নিহত বন্ধুপ্রকাশ পাল। — ফাইল ছবি
স্কুলে পড়াতেন। পাশাপাশি একাধিক ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন জিয়াগঞ্জের শিক্ষক বন্ধুপ্রকাশ পাল। গ্রামে গ্রামে ঘুরে বিভিন্ন বিমা কোম্পানির পলিসি করাতেন। সম্প্রতি শেয়ার মার্কেট, মিউচুয়াল ফান্ডের কাজও করতেন তিনি। এমনকি ঋণ দেয় যে সব সংস্থা, তাদের হয়েও কাজ করতেন বন্ধুপ্রকাশ। জিয়াগঞ্জ-কাণ্ডের তদন্ত নেমে পুলিশ জানতে পারে, গ্রাহকদের কাছ থেকে টাকা নিয়ে বন্ধুপ্রকাশ শেষ পর্যন্ত সেই সব পলিসির টাকা কোম্পানিগুলিকে জমা দেননি। গ্রাহকদের অনেকেই সেটা বুঝতে পেরেছিলেন। সে কারণে বন্ধুপ্রকাশের উপর অনেকের আক্রোশও ছিল।
পুলিশের দাবি, যখনই পলিসি-র কাগজ বা রশিদের টাকা চাইতেন গ্রাহকরা— তাঁদের নানা অজুহাতে ফিরিয়ে দিতেন বন্ধুপ্রকাশ। স্ত্রী-পুত্র-সহ বন্ধুপ্রকাশকে খুনের ঘটনায় ধৃত উৎপল বেহরার সঙ্গেই এমন ঘটনা ঘটে। বিমার বাৎসরিক প্রিমিয়ামের রশিদ না দিয়ে উৎপলকে গালিগালাজ করেন বন্ধুপ্রকাশ। খারাপ ব্যবহারও করেন। পুলিশের কাছে উৎপল জানিয়েছে, আর্থিক সমস্যা থাকা সত্ত্বেও, বাবা মাধব বেহরার আপত্তি উড়িয়ে ‘পিএনবি মেট লাইফ’-এ ১১ বছরের একটি টার্ম পলিসি করেছিল সে। বছরে ২৪ হাজার ১৬৭ টাকা দেওয়ার কথা। সেই টাকা দিয়েও দেয় পেশায় রাজমিস্ত্রি বছর কুড়ির উৎপল। দ্বিতীয় প্রিমিয়ামের টাকা দেওয়ার পর তার রশিদ চাইতে গেলেই বার বার ঘোরাচ্ছিলেন বন্ধুপ্রকাশ। পুলিশকে এমনটাই জানিয়েছে সে।
সাহাপুরের একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক ছিলেন বন্ধুপ্রকাশ পাল। এলাকায় দেখা পেলেই বন্ধুপ্রকাশের কাছে উৎপলের বাবা মাধববাবু টাকার রশিদ চাইতেন। পরের দিকে তিনি ফেরতও চাইতেন সব টাকা। কিন্তু দুটোর কোনওটাই দেননি ওই শিক্ষক। এ নিয়ে বাড়িতে যেমন উৎপলকে কথা শুনতে হত, তেমন বন্ধুপ্রকাশের সঙ্গে দেখা করলেও তিনি বাজে ব্যবহার করতেন। পুজোর আগে বন্ধুপ্রকাশকে ফোন করে ফের টাকা চান উৎপল। তখনও তাকে গালিগালাজ করা হয়ে বলে সে জেরায় জানিয়েছে। তার পরই খুনের পরিকল্পা করে সে।
আরও পড়ুন: জিয়াগঞ্জ তদন্ত: নানান সন্দেহে ঘুরপাক খেতে খেতে কী ভাবে উৎপলকে ধরতে পারল পুলিশ
মুর্শিদাবাদের পুলিশ সুপার মুকেশ কুমার জানান, “তদন্তে জানা যায়, বন্ধুপ্রকাশ এসবিআই লাইফ, পিএনবি মেট লাইফ, শেয়ার মার্কেট, মিউচুয়াল ফান্ড-সহ মাল্টি লেভেল মার্কেটিং সংস্থার এর সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। নিজের গ্রামে এবং আশপাশের গ্রামে অনেক পলিসিও করিয়েছেন। তাঁর কাছে পলিসি করে অনেকেই ‘চিট’ হয়েছেন।”
বন্ধুপ্রকাশের বাড়িতে তল্লাশি করে অনেক পলিসি পাওয়া যায়। তার মধ্যে একটিতে রক্তের দাগ ছিল। একটা ব্যাগ পাওয়া গিয়েছিল ঘটনাস্থল থেকে। তা থেকেই উৎপলের নাম জানা যায়। তার পর সাগরদিঘি গ্রামের অনেক লোকের সঙ্গে উৎপলকেও ডাকা হয়েছিল। এ ভাবে বেশ কয়েক বার উৎপলকে জেরা করা হলেও, তথ্য গোপন করছিল সে। একই সময়ে তার মোবাইলের টাওয়ার লোকেশন খতিয়ে দেখে পুলিশ। তা থেকে তদন্তকারী অফিসারেরা আরও নিশ্চিত হয়ে যায়, ঘটনার দিন সে কোথায় কখন ছিল।
আরও পড়ুন: জিয়াগঞ্জ কাণ্ডের কিনারা, ২৪ হাজার টাকার জন্য খুন, আততায়ী গ্রেফতার সাগরদিঘি থেকে
অবশেষে সোমবার রাতে তাকে ফের জেরা করা হলে, দোষ স্বীকার করে নেয় উৎপল। তবে প্রথম থেকে শৌভিক বণিক নামে এক জনের নাম উঠে আসছিল বিভিন্ন মাধ্যমে। বন্ধুপ্রকাশ এবং শৌভিক দীর্ঘ দিনের বন্ধু। একই ব্যবসায় যুক্ত ছিল দু’জনে। শৌভিকই বন্ধুপ্রকাশকে ব্যবসায় এনেছিলেন বলে দাবি করেছিল পুলিশ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy