ধৃত: উৎপল বেহেরা
শান্ত স্বভাবের মিশুকে ছেলেটার সঙ্গে স্কুলের অনেকেই মাঝেমধ্যে কথা বলেছেন। ভবন নির্মাণের কাজ চলায় গত সাত মাস অন্য রাজমিস্ত্রিদের সঙ্গে সে স্কুল চত্বরেই থাকত। সেই ছেলেই কি না ঠান্ডা মাথায় মিনিট পাঁচেকের মধ্যে তিন তিনটে খুন করেছে! বিশ্বাস করতে পারছেন না পরিচিতেরা।
গত ৮ অক্টোবর, বিজয়া দশমীর দুপুরে মুর্শিদাবাদের জিয়াগঞ্জের বাড়িতে খুন হন স্কুলশিক্ষক বন্ধুপ্রকাশ পাল, তাঁর অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী বিউটি এবং পাঁচ বছরের ছেলে অঙ্গন। তিন জনকেই ধারাল অস্ত্র দিয়ে কোপানো হয়েছিল। সেই ঘটনাতেই উৎপল বেহেরা নামে এক যুবককে সোমবার রাতে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। মুর্শিদাবাদের সাগরদিঘি থানার সাহাপুর গ্রামের বাসিন্দা উৎপল ওরফে মনোজ কয়েক বছর ধরে পূর্ব মেদিনীপুরের এগরায় রাজমিস্ত্রির কাজ করত। সাগরদিঘির এক ব্যক্তির মাধ্যমে সে এগরার ঠিকাদার সুধাংশুশেখর পয়ড়্যার সংস্থায় কাজ করতে এসেছিল। ওই ঠিকাদারি সংস্থা সূত্রের খবর, দেড় বছর ধরে এগরা শহরে একাধিক সরকারি নির্মাণের কাজ করেছে বছর কুড়ির উৎপল। গত এপ্রিল থেকে সে এগরা ঝাঁটুলাল হাইস্কুলে নতুন ভবন তৈরি এবং পুরনো ভবন সংস্কারের কাজে যুক্ত ছিল। গত সাত মাস স্কুলেরই একটি ঘরে জনা বারো শ্রমিকের সঙ্গে থাকত উৎপল।
উৎপলের চলাফেরা বা আচরণে কখনও অস্বাভাবিক কিছু দেখেননি ঠিকাদারি সংস্থার মালিক সুধাংশু এবং অন্য শ্রমিকেরা। সুধাংশু জানিয়েছেন, উৎপল চুপচাপই থাকত। অতিরিক্ত টাকা উপার্জনে রাতেও কাজ করত। তাকে কেউ নেশা করতে দেখেনি বলেও ওই ঠিকাদার সংস্থা সূত্রে খবর।
দুর্গাপুজোর ষষ্ঠীর দিন ছুটি নিয়ে বাড়ি ফিরেছিল উৎপল। ঠিকাদারি সংস্থা সূত্রের খবর, মহাদেব দাস নামে সাগরদিঘির যে ব্যক্তি এগরায় শ্রমিক পাঠানোর কাজ করতেন, তাঁর সঙ্গে টাকা নিয়ে সুধাংশুর মনোমালিন্য হয়। ফলে, লক্ষ্মীপুজোর পরে মহাদেব আর এগরায় শ্রমিক পাঠাননি। তাই উৎপলও আর কাজে আসেনি। ঠিকাদারি সংস্থার মালিক সুধাংশু বলেন, ‘‘জিয়াগঞ্জের ওই খুনে উৎপল গ্রেফতার হয়েছে শুনে তো অবাক হয়ে গিয়েছি। শান্ত, ভদ্র স্বভাবের একটা ছেলে। সামান্য নেশাও করত না। সে কী করে এই কাণ্ড ঘটাল, মেলাতে পারছি না।’’
এগরা ঝাঁটুলাল স্কুলে ভবন নির্মাণের জন্য যখন স্কুল চত্বরেই রাজমিস্ত্রিদের থাকার কথা হয়, তখন এতজন অপরিচিত যুবকের রাতে থাকা নিয়ে প্রথমে উদ্বিগ্ন ছিলেন কর্তৃপক্ষ। তবে সিসিটিভি ক্যামেরা থাকায় শ্রমিকদের রাখার সিদ্ধান্ত হয়। উৎপল ও আরও কয়েকজন শ্রমিকদের সঙ্গে স্কুলের শিক্ষক ও কর্মীদের কথাবার্তাও হত। শ্রমিকদের ভরসাতেই গত কয়েকমাস নিরাপত্তারক্ষী পর্যন্ত রাখেননি স্কুল কর্তৃপক্ষ। অপ্রীতিকর কিছু ঘটেওনি।
স্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক অমৃতলাল মহাপাত্র বলছিলেন, ‘‘চোখের সামনে উৎপলকে ঘুরতে দেখেছি। কোনও দিন সন্দেহ হয়নি। শিক্ষক-শিক্ষিকাদের সঙ্গে যে ছেলেটা হাসিঠাট্টা করত, সে-ই কি না তিন-তিনটে খুনে গ্রেফতার হয়েছে! আমরা সকলেই অবাক।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy