মুকুল রায়ের ক্ষোভ খানিকটা প্রশমিত হলেও পুত্র শুভ্রাংশু এখনও ক্ষুব্ধ।
রাজনীতি থেকে স্বেচ্ছাবসর নিলে কেমন হয়? বৃহস্পতিবার দুপুরে নিজের ফেসবুক ওয়ালে এই প্রশ্নটি রেখেছেন বিজেপি-র কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি মুকুল রায়ের পুত্র শুভ্রাংশু রায়। যা নিয়ে বিজেপি-র অন্দরে আলোড়ন পড়েছে। বাবার হাত ধরেই একদা তৃণমূলের বিধায়ক শুভ্রাংশু (যিনি ‘হাপুন’ ডাকনামেই সমধিক প্রসিদ্ধ) বিজেপি-তে যোগ দিয়েছিলেন। যদিও বাবার মতোই তিনিও নতুন দলে নিজের মর্যাদা নিয়ে ক্ষুণ্ণ। দীর্ঘদিন পদবৃত্তের বাইরে থাকার পর শুভ্রাংশুর বাবা মুকুলকে কেন্দ্রীয় পদাধিকারি করেছে বিজেপি। তাতে বাবার ক্ষোভ খানিকটা প্রশমিত হয়েছে তো বটেই। কিন্তু দেখা যাচ্ছে, পুত্র এখনও ক্ষুব্ধ।
বীজপুরের বিধায়ক শুভ্রাংশুর ওই পোস্ট নিয়ে তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা হয়েছিল। কিন্তু তাঁর ফোন ক্রমাগত বেজে গিয়েছে। পরে রাতে তাঁর ঘনিষ্ঠরা জানিয়েছেন, শুক্রবার সকাল ১০টা নাগাদ কাঁচড়াপাড়ার বাড়িতে একটি সাংবাদিক বৈঠক ডেকেছেন শুভ্রাংশু। সেখানে তিনি কী বলবেন, তা নিয়ে বৃহস্পতিবার থেকেই জল্পনা তুঙ্গে।
মুকুল অবশ্য ফোন ধরেছেন। কিন্তু কোনও মন্তব্য করতে চাননি। উল্টে বলেছেন, তাঁর এমন কিছু জানা নেই। তবে বিজেপি-র স্থানীয় সূত্রের খবর, সম্প্রতি দলীয় একটি বৈঠকে তাঁকে না-ডাকায় এবং বিভিন্ন ভাবে তাঁকে ‘খাটো’ করার চেষ্টায় ক্ষুব্ধ শুভ্রাংশু। দলের এক স্থানীয় নেতা এদিন বলেন, ‘‘শুভ্রাংশু আবেগতাড়িত হয়ে ওই পোস্ট করে ফেলেছে। কয়েকদিন আগে দলের কোনও একটা বৈঠকে ওকে ডাকা হয়নি। সেটা নিয়ে ও ক্ষুব্ধ। তা ছাড়া, দলের অন্দরে ওকে নিয়ে কয়েকজন বিরূপ মন্তব্যও করেছে সম্প্রতি। সে কারণে ওর ক্ষোভ আরও বেড়েছে। ওর বয়স কম। তাই আবেগতাড়িত হয়ে ও ফেসবুকে ওই পোস্ট করে ফেলেছে। আমাদের ধারনা, বিষয়টা মিটে যাবে। দলের তরফে ওর সঙ্গে যোগাযোগেরও চেষ্টা করা হচ্ছে। আমাদের আশা, ওকে বুঝিয়ে শান্ত করা যাবে।’’
ওই নেতা যা-ই বলুন, এ দিন বেলা ১২টা নাগাদ করা ওই ফেসবুক পোস্ট বিকাল পর্যন্ত শুভ্রাংশুর প্রোফাইলে রয়েছে। দলের তরফে সেই পোস্ট তুলে নেওয়ার জন্য তাঁকে অনুরোধ করা হবে কি না, সে বিষয়ে অবশ্য কোনও নেতা আলোকপাত করতে পারেননি। প্রসঙ্গত, সক্রিয় রাজনীতি করার পাশাপাশিই শুভ্রাংশু একাধিক সংস্থার কর্ণধারও বটে। ফেসবুকে তাঁর ‘ফলোয়ার’-এর সংখ্যা ৩০ হাজারের কাছাকাছি। ফলে তাঁর ওই পোস্ট যে ইতিমধ্যেই বহু মানুষ দেখেছেন বা পড়েছেন, তা স্পষ্ট। যা থেকে এই উপসংহারে পৌঁছনোও অসম্ভব নয় যে, এর ফলে বিজেপি যথেষ্ট ‘অস্বস্তি’-তে পড়ল। এমনিতেই উত্তর ২৪ পরগনায় মণীশ শুক্ল খুনের ঘটনায় প্রকাশ্যেই বিজেপি-র অন্দরে গোষ্ঠীলড়াইয়ের অভিযোগ করতে শুরু করেছে শাসক তৃণমূল। শুভ্রাংশুর এই ফেসবুক পোস্টে দলীয় কোন্দলের সেই অভিযোগ আরও জলবাতাস পাবে বলেই ধারনা বিজেপি-র একাংশের। পাশাপাশিই, এর ফলে অস্বস্তিতে পড়তে পারেন মুকুল নিজেও। দলের কেন্দ্রীয় পদাধিকারীর বিধায়ক পুত্র স্বেচ্ছাবসরের প্রসঙ্গ তুললে সেটি তাঁর পক্ষেও যথেষ্ট বিড়ম্বনার কারণ বৈকি!
আরও পড়ুন: বাবুল-রায় নিয়ে আইনজীবীদের সঙ্গে পরামর্শ করে সিদ্ধান্ত মহুয়ার
আরও পড়ুন: কেরলে সোনা পাচার কাণ্ডে দাউদের যোগ থাকতে পারে, সন্দেহ এনআইএ-র
মুকুল-পুত্রের ফেসবুক পোস্ট নিয়ে আলোড়ন পড়েছে বিজেপি-র অন্দরে। —নিজস্ব চিত্র।
ঘটনাপ্রবাহ বলছে, মুকুল তৃণমূল ত্যাগ করার পরেও বেশ কিছুদিন তৃণমূলে ছিলেন শুভ্রাংশু। তখন তাঁকে তৃণমূলের তরফে বিভিন্ন রাজনৈতিক কটূকাটব্যেরও শিকার হতে হয়েছিল। তখনও তিনি মাঝেমধ্যে মুখ খুলতেন। অতঃপর কালক্রমে তিনিও বাবার পদাঙ্ক অনুসরণ করে বিজেপি-তে আসেন। কিন্তু সেখানেও বিভিন্ন বিষয়ে তাঁর অনুযোগ ছিল। তবে এ বারের মতো একেবারে ‘স্বেচ্ছাবসর’-এর প্রসঙ্গ কখনও আনেননি শুভ্রাংশ। তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে, তিনি স্বেচ্ছাবসরের কথা ঘোষণা করেননি। শুধু প্রশ্ন তুলেছেন। যা থেকে দলের একাংশের অনুমান, শুভ্রাংশু শেষপর্যন্ত তেমনকিছু করবেন না। এই পোস্টের মারফতে তিনি নিজের ক্ষোভ এবং অপ্রসন্নতার কথা জনসমক্ষে জানিয়ে রাখলেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy