জয়ী বিধায়ককে সংবর্ধনা জানানোর জন্য চিঠি ছাপিয়ে অনুষ্ঠানের আয়োজন হল। কিন্তু সে পথ মাড়ালেনই না বিধায়ক! আমন্ত্রণপত্রে নাম ছিল পুরপ্রধানের। গরহাজির তিনিও।
রবিবার যাকে কেন্দ্র করে অশোকনগরে শাসক দলের গোষ্ঠী কোন্দল ফের খুল্লমখুল্লা। দলের একটি অংশ জানাচ্ছে, উপ পুরপ্রধানের সঙ্গে বিধায়ক-পুরপ্রধানের আকচা-আকচিই নাকি এর কারণ।
দলের অন্দরের এ ধরনের সমস্যা মেটাতে বার বার নির্দেশ দিচ্ছেন মমতা। সুব্রত বক্সি এবং মুকুল রায়কে বিষয়টি দেখতে বলেছেন তিনি। তারপরেও ঘটনা থেকে থেকেই মাথাচাড়া দিচ্ছে।
রবিবার বিকেলে স্থানীয় শহিদ সদনে সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছিল বারাসত সংসদীয় তৃণমূল ছাত্র পরিষদের নামে। আমন্ত্রণ পত্রে লেখা, ‘সমগ্র অনুষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা ও সহযোগিতায় মাননীয়া সাংসদ কাকলি ঘোষদস্তিদার।’
কাকলিদেবী বারাসতের সাংসদ। সংবর্ধনা জানানোর কথা ছিল অশোকনগরের জয়ী বিধায়ক ধীমান রায় ও রাজ্য তৃণমূল ছাত্র পরিষদের সভাপতি জয়া দত্তকে। জয়া এসেছিলেন। তাঁকে সংবর্ধনাও দিয়েছেন কাকলিদেবী। কিন্তু দেখা গেল না ধীমানবাবুকে। তিনি ছাড়াও আমন্ত্রণপত্রে নাম থাকা সত্ত্বেও অনুষ্ঠানে আসেননি অশোকনগর-কল্যাণগড়ের পুরপ্রধান প্রবোধ সরকার সরকার-সহ অন্য কাউন্সিলরেরা। প্রবোধবাবু বিধায়কের ঘনিষ্ঠ বলেই পরিচিত।
উপ পুরপ্রধান সমীর দত্তকে অবশ্য অনুষ্ঠানে দেখা গিয়েছে। ধীমানবাবু-প্রবোধবাবুর সঙ্গে যাঁর সম্পর্ক কার্যত তলানিতে, দলেরই একটি সূত্র জানাচ্ছে সে কথা।
সব মিলিয়ে ঘরোয়া কোন্দল ঢাকা-চাপা দেওয়ার মতো পরিস্থিতিই নেই।
কেন গেলেন না অনুষ্ঠানে?
ধীমানবাবু অবশ্য বলছেন, মায়ের শরীর খারাপ থাকায় চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যেতে হয়েছিল। সে কারণেই নাকি যেতে পারেননি। যদিও তাঁরই ঘনিষ্ঠ লোকজন জানাচ্ছেন, বয়সজনিত কারণে ধীমানবাবুর মা অসুস্থ, এটা ঠিক। তবে রবিবার তাঁকে চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যেতে হয়নি।
বিধায়ক ঘনিষ্ঠ দলের ওই অংশটির দাবি, ধীমানবাবু অনুষ্ঠানে যেতে রাজি ছিলেন। সাংসদের দেওয়া সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে যাবেন না, এমনটা তাঁর ইচ্ছে ছিল না। কিন্তু তিনি চেয়েছিলেন, ওই সভায় যেন সমীরবাবু না থাকেন। থাকলে তিনি যে যাবেন না, সেটা আগেই সাংসদকে ফোনে জানিয়ে দিয়েছিলেন বলেও জানাচ্ছে দলের একটি সূত্র। সমীরবাবু গিয়েছেন। কাজেই বাকিটা সহজে অনুমেয়।
জেলা রাজনীতিতে সমীরবাবু সাংসদের ঘনিষ্ঠ। আর ধীমানবাবুরা জেলা সভাপতি জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের ঘনিষ্ঠ হিসাবেই পরিচিত।
বিধায়কের ঘনিষ্ঠরা জানাচ্ছেন, দীর্ঘ দিন ধরেই প্রাক্তন পুরপ্রধান সমীরবাবুর সঙ্গে ধীমানবাবুদের বিভিন্ন বিষয়কে কেন্দ্র করে বিবাদ প্রকাশ্যে এসেছে। গত পুরসভা ভোটের আগে প্রার্থী নির্বাচন বা পুরপ্রধান নির্বাচন নিয়েও বিবাদ দেখা গিয়েছিল। পুরসভা ভোটে প্রার্থী বাছাই সভায় দু’পক্ষের অনুগামীরা প্রকাশ্য বিবাদে জড়িয়ে পড়েন। পুলিশকে লাঠি চালাতে হয়।
ভোটের পর এ বার সমীরবাবুকে সরিয়ে প্রবোধবাবুকে পুরপ্রধান করা হয়। সমীরবাবু হন উপ পুরপ্রধান। তাঁকে সরিয়ে দেওয়ার পিছনে সমীরবাবু বিধায়কের হাত দেখেছিলেন। দু’পক্ষের বিবাদ এতটাই, যে ভোটের আগে মুখ্যমন্ত্রীকেও হস্তক্ষেপ করতে হয়েছিল। ভোটের প্রচারে হাবরায় এসে প্রকাশ্য সভায় মুখ্যমন্ত্রী জানতে চেয়েছিলেন, ‘‘সমীর আর ঝগড়া করছে না তো?’’
ধীমানবাবুর অনুগামীদের বক্তব্য, এ বার বিধানসভা ভোটে সমীরবাবু ও তাঁর লোকেরা দলীয় প্রার্থীর বিরুদ্ধে কাজ করেছেন। এমনকী, সিপিএম প্রার্থীর সঙ্গে গোপনে সম্পর্ক রেখে চলেছেন। তাঁকে বাড়িতে নিমন্ত্রণ করে খাইয়েছিলেন সমীরবাবু। সমীরবাবুর ওয়ার্ডে ধীমানবাবুকে নিয়ে একটি মাত্র মিছিল করানো হয়েছিল। ঠিক মতো পোস্টার-ফেস্টুন লাগাতে দেওয়া হয়নি। ভোটের ফলেও দেখা গিয়েছে, সমীরবাবুর ওয়ার্ড থেকে তৃণমূল প্রার্থী এ বার পুরসভা ভোটের তুলনায় অনেক কম ভোটে এগিয়ে ছিলেন।
সব মিলিয়ে যে তিক্ততা দীর্ঘ দিন ধরে দানা পাকাচ্ছিল, রবিবার তারই প্রকাশ দেখা গিয়েছে সংবর্ধনা সভায়।
কী বলছেন সমীরবাবু?
তাঁর কথায়, ‘‘আমি যাওয়ায় বিধায়ক যাননি, এমনটা আমি শুনিনি। এটা অপপ্রচার। সকলের সঙ্গেই আমার সুসম্পর্ক। সকলকে নিয়েই আমি চলি।’’ পুরপ্রধান জানাচ্ছেন, তৃণমূল ছাত্র পরিষদের পক্ষ থেকে তাঁকে কেউ আমন্ত্রণ করেননি বলেই তিনি জাননি।
জ্যোতিপ্রিয়বাবু বিষয়টি নিয়ে কোনও মন্তব্য করতে চাননি। কাকলিদেবী বলেন, ‘‘বিধায়ক আমাকে জানিয়েছেন, তিনি অসুস্থ বলে আসতে পারেননি।’’
যা শুনে বিধায়ক আবার বলছেন, ‘‘আমি সম্পূর্ণ সুস্থ। রবিবার সারা দিন ৬টি সভায় গিয়েছি সংবর্ধনা নিতে।’’ পরক্ষণেই অবশ্য বিধায়ক জানাচ্ছেন, ‘‘উনি (সাংসদ) মনে হয় বুঝতে ভুল করেছেন। আসলে আমার মা অসুস্থ।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy