কাঞ্চনজঙ্ঘা অভিযানের আগে কলকাতা বিমানবন্দরে বিপ্লব বৈদ্য ও কুন্তল কাঁড়ার। ছবি: ফেসবুকের সৌজন্যে।
‘স্পট থেকে এসওএস করছি। ইমিডিয়েট অ্যাকশন নে। নইলে কুন্তলকে বাঁচানো যাবে না। বিপ্লবদার জন্যও রেস্কিউ ডাক’।
বুধবার বিকেল ৪টে নাগাদ কাঞ্চনজঙ্ঘার প্রায় ৮২০০ মিটার উপর থেকে বন্ধুর মোবাইলে পৌঁছেছিল অভিযাত্রী রুদ্রপ্রসাদ হালদারের বার্তা। আর বৃহস্পতিবার ক্যাম্প টু-এ পৌঁছে সেই রুদ্রপ্রসাদের আক্ষেপবার্তা: ‘বিপ্লবদা ও কুন্তলকে ফেরাতে না-পারার দুঃখ সারা জীবন কুরে কুরে খাবে।’
চার বাঙালি পর্বতারোহীর কাঞ্চনজঙ্ঘা (৮৫৮৬ মিটার) জয়ের খবর এসেছিল বুধবার সকালেই। তার পর থেকে একের পর এক দুঃসংবাদ: ক্যাম্প ফোর পর্যন্ত কুন্তল কাঁড়ার-বিপ্লব বৈদ্যের নামতে না-পারা, অভিযাত্রী রমেশ রায়ের তুষারক্ষত, কুন্তলদের উদ্ধারের ব্যর্থ প্রচেষ্টা...। বৃহস্পতিবার অবশ্য ইছাপুরের রমেশকে নিয়ে ক্যাম্প ফোর থেকে ক্যাম্প টু-এ নিরাপদে নেমে এসেছেন বেঙ্গল পুলিশের কর্মী, সোনারপুরের রুদ্রপ্রসাদ। মেসেজে লিখেছেন, ‘আমি ভাল আছি। তবে রমেশদাকে কাঠমান্ডু হাসপাতালে ভর্তি করাতে হবে। কিন্তু সামিট ক্যাম্প, ক্যাম্প থ্রি এবং টু থেকে তিন-তিন বার হেলিকপ্টার এসে ফিরে গিয়েছে। কাল (শুক্রবার) সকাল-দুপুরে আবহাওয়া ভাল থাকলে কাঠমান্ডু নিয়ে যাবই।’
দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯
২০১৪ সালের ২০ মে কাঞ্চনজঙ্ঘার প্রধান শৃঙ্গ জয়ের পরে কাঞ্চনজঙ্ঘা ওয়েস্ট বা ইয়ালুংখাংয়ের পথে পা বাড়িয়ে বিপদে পড়েছিলেন বাংলার পর্বতারোহী ছন্দা গায়েন। দুই শেরপাকে নিয়ে চিরতরে নিখোঁজ হয়ে যান তিনি। সেই শোকস্মৃতি ফের উস্কে দিয়ে কাঞ্চনজঙ্ঘাতেই অভিযান চালাতে গিয়ে উচ্চতাজনিত অসুস্থতায় মৃত্যু হল দুই বাঙালি পর্বতারোহী— হাওড়ার কুন্তল (৪৬) এবং মাদুরদহের বিপ্লব (৪৮)-এর। বেস ক্যাম্পে নেপাল সরকারের লিয়াজঁ অফিসার সংবাদ সংস্থা পিটিআই-কে জানান, আট হাজার মিটার উঁচুতে ওই দুই অভিযাত্রীর মৃত্যু হয়। রুদ্রপ্রসাদ জানান, দীর্ঘ সামিট পুশের ক্লান্তি, অক্সিজেন ও জলের অভাবেই হার মানতে হয়েছে ওই দুই এভারেস্টজয়ী পর্বতারোহীকে। তুষারক্ষতে আক্রান্ত রুদ্র ও রমেশ। পঞ্চম অভিযাত্রী শেখ সাহাবুদ্দিন সুস্থ আছেন।
নির্মল পুরজা নামে অন্য দলের এক অভিযাত্রী ফেসবুকে জানান: ৮৪৫০ মিটার উঁচুতে তাঁরা প্রথমে বিপ্লবকে দেখতে পান। বিপ্লবের অক্সিজেন শেষ হয়ে গিয়েছিল। নির্মল তাঁদের বাড়তি অক্সিজেন তাঁকে দিয়ে আরও ১৫০ মিটার নেমে দেখেন, কুন্তলেরও অক্সিজেন শেষ। তিনি নিজের অক্সিজেন তাঁকে দিয়ে দেন। রেডিয়োয় যোগাযোগ করে আরও অক্সিজেন চেয়ে পাঠান। নির্মল লিখেছেন, তাঁদের চোখের সামনেই মৃত্যু হয় কুন্তলের। বিপ্লবকে নিয়ে নামতে থাকেন তাঁরা। কিন্তু সব থেকে সমর্থ শেরপাও অসুস্থ হয়ে পড়তে থাকেন। নির্মলের আক্ষেপ, সেই সময় কাঞ্চনজঙ্ঘায় অন্তত ৫০ জন অভিযাত্রী ছিলেন। সকলে সাহায্য করতে এগিয়ে এলে কুন্তল-বিপ্লবকে হয়তো বাঁচানো যেত।
আট হাজারের বেশি উচ্চতায় থেকে যাওয়া কুন্তল-বিপ্লবকে কী ভাবে উদ্ধার করা সম্ভব, তা নিয়ে চিন্তায় বাংলার পর্বতারোহী মহল। পর্বতারোহী বসন্ত সিংহরায় বলছেন, ‘‘বেঁচে থাকলে উদ্ধার করাটা তুলনায় সহজ হত। দেহ নামিয়ে আনা মুশকিল। কারণ, দু’টি দেহ নামাতে সাত-আট জন শেরপার প্রয়োজন হয়।’’ উদ্ধারকাজ নিয়ে আয়োজক সংস্থার সঙ্গে কথাবার্তা চালাচ্ছেন পর্বতারোহী মলয় মুখোপাধ্যায়। তিনি বলছেন, ‘‘এই ওয়েদার উইন্ডোর মধ্যে ওদের (কুন্তল-বিপ্লব) নামিয়ে আনতে হবে। নইলে গোটা একটা বছর দেহ উদ্ধারের আশা পিছিয়ে যাবে। সেই সঙ্গে লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়বে খরচের পরিমাণ।’’ ক্যাম্প টু-এ বসে একই চিন্তায় রয়েছেন রুদ্রপ্রসাদ। এ দিন তাঁর মেসেজ, ‘যা সেট আপ রয়েছে, তাতে সব চেয়ে কম খরচে উদ্ধার করা সম্ভব হবে। ক্যাম্প থ্রি পর্যন্ত দু’জনের দেহ আনতেই ২০ লক্ষ নেপালি টাকা লাগবে। তার পরে হেলিকপ্টারে কাঠমান্ডু। এখনই কিছু না-করলে বছরের পর বছর চলে যাবে।’
দেহ উদ্ধারে সব রকম সাহায্যের আশ্বাস দিয়েছে রাজ্য সরকার। ক্রীড়ামন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস বলেছেন, ‘‘আমরা লোক পাঠাচ্ছি।’’ ক্রীড়া ও যুবকল্যাণ সচিব অজিতরঞ্জন বর্ধন বলেছেন, ‘‘নেপাল সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ করে সরকারি বিধি অনুযায়ী উদ্ধারকাজ শুরু করতে চলেছে রাজ্য সরকার। দু’জন আধিকারিককে কাঠমান্ডু পাঠানো হচ্ছে।’’ তবে কুন্তল-বিপ্লবের দেহ ক্যাম্প ফোরের উপরে থাকায় নতুন করে সেখানে শেরপা পাঠানো কতটা সম্ভব এবং আবহাওয়া কতটা অনুকূল থাকবে, সেই প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy