—প্রতীকী ছবি।
ছেলেবেলা থেকেই পাড়ার লক্ষ্মীপুজোর সঙ্গে যুক্ত সাইফুদ্দিন মল্লিক, শোভান মল্লিকরা।
ছেলেবেলা থেকেই পাড়ার উরস সমাবেশে যোগ দেন প্রতাপ মণ্ডল, সনাতন মণ্ডল।
এ বারে লক্ষ্মীপুজোর দিনেই (৭ কার্তিক) পড়েছিল উরস। কী হবে? হাওড়া খালনা-মধ্যপাড়ার সাইফুদ্দিন-শোভানরা নিজেদের মধ্যে আলোচনা করে উরস পিছিয়ে দিয়েছিলেন। রবিবার হয়ে গেল সেই সমাবেশ। গ্রামের সাজসজ্জায় হাত লাগালেন প্রতাপ-সনাতনরা। যে ভাবে লক্ষ্মীপুজোয় এগিয়ে আসেন এখানকার মুসলিমরা।
রাতভর কাওয়ালি শুনে বাড়ি ফিরে সোমবার প্রতাপ বলেন, ‘‘ওঁরা আমাদের জন্য করেন। আমরা ওঁদের জন্য করি। এটাই এখানকার পরম্পরা।’’ শোভান-সাইফুদ্দিনরাও বলছেন, ‘‘দু’টি আয়োজন তো আর একসঙ্গে করা যায় না। পরস্পরের স্বার্থে কিছুটা তো ছাড়াই যায়। এটা স্বাভাবিক।’’
খালনার লক্ষ্মীপুজোর খ্যাতি রয়েছে। মধ্যপাড়াতেও বেশ কয়েকটি বারোয়ারি পুজো হয়। এখানে প্রায় ১০০ ঘর মুসলিম পরিবার আছে। তাঁদের বেশির ভাগই লক্ষ্মীপুজোর সঙ্গে যুক্ত। পাড়ায় রয়েছে পির সাহেবের দরগাও। সেটি পরিচালনা করে ‘সুফিজিম মাদারিয়া’ নামে একটি সংস্থা। সুলতান উল আবেদিন আলহাজ আফতাবুদ্দিন আহমেদ নামে ওই পির ১৮ বছর আগে মারা যান। তাঁর মৃত্যুর চার দিনের মাথায় পারলৌকিক কাজ হয়। সেই দিনটি ছিল ৭ কার্তিক। তার পর থেকে ওই দিনেই পিরের স্মরণে দরগায় উরস পরিচালনা করে মাদারিয়া।
এ বছর ৭ কার্তিক লক্ষ্মীপুজো পড়ায় প্রথমে চিন্তায় পড়েছিলেন মাদারিয়া কমিটির সদস্যেরা। কোন দিক সামলাবেন? তাঁদেরও অনেকে যে লক্ষ্মীপুজোয় যুক্ত! পুষ্পাঞ্জলি দেওয়া ছাড়া পুজোর আয়োজনের সব কাজ হিন্দুদের সঙ্গে তাঁরা কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে করেন। সমস্যা মেটাতে লক্ষ্মীপুজোর কয়েক দিন আগে বৈঠকে বসেন তাঁরা। ঠিক হয়, উরস পিছিয়ে লক্ষ্মীপুজোর বিসর্জনের পরে করা হবে। অনুমতি মিলল যিনি দরগা পরিচালনা করেন, সেই ধর্মগুরুরও। শনিবার লক্ষ্মীপুজোর বিসর্জন হল। রবিবার উরস। মধ্যপাড়ার মুসলিমরা বেশ সম্পন্ন। বেশির ভাগ ব্যবসা করেন। প্রতিটি বাড়ির ছেলেমেয়েরা স্কুল-কলেজে পড়াশোনা করে। পুজো, পার্বণ-সহ সব কিছুতেই দুই সম্প্রদায় কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে চলে। সাইফুদ্দিন বলেন, ‘‘বাবা-দাদুদের মুখে শুনেছি, দেশভাগের সময়ে আমাদের কয়েক জন আত্মীয় বাংলাদেশে চলে যেতে বলেছিলেন। কিন্তু এখানকার হিন্দুরা যেতে দেননি।’’
উরসে কাওয়ালি শুনতে গিয়েছিলেন খালনা লক্ষ্মীপুজো সমন্বয় সমিতির কর্তা নবকুমার সানা। তিনি খালনা পঞ্চায়েতের উপপ্রধানও। তাঁর কথায়, ‘‘আমরা শোভানদের কিছু বলিনি। ওঁরা নিজেরাই লক্ষ্মীপুজোর জন্য উরস পিছোতে চেয়ে পঞ্চায়েতে অনুমতি নিতে আসেন। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির জন্য ওই সিদ্ধান্ত জেনে অবাক হই। উরসে সব রকম সহায়তা করেছি।’’ নবকুমারের সঙ্গে কাওয়ালি শুনতে গিয়েছিলেন আমতা-২ পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি সুকান্ত পালও। তিনি বলেন, ‘‘উরসে গিয়ে দারুণ অভিজ্ঞতা হল।’’
সম্প্রীতির সুর ভাসছে মধ্যপাড়ায়।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy