল। অযোগ্যদের থেকে টাকা ফেরানো-সহ বহু সংশোধনের সুপারিশ করেছিল তারা। সে সময় রাজ্য সরকারও তথ্য-সহ লিখিত ভাবে কেন্দ্রকে জানিয়েছিল, সব সংশোধনমূলক পদক্ষেপ করা হয়েছে। ভবিষ্যতে এ ব্যাপারে সতর্ক নজর থাকবে রাজ্যের।

আবাসের বরাদ্দ রাজ্য নিজেরা ছাড়লেও, বরাদ্দ চালুর আশায় কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়নমন্ত্রী শিবরাজ সিংহ চৌহানের সঙ্গে বৈঠকের অপেক্ষায় রয়েছে রাজ্য। সেই দিক থেকে উপভোক্তাদের অ্যাকাউন্টে টাকা পাঠানো নিয়ে নবান্নের এখনকার নজরদারি খুবই তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করছেন অভিজ্ঞ আধিকারিকদের অনেকেই।

অন্য বিষয়গুলি:

Bangla Awas Yojana West Bengal government
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy