মইনুল হাসান
শত্রু শিবিরের সঙ্গে যোগাযোগ রাখলে অপরাধ হয়। দলের রাজনৈতিক লাইন ভাঙলে মাসুল দিতে হয়। অস্বচ্ছ কাজকর্মে জড়ালে প্রশ্ন ওঠে। অল্প সময়ে হঠাৎ বড়লোক হয়ে উঠলেও অভিযোগ ওঠে। কিন্তু পারিবারিক সম্পত্তি? তার দায় নিয়েও যে কমিউনিস্ট পার্টিতে তদন্ত কমিশন গড়া যায়, দেখিয়ে দিল বঙ্গ সিপিএম!
দলের রাজ্য কমিটির সদস্য এবং প্রাক্তন সাংসদ মইনুল হাসানের পারিবারিক সম্পত্তি নিয়ে অভিযোগের তদন্তের জন্য এক সদস্যের কমিশন গড়ার সিদ্ধান্ত নিল সিপিএম! আলিমুদ্দিনে দলের রাজ্য কমিটির বৈঠকে মঙ্গলবার লিখিত ভাবে জানিয়ে দেওয়া হল, ওই তদন্তের দায়িত্ব পালন করবেন রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য মৃদুল দে। আচমকা এমন সিদ্ধান্তে ব্যথিত মইনুল দ্রুত রাজ্য কমিটিতে লিখিত ভাবেই জানিয়েছেন, দল যদি মনে করে তাঁর পরিবারের সম্পত্তি থাকা অন্যায় এবং সেই দায় তাঁর উপরে বর্তায়, তা হলে কমিউনিস্ট পার্টি থেকে তাঁর সদস্যপদই খারিজ করে দেওয়া হোক! তদন্ত করে তাঁকে হেয় না করলেই ভাল। অপ্রত্যাশিত এই ঘটনাপ্রবাহে পরিস্থিতি গম্ভীর হয়ে উঠেছে সিপিএম শিবিরের অন্দরে।
বিনা মেঘে বজ্রপাতের মতোই এ দিন আলিমুদ্দিনে হঠাৎ ঘটেছে মইনুল-কাণ্ড। দু’দিনের রাজ্য কমিটির বৈঠকের শুরুতে রাজ্য সম্পাদক বিমান বসুর পেশ করা রিপোর্টে বলা হয়, ‘রাজ্য কমিটির সদস্য মইনুল হাসানের পারিবারিক সম্পত্তি সংক্রান্ত অভিযোগের তদন্তের ভার দেওয়া হয়েছে রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য মৃদুল দে’কে’। রিপোর্ট হাতে পাওয়ার আগে মুর্শিদাবাদের মইনুল এ নিয়ে বিন্দুবিসর্গও জানতেন না! জানতেন না দলে তাঁর অধিকাংশ সহকর্মীও। তদন্তের নির্দেশের চেয়েও তাঁদের আরও বেশি হতবাক করে দিয়েছে তদন্তের কারণ! পরম্পরাগত ভাবে সমৃদ্ধ পরিবারের সন্তান মইনুল হঠাৎ কী অপরাধ করলেন, প্রশ্ন তুলছেন দলের বহু নেতা। প্রাথমিক ধাক্কা সামলে মইনুলও চিঠি দেন রাজ্য সম্পাদককে। যেখানে তিনি দল থেকে অব্যাহতি চেয়েছেন।
দলের অনুগত সৈনিক হিসাবে মইনুল অবশ্য প্রকাশ্যে এই নিয়ে মুখ খুলতে চাননি। আনুষ্ঠানিক ভাবে মন্তব্য করেনি সিপিএমও। তবে দলের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর এক সদস্যের কথায়, “অভিযোগ এলে খোঁজখবর করে দেখাই শৃঙ্খলাপরায়ণ যে কোনও দলের রীতি।” সিপিএম সূত্রের খবর, রাজ্য কমিটির বৈঠকে এ দিনই বলার সুযোগ পান মইনুল। তাঁর চিঠির বক্তব্যের সুরেই সেখানে তিনি প্রশ্ন তুলেছেন, কী অপরাধে তাঁকে হঠাৎ এখন কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হচ্ছে? তাঁর পরিবার কয়েক পুরুষ ধরে সমৃদ্ধশালী এবং তাতে লুকোনোরও কিছু নেই। তা-ও তিনি প্রথম থেকেই কমিউনিস্ট পার্টির সর্বক্ষণের কর্মী হয়েছেন। তবু দল যদি মনে করে তিনি অপরাধী, তা হলে প্রাথমিক সদস্যপদই ফিরিয়ে নিক!
মইনুলের জেলা মুর্শিদাবাদের সিপিএমের একাংশ এমন ঘটনার জন্য আঙুল তুলছে ওই জেলারই এক গুরুত্বপূর্ণ নেতার দিকে। ওই অংশের বক্তব্য, কয়েক মাস আগে লোকসভা নির্বাচনে মুর্শিদাবাদ কেন্দ্র থেকে মইনুলের টিকিট পাওয়া আটকাতে সক্রিয় ছিল দলেরই একাংশ। শেষ পর্যন্ত আসনটি সিপিএমই জিতেছে। স্পষ্টবক্তা মইনুল দলের মধ্যে কারও কারও বিরাগভাজন হয়ে পড়াতেই এমন তদন্তের সিদ্ধান্ত বলে ওই অংশের ধারণা। বহরমপুর এবং সল্টলেকের বাড়িতে বই পরিবৃত হয়েই থাকতে ভালবাসেন মইনুল। মুসলিম সমাজ ও সংস্কারের উপরে নিজেও একাধিক বই লিখেছেন। তা-ই নিয়ে বিতর্কও হয়েছে। কিন্তু পারিবারিক সম্পত্তি নিয়ে প্রশ্ন অভিনব! দলের রাজ্য কমিটির এক সদস্যের কথায়, “ওই রকম পরিবার থেকে এসেও কমিউনিস্ট পার্টি করায় দলের গর্বিত হওয়া উচিত! তার বদলে এত দিন পরে হঠাৎ উল্টো সিদ্ধান্ত!”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy