যে কোনও খুনই নৃশংস। তবে আর পাঁচটা খুনের সঙ্গে জিয়াগঞ্জের খুনের ঘটনা মেলানো যাবে না। মাত্র কুড়ি বছর বয়সী এক যুবক মাত্র পাঁচ মিনিটে তিন জনকে যে ভাবে খুন করেছে বলে অভিযোগ তা ভয়ঙ্কর ঘটনা। এই প্রথম যার অপরাধের হাতেখড়ি সে কিনা এক জন অন্তঃসত্ত্বা মহিলা, বছর ছয়েকের শিশু-সহ তিন জনকে খুন করে দিল! তবে মনোবিজ্ঞানে এর ব্যাখ্যা রয়েছে। অতীতে অপরাধের রেকর্ড না থাকা সত্ত্বেও শান্ত স্বভাবের এক জন মানুষও রাগ, ক্ষোভ, দুঃখ থেকে এই ধরনের ঘটনা ঘটাতে পারে।
‘অ্যান্টি সোশ্যাল পার্সোনালিটি ডিজ়অর্ডার’ নামে এক ধরনের রোগ হয়। পেশাদার খুনিরা কমবেশি এই রোগে আক্রান্ত। অন্যদের ব্যথা, যন্ত্রণার বিষয়ে পেশাদার খুনিদের কোনও অনুভূতি থাকে না। সেই কারণে খুন করতে তাদের হাত কাঁপে না। আবার অনেক সময় চুরি করে প্রমাণ লোপাটের জন্য চোর-ডাকাতেরা এমন কিছু করে যা কল্পনার অতীত।
অনেক সময় তাৎক্ষণিক রাগ উদ্রেককারী কথা, উগ্রকথা, অসম্মানজনক কথাও শান্ত মানুষকে অশান্ত করে তোলে। খুনি করে তোলে। তাৎক্ষণিক রাগের কারণে খুন পর্যন্ত করে ফেলতে পারে। আবার শারীরিক ও মানসিক অত্যাচারের কারণেও ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। আর সেই ক্ষোভ দীর্ঘ দিন জমতে থাকলে ভয়ঙ্কর আকার ধারন করে। জিয়াগঞ্জে সপরিবার শিক্ষক খুনের ক্ষেত্রে অভিযুক্ত মানসিক অত্যাচারের স্বীকার হয়েছিল বলেই মনে হচ্ছে। টাকা ফেরত চেয়েও না পাওয়া তো ছিলই। সেই সঙ্গে নানাবিধ অপমান তাকে পীড়া দেয়। তার মনে দুঃখ ও রাগ তৈরি হয়। আর সেই দুঃখ ও রাগ থেকে মুক্তি পেতেই অভিযুক্ত এমন কাজ করে থাকতে পারে।
চিকিৎসাশাস্ত্র মতে, খুন করার পরে ও মানসিক ভাবে শান্তি পেয়েছে বলেই অভিযুক্ত এমন নির্লিপ্ত থেকেছে। মানসিক অত্যাচারের ক্ষেত্রে আত্মহত্যাও করতে পারত। দুঃখ ও রাগের হাত থেকে রক্ষা পেতে অনেক সময় অনেকেই আত্মহত্যা করে থাকে। যাকে চিকিৎসার পরিভাষায় বলা হয় ‘অ্যাগ্রেশন টার্নড ইনওয়ার্ড’। আবার ‘অ্যাগ্রেশন টার্নড আউটওয়ার্ড’ হলে অন্যকে আক্রমণ করে, এমনকি খুন করেও বসে। ধৃতের বিষয়ে পুলিশের বক্তব্য শুনে মনে হচ্ছে, ২৪ হাজার টাকা বা তার রিসিট না দেওয়া ও গালিগালাজ ধৃত যুবক মেনে নিতে পারেনি। বার বার বলেও টাকা না পাওয়ায় ক্ষোভ তো ছিলই। সেই সঙ্গে যুক্ত হয়েছে গালিগালাজ। তার ফলেই তার মাথায় খুন চেপে যায়। আর তা থেকেই খুন বলে মনে হচ্ছে।
২০০৬ সালের বিশ্বকাপ ফুটবলের ফাইনালের কথা নিশ্চয় মনে রয়েছে আমাদের। সেই ফাইনালে মুখোমুখি হয়েছিল ফ্রান্স ও ইতালি। ফ্রান্সের জ়িনেদিন জ়িদানকে ইতালির মার্কো মাতেরাজ়ি অপমানজক কথা বলেছিলেন। নিজেকে ঠিক রাখতে না পেরে মাঠের ভিতরেই জ়িদান মাথা দিয়ে মার্কোর বুকে গুঁতো মেরেছিলেন। জিদানকে লালকার্ড দেখিয়ে মাঠ থেকে বের করে দেওয়া হয়েছিল। ফলে অনেক সময় অসম্মানজনক কথা থেকে মানুষ রেগে অন্যকে আক্রমণ করে বইকি! কেউ এমন পরিস্থিতিতে আছে জানতে পারলে অবিলম্বে মানসিক রোগ বিশেষজ্ঞের কাছে চিকিৎসা করানো উচিত।
মনোরোগ বিশেষজ্ঞ
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy