খুনের ঘটনায় মোমবাতি মিছিল জিয়াগঞ্জ হাইস্কুলপাড়ার বাসিন্দাদের। —ফাইল চিত্র।
দফায় দফায় তাঁকে জেরা করা হয়েছে। তিনি কখনও মচকে গেলেও ভাঙেননি। জিয়াগঞ্জের নিহত শিক্ষক বন্ধুপ্রকাশ পালের থেকে টাকা ধার নেওয়ার কথা কবুল করলেও খুনের বিষয়ে রা কাড়েননি তিনি। পুলিশ সূত্রে খবর, সোমবার রামপুরহাটের বাসিন্দা সেই সৌভিক বণিককে একটু ‘কড়া’ ভাবে জেরা করতেই নিযে যাওয়া হয়েছিল জিয়াগঞ্জ থানার বাইরে।
জেলা পুলিশের এক কর্তা জানাচ্ছেন, জিয়াগঞ্জ থানা ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায়। শনিবার সৌভিককে ধমকেছিল পুলিশ। সেই ধমকের আওয়াজেই থানার সামনের রাস্তায় জড়ো হয়েছিলেন বহু লোকজন। সেই কারণেই এ দিন তাঁকে ‘কড়া’ ভাবে জেরা করার ঝুঁকি নেয়নি পুলিশ। তবে জিয়াগঞ্জের বাইরে কোথায় সৌভিককে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল সে বিষয়ে অবশ্য স্পষ্ট করে কিছু বলতে চায়নি পুলিশ।
বিজয়া দশমীর দিন জিয়াগঞ্জের লেবুবাগান এলাকায় খুন হন পেশায় শিক্ষক বন্ধুপ্রকাশ পাল, তাঁর স্ত্রী বিউটি ও ছয় বছরের ছেলে অঙ্গন। তদন্তে নেমে পুলিশ জানতে পারে, বন্ধুপ্রকাশের বন্ধু সৌভিকের কথাও। সৌভিক-সহ একাধিক লোকজনকে দফায় দফায় জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ জানতে পারে নানা অছিলায় বন্ধুপ্রকাশের থেকে টাকা নিয়েছিলেন সৌভিক। অবস্থা এমন দাঁড়িয়েছিল যে, বন্ধুপ্রকাশ গৃহঋণ নিয়ে বাড়ি করলেও সেই ঋণের ইএমআই দিতে হত তাঁর শ্বশুরবাড়ির লোকজনকে।
পুলিশ জানিয়েছে, সৌভিকের কাছে সেই টাকা চেয়ে বেশ কয়েক বার ফোনও করেন বন্ধুপ্রকাশের স্ত্রী বিউটি। সৌভিকের এই টাকা ধার নেওয়ার প্রবণতা যে নতুন নয় তা এ দিন জানিয়েছেন সৌভিকের প্রাক্তন স্ত্রীও। রবিবার রাতে শান্তিনিকেতনের সীমান্তপল্লিতে ওই মহিলার সঙ্গে কথা বলেন মুর্শিদাবাদ জেলা পুলিশের আধিকারিকেরা। সঙ্গে ছিল বীরভূম জেলা পুলিশও। নিহত শিক্ষক বন্ধুপ্রকাশ মণ্ডলের সঙ্গে সৌভিকের ‘বন্ধুত্ব’-এর কথা জানতেন তিনিও।
সৌভিকের প্রাক্তন স্ত্রী জানান, ব্যবসায়িক সূত্রেই সৌভিকের সঙ্গে বন্ধুত্ব গড়ে ওঠে বন্ধুপ্রকাশ ও তাঁর পরিবারের সঙ্গে। স্বামীর সঙ্গে বন্ধুত্বের সুবাদে তাঁর সঙ্গেও সুসম্পর্ক গড়ে ওঠে বন্ধুপ্রকাশের পরিবারের। তিনি জানান, ওই বাড়িতে অবাধ যাতায়াত ছিল সৌভিকের। তাঁকেও একবার সৌভিক বন্ধুপ্রকাশের বাড়িতে নিয়ে গিয়েছিল। এর পরে অতিরিক্ত সন্দেহের জেরে সৌভিকের সঙ্গে বৈবাহিক সম্পর্কে চিড় ধরতে শুরু করে বলে দাবি ওই মহিলার। সেই কারণেই ২০০৯ সালে তাঁদের বিবাহবিচ্ছেদ হয়।
তিনি বলেন, ‘‘যে ক’টা দিন সৌভিকের সঙ্গে ঘর করেছি , তাতে মনে হয় না সে এই ধরনের কাজের সঙ্গে যুক্ত। যদিও কার মনে কী রয়েছে, তা এখনই বলা সম্ভব নয়। আমি পুলিশকে জানিয়েছি, তদন্তের স্বার্থে সব রকম ভাবে সহযোগিতা করব।’’
এর আগে বন্ধুপ্রকাশের শ্বশুরবাড়ির লোকজন জানিয়েছিলেন, সৌভিকের টাকা ধার নেওয়ার অভ্যাস ছিল। বন্ধুপ্রকাশের কাছ থেকেও নানা অছিলায় লক্ষাধিক টাকা ধার করেছিল সৌভিক। এ দিন সৌভিকের প্রাক্তন স্ত্রীও একই দাবি করেছেন। তিনি বলেন, ‘‘প্রায়ই এর-ওর কাছ থেকে টাকা ধার করত সৌভিক। এমনকি ব্যবসার কাজের জন্য আমার বাবার কাছ থেকেও তিন লক্ষ টাকা ধার হিসেবে নিয়েছিল। সেই টাকা আজও সে ফেরত দেয়নি।’’
এ দিন উঠে এসেছে আর একটি তথ্যও। যে দিন খুন হন জিয়াগঞ্জের শিক্ষক বন্ধুপ্রকাশ পাল, তাঁর স্ত্রী বিউটি ও ছেলে অঙ্গন, সে দিন থেকেই বিউটির গয়নার কোনও হদিস পাওয়া যাচ্ছে না বলেও দাবি করেছেন বিউটির বাপের বাড়ির লোকজন। রামপুরহাট থানার সিউড়া গ্রামে বিউটির বাপের বাড়িতে সোমবার আসে সিআইডি-র চার সদস্যের দল। তদন্তকারীরা বিউটির মা চন্দনা মণ্ডল, দাদা সাক্ষীগোপাল এবং দাদু বাদল মণ্ডলকে জিজ্ঞাসাবাদ করেন।
বন্ধুপ্রকাশের শ্যালক সাক্ষীগোপাল এ দিন বলেন, ‘‘বোনের বিয়ের সময় আমাদের পরিবার থেকে ওকে বেশ কয়েক ভরি সোনার গয়না দেওয়া হয়েছিল। ভাগ্নেকেও পরে কিছু গয়না দেওয়া হয়েছিল। তা ছাড়া, বন্ধুপ্রকাশ নিজেও গয়না কিনেছিল। কিন্তু, সিআইডি অফিসারেরা এ দিন আমাদের জানিয়েছেন, বোনের বাড়িতে থাকা গয়নার কোনও হদিস তাঁরা পাননি। এতে আমরা আরও হতাশ হয়ে পড়েছি। এত টাকার গয়না কোথায় গেল, বুঝে উঠতে পারছি না।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy