সুনীল মণ্ডল। ফাইল ছবি
তৃণমূল থেকে সদ্য বিজেপি-তে যোগ দেওয়া সাংসদ সুনীল মণ্ডলের জন্য দ্রুত কেন্দ্রীয় নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হচ্ছে বলে জানালেন পশ্চিমবঙ্গ বিজেপি-র পর্যবেক্ষক কৈলাস বিজয়বর্গীয়। শনিবার হেস্টিংসে বিজেপি-র প্রধান নির্বাচনী দফতরে সুনীলের উপর যে ‘হামলা’ হয়েছে, তার প্রেক্ষিতেই ওই সিদ্ধান্ত বলে বিজেপি সূত্রের খবর। শনিবার সন্ধ্যায় কৈলাস বলেন, ‘‘সুনীল মণ্ডলকে কেন্দ্রীয় নিরাপত্তা দেওয়ার জন্য কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের কাছে লিখিত আর্জি জানানো হয়েছে। দ্রুত তাঁকে কেন্দ্রীয় নিরাপত্তা দেওয়া হবে।’’
প্রসঙ্গত, এর আগে শুভেন্দু অধিকারীকেও বুলেটপ্রুফ গাড়ি-সহ কেন্দ্রীয় নিরাপত্তা দেওয়া হয়েছে। বিজেপি-তে যোগ দেওয়ার আগেই শুভেন্দু রাজ্যের নিরাপত্তা ছেড়ে দিয়েছিলেন। শুভেন্দুকে ‘জেড’ ক্যাটিগরির নিরাপত্তা দেওয়া হচ্ছে। এখন দেখার, সুনীলকে কোন পর্যায়ের নিরাপত্তা দেওয়া হয়। যদিও সুনীলের গাড়িতে ‘হামলা’র বিষয়ে তৃণমূলের মহাসচিব তথা রাজ্যের মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় বলেছেন, ‘‘সুনীল মণ্ডল হাতে গোনার মতো কোনও নেতা নন।’’
ঘটনার সূত্রপাত শনিবার দুপুরে। দলীয় বৈঠক এবং সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়ার জন্য সুনীল হেস্টিংসের দফতরের কাছে পৌঁছলে সেখানে ব্যাপক বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করে তৃণমূল। যার পাল্টা মাঠে নামে বিজেপি-ও। এলাকায় বচসা এবং ধস্তাধস্তি বেধে যায়। কিছুক্ষণ পরে পুলিশ অবস্থা নিয়ন্ত্রণে আনে। এলাকায় বাড়তি পুলিশও মোতায়েন করা হয়।
বিজেপি-র অভিযোগ, ‘‘ওই হামলা পরিকল্পিত।’’ তাঁদের বক্তব্য, সকাল থেকেই বিজেপি দফতরের অদূরে মঞ্চ বেঁধে, মাইক বাজিয়ে তৃণমূলের বিক্ষোভ কর্মসূচি শুরু হয়। সুনীলের গাড়ি তার কাছাকাছি পৌঁছতেই কিছু তৃণমূলকর্মী গাড়িটি আটকে দেন। সুনীলের গাড়ি ঘিরে ধরে তাঁরা বিক্ষোভ দেখাতে থাকেন। বিজেপি-র অভিযোগ, বিক্ষোভকারীরা সুনীলের গাড়ি ভাঙচুর করে। ওই সাংসদের উপর হামলা হয়। তাদের আরও অভিযোগ, ঘটনার সময় পুলিশ ‘নিষ্ক্রিয়’ ছিল। পরে বাড়তি পুলিশ এনে সুনীলের গাড়ি ঘেরাওমুক্ত করা হয়। তাঁকে বিজেপি কর্মীরা কোনওমতে দফতরে ঢুকিয়ে নেন।
বিজেপি-র অভিযোগ, তাদের দফতরে কর্মসূচি আছে বলেই তৃণমূল তারস্বরে মাইক বাজিয়ে ওই বিক্ষোভ সমাবেশের আয়োজন করেছিল। বিজেপি-র বিভিন্ন নেতা অভিযোগ করেন, পুলিশের ‘মদতে’ই গোটা ঘটনা ঘটেছে। তৃণমূলের ওই বিক্ষোভসভার কোনও পরিকল্পনা আগে থেকে ছিল না। বিজেপি-র বৈঠক ছিল বলেই ওই সভা করা হয়েছে। যাতে বিজেপি-র বৈঠকের আগে ‘পরিকল্পিত ভাবে’ বিক্ষোভ দেখানো যায়। বস্তুত, বিজেপি নেতারা শনিবারের ঘটনাকে দলের সভাপতি জেপি নড্ডার কনভয় যাওয়ার সময় রাস্তার পাশে সভা করে ‘প্ররোচনা’ এবং পর্যায়ক্রমে হামলার ঘটনার সঙ্গে তুলনা করছেন।
তবে তৃণমূলের প্রবীণ সাংসদ সৌগত রায় বলেন, ‘‘এটা এলাকার লোকের স্বতঃস্ফূর্ত বিক্ষোভ। সুনীল দু’বার দলের টিকিটে জিতেছেন। তার পর দলের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছেন। তাই দলের কর্মী-সমর্থকরা তাঁর গাড়ি আটকে স্বতঃস্ফূর্ত বিক্ষোভ দেখিয়েছেন। পরিকল্পনা করে কিছু করা হয়নি।’’ সৌগত আরও জানান, পুলিশ মোটেই ‘নিষ্ক্রিয়’ ছিল না। তারা তাদের কর্তব্য যথাবিহিত পালন করেছে।
কৈলাস কালক্ষেপ না করে ওই ঘটনার কথা জানিয়ে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহকে চিঠি লেখেন। পাশাপাশিই তিনি ফোনেও কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলেন। বিজেপি সূত্রের খবর, কৈলাস কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে জানান, পশ্চিমবঙ্গে যে আইনশৃঙ্খলা পুরোপুরি ভেঙে পড়েছে, এই ঘটনাই তার প্রমাণ। সুনীলের গাড়ির উপর ‘হামলা’র অভিযোগের পাশাপাশি নড্ডার গাড়ির উপর হামলার ঘটনার কথাও উল্লেখ করেন কৈলাস। দু’টি ঘটনাকেই ‘দৃষ্টান্ত’ হিসেবে তুলে ধরে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে অভিযোগ করেন বিজেপি-র এই শীর্ষনেতা। তাঁর অভিযোগের প্রেক্ষিতেই সুনীলকে কেন্দ্রীয় নিরাপত্তা দেওয়ার ব্যবস্থা করা হচ্ছে বলে বিজেপি সূত্রের খবর।
আরও পড়ুন: সুনীলের গাড়িতে ‘হামলা’, শাহকে চিঠি, ফোনে কৈলাসের
আরও পড়ুন: শুভেন্দু আসার আগে হেস্টিংসে গোলমাল, বিক্ষোভ তৃণমূলের
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy