(বাঁ দিক থেকে) বিকাশ রায়চৌধুরী, চন্দ্রনাথ সিংহ, অভিজিৎ সিংহ ও রাজু সিংহ। বিধানসভায় ডেপুটি স্পিকার আশিস বন্দ্যোপাধ্যায়ের ঘরে। মঙ্গলবার। — নিজস্ব চিত্র।
সিবিআইয়ের গরু পাচার মামলায় জামিন পেয়েছেন অনুব্রত মণ্ডল। মঙ্গলবার সুপ্রিম কোর্টে বীরভূমের তৃণমূল নেতা অনুব্রতের জামিন মামলার শুনানি ছিল। শুনানি শেষে অনুব্রতের জামিন মঞ্জুর করে বিচারপতি বেলা এম ত্রিবেদী এবং বিচারপতি সতীশচন্দ্র শর্মার ডিভিশন বেঞ্চ। মঙ্গলবার ডিভিশন বেঞ্চ অনুব্রতের জামিন মঞ্জুর করার পরেই বিধানসভায় ডেপুটি স্পিকার আশিস বন্দ্যোপাধ্যায়ের ঘরে বৈঠকে বসলেন বীরভূম জেলা তৃণমূলের বিধায়কেরা। গত শনিবার প্রাক্তন মন্ত্রী বিশ্বনাথ চৌধুরীর প্রয়াণের কারণে শোকপ্রস্তাবের পর বিধানসভার অধিবেশন শেষ বলে ঘোষণা করে দেন স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়। তার পরেই বিধানসভায় খবর আসে, জামিন পেয়েছেন বীরভূম জেলা তৃণমূলের প্রাক্তন সভাপতি অনুব্রত। এই খবর জানার পরেই বিধানসভার দোতলায় ডেপুটি স্পিকারের ঘরে একে একে একত্রিত হতে শুরু করেন বীরভূম জেলার তৃণমূল বিধায়কেরা। সেখানেই তাঁরা সংক্ষিপ্ত একটি বৈঠক করেন বলে তৃণমূল সূত্রে খবর।
এই বৈঠকে ছিলেন রাজ্যের ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্পমন্ত্রী চন্দ্রনাথ সিংহ, সিউড়ির বিধায়ক বিকাশ রায়চৌধুরী, লাভপুরের বিধায়ক অভিজিৎ সিংহ এবং নলহাটির বিধায়ক রাজু সিংহ। বৈঠক শেষে সিউড়ির বিধায়ক বিকাশ বলেন, ‘‘অনুব্রত মণ্ডল বীরভূম জেলার এমন একজন নেতা, যিনি মানুষের হৃদয়ে রয়েছেন।’’ মন্ত্রী চন্দ্রনাথ বলেন, ‘‘তিনি যে অবস্থায় ছিলেন, সেই অবস্থাতেই যেন ফিরে আসেন। কর্মীরাও তৈরি হয়ে আছেন যে, অনুব্রত মণ্ডলের নেতৃত্বে আবারও রাজনীতি করার সুযোগ পাবেন।’’ অনুব্রতের জামিন প্রসঙ্গে কথা বলতে গিয়ে লাভপুরের তৃণমূল বিধায়ক অভিজিৎ বলেছেন, ‘‘অনুব্রত মণ্ডল আবার ফিরে এলে বীরভূমের ‘টিম কেষ্ট’ আবার সক্রিয় হবে। তাঁর দল প্রস্তুত রয়েছে। সেই টিম নিয়েই তো আমরা পঞ্চায়েত এবং লোকসভা ভোটে কাজ করলাম। তিনি ফিরলে বীরভূমে দল আরও শক্তিশালী হবে।’’ তবে বৈঠকে আলোচিত অভ্যন্তরীণ বিষয় নিয়ে কিছুই জানাতে চাননি তাঁরা।
তবে অনুব্রতের জামিন প্রসঙ্গে বীরভূম জেলার দুবরাজপুর থেকে নির্বাচিত বিজেপির বিধায়ক অনুপ সাহা বলেন, ‘‘শুনলাম অনুব্রত মণ্ডল সিবিআইয়ের একটি মামলা থেকে জামিন পেয়েছেন। সেই মামলাটি আবার গরু পাচারের সঙ্গে যুক্ত থাকার অভিযোগে তাঁর বিরুদ্ধে করা হয়েছিল। এ ছাড়াও ইডিরও একাধিক মামলা তাঁর বিরুদ্ধে রয়েছে। যত দূর জানি, এখনই জেল থেকে ছাড়া পাচ্ছেন না তিনি। তাই তৃণমূল নেতৃত্বের খুব বেশি উল্লাস করার কোনও কারণ দেখতে পাচ্ছি না।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘অনুব্রত মণ্ডল গত দু’বছর ধরে জেলে রয়েছেন। তিনি যে দুর্নীতি চক্র বীরভূম জেলা জুড়ে চালাতেন, তা কিন্তু এখনও সক্রিয় রয়েছে। রাজ্যের ক্ষমতা থেকে তৃণমূলকে সরাতে না পারলে সেই সব দুর্নীতির চক্র বন্ধ করা যাবে না। তাই কে জামিন পেল, আর কে পেল না, তা নিয়ে না ভেবে আমাদের লক্ষ্য তৃণমূল সরকারকে রাজ্যের ক্ষমতা থেকে উৎখাত করা।’’
অন্য দিকে, বীরভূম জেলা কংগ্রেসের সভাপতি তথা প্রাক্তন বিধায়ক মিল্টন রশিদ বলেন, ‘‘সুপ্রিম কোর্ট কেষ্টদাকে জামিন দিয়েছে। এ নিয়ে নোংরা বা খারাপ কথা বলার অভিপ্রায় আমাদের নেই। ওঁর মেয়ের জামিন হয়নি বলেই শুনলাম। তবে জামিন মানে যে কেষ্টদা গরু পাচারের সঙ্গে যুক্ত নন, এমনটা নয়। বিচার শেষ হলেই বোঝা যাবে যে, কোনও অভিযোগ তাঁর বিরুদ্ধে প্রমাণিত হয়েছে কি না।’’
উল্লেখ্য, ২০২২ সালের অগস্ট মাসের মাঝামাঝি সময় বীরভূমের নিচুপট্টি এলাকায় নিজের বাড়ি থেকেই গ্রেফতার হয়েছিলেন অনুব্রত। তাঁকে প্রথমে গ্রেফতার করে সিবিআই। প্রথমে আসানসোল সংশোধনাগারে রাখা হয়েছিল কেষ্টকে। পরে তিহাড় জেলে নিয়ে যাওয়া হয় তৃণমূল নেতাকে। তখন থেকে তিহাড়েই বন্দি অনুব্রত। একই মামলায় ওই বছরের নভেম্বর মাসে ইডিও তাঁকে গ্রেফতার করেছিল। সিবিআইয়ের মামলায় জামিন চেয়ে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছিলেন তিনি। সেই মামলার শুনানিতে তাঁর পক্ষের আইনজীবী সওয়াল করার সময় বার বার জানিয়েছেন, গরু পাচার মামলায় অন্য অভিযুক্তেরা ছাড়া পাচ্ছেন। কিন্তু তাঁর মক্কেলকে আটকে রাখা হচ্ছে। কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার তরফে অনুব্রতের জামিনের বিরোধিতা করা হয় বার বার। সওয়ালে তারা জানায়, এই মামলায় অনুব্রতই মূল অভিযুক্ত। জামিন পেলে তিনি সাক্ষ্যপ্রমাণ নষ্ট করতে পারেন। সেই কারণে বেশ কয়েক বার বীরভূমের তৃণমূল নেতার জামিন খারিজ হয়।
মঙ্গলবার জামিন মামলার শুনানিতেও অনুব্রতের আইনজীবী মুকুল রোহতগি আদালতে বলেন, ‘‘এই মামলায় অন্যতম অভিযুক্ত এনামুল হক জামিন পেয়েছেন। কিন্তু কিসের ভিত্তিতে আমার মক্কেলকে আটকে রাখা হচ্ছে? এখনও বিচার প্রক্রিয়া শুরু হয়নি। যদি অভিযোগ থাকে, তবে বিচার প্রক্রিয়া শুরু করুক।’’ বিচারপতি বেলা এম ত্রিবেদীর ডিভিশন বেঞ্চ সিবিআইয়ের উদ্দেশে প্রশ্ন করে, ‘‘কবে থেকে বিচার প্রক্রিয়া শুরু হবে?’’ তার উত্তরে সিবিআইয়ের আইনজীবী এসভি রাজু আদালতে জানান, খুব শীঘ্রই বিচার প্রক্রিয়া শুরু হবে। সওয়াল-জবাব শেষে শর্তসাপেক্ষে অনুব্রতের জামিন মঞ্জুর করে সুপ্রিম কোর্ট। জামিন দেওয়ার সময় শীর্ষ আদালত তিনটি শর্ত দিয়েছে। বলা হয়েছে, অনুব্রতকে পাসপোর্ট জমা রাখতে হবে। পাশাপাশি বিচার প্রক্রিয়া শুরু হলে তাতে সম্পূর্ণ সহযোগিতা করতে হবে এবং তৃতীয়ত, কোনও ভাবেই সাক্ষীদের উপর প্রভাব খাটাতে পারবেন না অনুব্রত।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy