Advertisement
১৮ নভেম্বর ২০২৪

মাদ্রাসায় শীর্ষে নবাবভূমি, পাশের হারে এগিয়ে মেয়েরাই

বৃহস্পতিবার মাদ্রাসার পরীক্ষার ফল বেরোতেই দেখা গেল, জেলায় যেখানে ছেলেদের পাশের হার ৮০.৪৩ শতাংশ, সেখানে মেয়েদের পাশের হার ৮৩.০৪ শতাংশ। শুধু তাই নয়, মাদ্রাসা পরীক্ষায় রাজ্যে মুর্শিদাবাদের ৯ জন পড়ুয়া প্রথম দশে জায়গা করে নিয়েছে।

 উচ্ছ্বাস: বৃহস্পতিহার ফলপ্রকাশের পরে ভাবতা আজিজিয়া হাই মাদ্রাসার ছাত্রীরা। ছবি: গৌতম প্রামাণিক

উচ্ছ্বাস: বৃহস্পতিহার ফলপ্রকাশের পরে ভাবতা আজিজিয়া হাই মাদ্রাসার ছাত্রীরা। ছবি: গৌতম প্রামাণিক

সামসুদ্দিন বিশ্বাস
বহরমপুর শেষ আপডেট: ১৭ মে ২০১৯ ০২:৪২
Share: Save:

এগিয়ে থাকল মেয়েরাই! পরীক্ষার্থী হিসেবে তো বটেই পাশের হারেও ছেলেদের পিছনে ফেলে দিল তারাই।

বৃহস্পতিবার মাদ্রাসার পরীক্ষার ফল বেরোতেই দেখা গেল, জেলায় যেখানে ছেলেদের পাশের হার ৮০.৪৩ শতাংশ, সেখানে মেয়েদের পাশের হার ৮৩.০৪ শতাংশ। শুধু তাই নয়, মাদ্রাসা পরীক্ষায় রাজ্যে মুর্শিদাবাদের ৯ জন পড়ুয়া প্রথম দশে জায়গা করে নিয়েছে। তাদের মধ্যে চার জন ছাত্রী। উচ্চ মাধ্যমিক সমতুল ‘ফাজিল’ পরীক্ষাতেও মুর্শিদাবাদের ‘মাদ্রাসা আলিয়া অনন্তপুর সিনিয়র মাদ্রাসার’- পড়ুয়া রাশিদা খাতুন ৫৩০ নম্বর পেয়ে রাজ্যে পঞ্চম স্থান অধিকার করেছে।

গত মাসে মুর্শিদাবাদে তিনটি লোকসভা কেন্দ্রে নির্বাচন হয়েছে। সেখানে দেখা গিয়েছে ভোটদানের ক্ষেত্রে পুরুষদের তুলনায় মহিলারা এগিয়ে রয়েছে। এ বারে মাদ্রাসা পরীক্ষাতেও মেয়েরা এগিয়ে যাওয়ার ঘটনাকে ইতিবাচক বলেই দাবি করেছেন শিক্ষা দফতর ও প্রশাসনের কর্তারা।

দারিদ্র, বাল্যবিবাহ, পাচারের মতো নানা ঘটনায় মেয়েরা সে ভাবে এগিয়ে আসতে পারছিল না। এলাকার বাসিন্দারা বলছেন, ‘‘লেখাপড়ায় ভাল কত মেয়ের যে অল্পবয়সে বিয়ে হয়ে গিয়েছে তার ইয়ত্তা নেই। তখন এ সব নিয়ে গা করেনি কেউ। তার পরে এ সবের বিরুদ্ধে লড়াই শুরু হয়েছিল সমাজের ভিতর থেকেই। মেয়েদের স্বাধীনতা দেওয়া, তাদের পড়াশোনার বিষয়ে নজর দেওয়ার ঘটনায় বাবা মায়েরা আগের থেকে অনেক সক্রিয় হয়েছেন। তারই ফল মিলছে।’’

জেলার এক মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষের দাবি, কন্যাশ্রী থেকে শুরু করে সবুজসাথীর মতো একাধিক কর্মসূচি, নাবালিকা বিয়ে বন্ধে নানা স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার এগিয়ে আসার কারণে মেয়েরা অক্সিজেন পেয়েছে। হরিহরপাড়ার জাকিরুন বিবির মতো জেলার অনেকেই নাবালিকা বিয়ের কথা শুনলেই কন্যাশ্রী যোদ্ধা ও প্রশাসনের লোকজনকে সঙ্গে নিয়ে বিয়ে আটকেছেন। যার ফলে স্কুলছুট মেয়ের সংখ্যা ক্রমশ কমেছে। এ বারে মাদ্রাসা পরীক্ষায় মেয়েদের সংখ্যাও ছেলেদের তুলনায় বেশি ছিল। গত বছর মাদ্রাসা পরীক্ষায় মেয়েরা পাশের হারে পিছিয়ে থাকলেও পাশের সংখ্যার নিরিখে মেয়েরা এগিয়েছিল। এবারে পাশের হার ও সংখ্যা দু’দিক থেকেই এগিয়ে মুর্শিদাবাদের মেয়েরা।

মুর্শিদাবাদের জেলা স্কুল পরিদর্শক (মাধ্যমিক) পূরবী বিশ্বাস দে বলছেন, ‘‘বৃহস্পতিবার মাদ্রাসা পরীক্ষার ফল প্রকাশিত হয়েছে। তাতে দেখা যাচ্ছে এই জেলায় ছেলেদের তুলনায় মেয়েরা পাশের হারে এগিয়ে রয়েছে।’’ এ দিন তিনি ছাত্রীদের উদ্দেশে বলেন, ‘‘মেয়েরা পাশের হারে এগিয়ে থাকায় তাদের শুভেচ্ছা জানাচ্ছি।’’ একই সঙ্গে ছেলেদের আরও বেশি করে পড়াশোনা করে এগিয়ে আসার কথা বলেন তিনি।

লালগোলা রহমোতুল্লা হাইমাদ্রাসার ইংরেজির শিক্ষিকা শিরিন সুলতানা বলেন, ‘‘ক্লাস নিতে গিয়ে দেখি, এখন মেয়েরা স্নাতক না হওয়া পর্যন্ত পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়ার কথা বলে। অথচ যত উঁচু ক্লাস হচ্ছে, ছাত্র সংখ্যা তত কমছে। মেয়েরা এগোচ্ছে, এটা খুবই ভাল কথা। কিন্তু দারিদ্রের কারণে কমবয়সে ছেলেরা কাজের সন্ধানে চলে যাচ্ছে। এটা রুখতে হবে।’’

লালগোলার মানিকচক হাই মাদ্রাসার শিক্ষিকা দোলারানি দে বলছেন, ‘‘ভর্তির সময় দেখি ৮০-৮৫ শতাংশ ছাত্রী ভর্তি হচ্ছে। ফলে ভর্তির সময় থেকেই মেয়েরা এগিয়ে যাচ্ছে। স্কুলে আসার ক্ষেত্রেও মেয়েরা এগিয়ে। পড়াশোনার আগ্রহের কারণে মেয়েরা নিয়মিত স্কুলে আসে। সেই কারণেই পাশের হারে মেয়েরা এগিয়ে।’’

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy