Advertisement
২৪ নভেম্বর ২০২৪
Mamata Banerjee

​​​​​​​দিদি হয়ে গেলেন ভাইপোর পিসি! কটাক্ষ মোদীর

—ফাইল চিত্র।

—ফাইল চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৮ মার্চ ২০২১ ০৬:২৬
Share: Save:

অনেক হয়েছে খেলা। এ বার খেলা খতম হবে!

বিধানসভা ভোট ঘোষণার পরে রাজ্যে প্রথম প্রচারে এসে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘খেলা হবে’ স্লোগানকে এ ভাবেই পাল্টা বিঁধলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। সেই সঙ্গেই ফের টেনে আনলেন ‘পিসি-ভাইপো’র প্রসঙ্গ। ব্রিগেড সমাবেশের মঞ্চ থেকে মমতার উদ্দেশে মোদীর কটাক্ষ, ‘‘দিদির পরিবর্তনের ডাকে বাংলার মানুষ সাড়া দিয়েছিলেন। মানুষ ১০ বছর পরে জানতে চাইছেন, দিদি হিসেবে আপনাকে বেছে নিয়েছিলেন সকলে। কিন্তু আপনি নিজেকে শুধু ভাইপোর পিসি হিসেবেই সীমাবদ্ধ রাখলেন! কংগ্রেসের ভাই-ভাইপো নিয়ে পরিবারতন্ত্রের পথেই আপনি কেন হাঁটলেন?’’

পেট্রল, ডিজ়েল, রান্নার গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদে কয়েক দিন আগে ই-স্কুটি চালিয়ে নবান্নে যাতায়াত করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা। এ বার বিধানসভা ভোটে ভবানীপুরের বদলে নন্দীগ্রাম থেকে প্রার্থী হওয়ারও সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তৃণমূল নেত্রী। এই দুই ঘটনাকে একসঙ্গে গেঁথে রবিবার কটাক্ষ শোনা গিয়েছে মোদীর মুখে। তাঁর মন্তব্য, ‘‘কিছু দিন আগে স্কুটি সামলাচ্ছিলেন। সবাই ভয় পাচ্ছিলেন, আপনি আঘাত না পান। ভাগ্যিস পড়ে যাননি। নইলে যে রাজ্যে স্কুটি তৈরি হয়েছে, সেই রাজ্যকেই শত্রু বানিয়ে ছাড়তেন! কিন্তু ভবানীপুর যেতে যেতে নন্দীগ্রামের দিকে ঘুরে গিয়েছে আপনার স্কুটি। আমরা চাই না, কেউ আঘাত পান। কিন্তু স্কুটি যদি নন্দীগ্রামে গিয়ে পড়ে যায়, তখন আমরা আর কী করব!’’ মোদীর মঞ্চেই তখন ছিলেন নন্দীগ্রামের বিজেপি প্রার্থী শুভেন্দু অধিকারী।

মোদীর এ দিনের সমাবেশে ভিড় হয়েছিল ভালই। সেই সঙ্গেই ছিল বিশৃঙ্খলাও। কয়েক দিন আগে হুগলির সাহাগঞ্জে প্রধানমন্ত্রীর সভাতেও যা দেখা গিয়েছিল। কলকাতার বিভিন্ন প্রান্ত-সহ রাজ্যের নানা জায়গা থেকেই বিপুল সংখ্যক গাড়ি ব্রিগেডে এনেছিল বিজেপি। ভিড় দেখে আপ্লুত মোদী এ দিন বলেছেন, ‘‘রাজনৈতিক জীবনে অনেক সভা-সমাবেশে গিয়েছি। কিন্তু এত বড় সমাবেশের আশীর্বাদ পাইনি। হেলিকপ্টার থেকে দেখছিলাম। ময়দানে জায়গা তো নেই-ই, রাস্তায় লোক উপচে পড়ছে। মনে হয় না, ওঁরা পৌঁছতে পারবেন। সকলকে প্রণাম জানাই।’’ নিরাপত্তা বেষ্টনীর জন্য প্রধানমন্ত্রীর মঞ্চের সামনে অনেকটা জায়গা অবশ্য ছেড়ে রাখা হয়েছিল। মাঠে ছিল একাধিক ছাউনি এবং এলইডি স্ক্রিন। সব মিলিয়ে বাম ও কংগ্রেসের পাল্টা দাবি, গত রবিবার জোটের ব্রিগেড ভিড়ে ও মেজাজে বিজেপির চেয়ে এগিয়ে ছিল।

শুধু ক্ষমতার পরিবর্তন নয়, রাজ্যে তাঁরা যে ‘আসল পরিবর্তন’ চাইছেন, হুগলির পরে ব্রিগেডে এ দিন তার সবিস্তার ব্যাখ্যা দিয়েছেন মোদী। সেই সূত্রেই টেনে এনেছেন দুর্নীতি, সিন্ডিকেট, তোলাবাজির প্রসঙ্গ। মোদী বলেছেন, ‘‘আমি জানি, এরা বড় খেলোয়াড়। খুব অভিজ্ঞ! খুব খেলেছে। খেলে খেলে বাংলার গরিবদের লুটেছে। কিচ্ছু ছাড়েনি। আমপান-এর টাকা লুঠ করেছে। মানুষের জীবন নিয়ে খেলেছে। তোলাবাজি, সিন্ডিকেট অনেক কিছু খেলা খেলেছে।’’ সেখানেই না থেমে তৃণমূলকে কটাক্ষ করে মোদী বলেন, ‘‘বাংলায় এত দুর্নীতি হয়েছে যে ‘করাপশন অলিম্পিক’ (দুর্নীতির অলিম্পিক) করা যাবে।’’ তার পরেই মোদীর আহ্বান, ‘‘খেলা শেষ হবে এ বার। খেলা খতম! উন্নয়ন শুরু।’’

সাম্প্রতিক কালে মোদী-অমিত শাহদের আক্রমণ করতে গিয়ে নানা শব্দবন্ধ ব্যবহার করেছেন মমতা। সেই প্রসঙ্গও এ দিন তুলেছেন মোদী। তাঁর পাল্টা বক্তব্য, ‘‘আমাদের শাস্ত্রে বলা আছে, কেউ যখন খুব ক্রোধে বা হতাশায় ভোগে, তখন মতিভ্রম হয়। কখনও আমাকে রাবণ, কখনও দানব-দৈত্য, কখনও গুন্ডা বলছেন।এত রাগ কেন দিদি? আপনার দল এবং আপনার সরকারের ছড়ানো পাঁকেই আজ বাংলায় পদ্ম ফুটছে! গণতন্ত্রের নামে বাংলায় লুঠতন্ত্রকে প্রশ্রয় দিয়েছেন, জাত-ধর্মের নামে বিভেদের রাজনীতি করেছেন, তাই আজ বাংলায় পদ্ম ফুটছে।’’ এই সূত্রেই মোদীর মন্তব্য, ‘‘দিদিকে অনেক দিন ধরে চিনি। বামপন্থীদের বিরুদ্ধে লড়া দিদি এমন ছিলেন না। কিন্তু আজ দিদির রিমোট কন্ট্রোল অন্যের হাতে!’’ রাজনৈতিক শিবিরের অনেকের মতে, নাম না করে মোদীর এই মন্তব্যের ইঙ্গিত ছিল ভোট-কুশলী প্রশান্ত কিশোর, যুব তৃণমূল সভাপতি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের দিকে। তৃণমূলের ‘বাংলা তার নিজের মেয়েকেই চায়’ শীর্যক প্রচারের প্রতি ইঙ্গিত করেও মোদী এ দিন বলেছেন, ‘‘আপনি (মমতা) শুধু বাংলার নন, গোটা ভারতেরই মেয়ে।’’

সিপিএম এবং তৃণমূলের অভিযোগ, কেন্দ্রীয় কৃষি আইন থেকে শুরু করে মোদী সরকারের নানা পদক্ষেপই অন্বানী-আদানীদের লাভের কথা মাথায় রেখে। তাঁরাই মোদীর ‘বন্ধু’। কারও নাম উল্লেখ না করে মোদী এ দিন পাল্টা দাবি করেছেন, তিনি নিজে দারিদ্র ও প্রতিকূলতার সঙ্গে লড়াই করে বড় হয়েছেন। গরিব মানুষই তাঁর ‘বন্ধু’। সেই ‘বন্ধু’দের জন্য কেন্দ্রীয় সরকারের গুচ্ছ প্রকল্পের বর্ণনাও করেছেন তিনি। যদিও বিরোধীরা পাল্টা খোঁচা দিয়েছে, গরিবের ‘বন্ধু’ হলে তেল ও গ্যাসের অস্বাভাবিক দাম নিয়ে একটা কথাও কেন বলেননি প্রধানমন্ত্রী?

তোলাবাজি, সিন্ডিকেট, কাটমানির রাজত্বের অবসান ঘটানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েই ব্রিগেড থেকে এ দিন মোদীর আহ্বান, ‘‘ভয় পাবেন না। নির্ভয়ে বিজেপিকে ভোট দিন। ভয়মুক্ত বাংলা গড়ব আমরা।’’

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy