ডায়মন্ড হারবারে তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘সেবাশ্রয়’ সমাপ্ত হল বৃহস্পতিবার। ৭৫ দিন ধরে এই প্রকল্প চলেছে। নিজের কেন্দ্রে বিধানসভা এলাকা ধরে ধরে সাধারণ মানুষের কাছে বিনামূল্যে স্বাস্থ্য পরিষেবা পৌঁছে দিয়েছেন সাংসদ অভিষেক। এই ক’দিনে সেবাশ্রয় থেকে ১২ লক্ষের বেশি মানুষ পরিষেবা পেয়েছেন। জটিল স্নায়ুর রোগ থেকে শুরু করে হৃদ্যন্ত্রের অস্ত্রোপচার— সমস্ত রকম রোগের চিকিৎসার বন্দোবস্ত করে দিয়েছেন সাংসদ অভিষেক। দূরদূরান্ত থেকে ‘সেবাশ্রয়ে’ এসেছেন মানুষ। এমনকি, ভিন্রাজ্য থেকেও কেউ কেউ এসেছেন।
অভিষেকের দফতরের দেওয়া পরিসংখ্যান বলছে, ‘সেবাশ্রয়’ ক্যাম্পে গত ৭৫ দিনে পরিষেবা পেয়েছেন মোট ১২ লক্ষ ৩৫ হাজার ৭৭৩ জন। এই ৭৫ দিনের মধ্যে ৭০ দিন সাধারণ ক্যাম্প এবং পাঁচ দিন মেগা ক্যাম্পের আয়োজন করা হয়েছিল। ২ জানুয়ারি থেকে ‘সেবাশ্রয়’ শুরু করেছিলেন অভিষেক।
আরও পড়ুন:
‘সেবাশ্রয়’-এর সমাপ্তিতে উল্লেখযোগ্য কিছু পরিষেবার কথা তুলে ধরা হয়েছে অভিষেকের দফতরের তরফে। এই ক্যাম্প থেকে ন’বছর বয়সি বালকের হৃদ্যন্ত্রের অস্ত্রোপচারের বন্দোবস্ত করে দেওয়া হয়। কলকাতার হাসপাতালে অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে স্পাইনাল টিউমার থেকে নিস্তার পান ২১ বছর বয়সি যুবক। জটিল স্নায়ুর রোগে আক্রান্ত তিন বছরের শিশুর চিকিৎসার বন্দোবস্ত করে দেওয়া হয় বেঙ্গালুরুতে। এ ছাড়া, ‘সেবাশ্রয়ের’ মাধ্যমেই স্তন ক্যানসার থেকে সদ্য সেরে ওঠা মহিলার ওষুধ প্রতি মাসে সরবরাহের দায়িত্ব নিয়েছেন অভিষেক। তাঁর উদ্যোগে কলকাতায় এক তরুণীর শরীরের অস্বাভাবিক লাম্পসের চিকিৎসা শুরু হয়েছে।
এ ছাড়াও, ‘সেবাশ্রয়’ ক্যাম্পে অনেক রোগীকে কানের যন্ত্র দেওয়া হয়েছে। ছানির অস্ত্রোপচার এবং বিনামূল্যে চশমা দেওয়া হয়েছে অনেককে। একাধিক শারীরিক পরীক্ষা এই ক্যাম্পে করা হয়েছে সম্পূর্ণ বিনামূল্যে। সাত বছরের এক শিশুর কথাও আলাদা করে উল্লেখ করেছে অভিষেকের দফতর। ওই শিশু খেলতে খেলতে একটি আস্ত কয়েন গিলে ফেলেছিল। তার পেট থেকে কয়েনটি বার করা হয়েছে ‘সেবাশ্রয়’-এর সাহায্যেই। গঙ্গাসাগর মেলা চলাকালীন ভিন্রাজ্যের অনেক পুণ্যার্থী ‘সেবাশ্রয়’ ক্যাম্প থেকে চিকিৎসা পরিষেবা পেয়েছেন। চিকিৎসা হয়েছে ভিন্রাজ্যের পরিযায়ী শ্রমিকদেরও।
নতুন বছরে অভিষেকের ‘সেবাশ্রয়’ শুরু হতেই তা নতুন বিতর্কের জন্ম দিয়েছিল। প্রশ্ন উঠেছিল, কেন ডায়মন্ড হারবারে নিজের কেন্দ্রে এমন পৃথক উদ্যোগ নিয়েছেন তৃণমূলের ‘সেনাপতি’? রাজ্য সরকারের তরফেই তো বিনামূল্যে চিকিৎসা পরিষেবা দেওয়া হয়। একাধিক স্বাস্থ্য প্রকল্পও রয়েছে রাজ্যের। তবে কি নিজের কেন্দ্রে আলাদা করে শিবির বসিয়ে ‘সমান্তরাল’ কোনও স্বাস্থ্যব্যবস্থা চালু করতে চান অভিষেক? সে প্রশ্নও উঠেছিল। কিছু দিন আগে নেতাজি ইন্ডোরের সভা থেকে এই বিতর্কে জল ঢেলে দেন অভিষেক স্বয়ং। তিনি জানান, গত লোকসভা নির্বাচনে ডায়মন্ড হারবারের মানুষ তাঁকে যে পরিমাণে ভোট দিয়েছেন, যে ভাবে তাঁর উপর সকলে আস্থা রেখেছেন, তার পরে সেখানকার মানুষদের জন্য এই ধরনের কিছু করার তাগিদ তিনি অনুভব করেছিলেন। সেই ভাবনা থেকেই ‘সেবাশ্রয়’ ক্যাম্পের সূচনা। রাজ্য সরকারের স্বাস্থ্য প্রকল্পগুলির সঙ্গে এর কোনও বিরোধ নেই। বরং, উভয়ের লক্ষ্যই এক। আরও বেশি সংখ্যক মানুষের কাছে পরিষেবা পৌঁছে দেওয়া। উল্লেখ্য, লোকসভা নির্বাচনে ডায়মন্ড হারবারে ১০ লক্ষের বেশি ভোট পেয়েছিলেন অভিষেক।