Advertisement
২২ ডিসেম্বর ২০২৪
Uttarakhand

Uttarakhand Avalanche: ‘ভাঙা পায়ের যন্ত্রণা নিয়েই পড়ে ছিলাম তিন দিন’

দুর্গাসপ্তমীর দিন চার বন্ধুর সঙ্গে বিষ্ণুপুর থেকে হিমাচল প্রদেশের ছিটকুলে ট্রেকিংয়ের উদ্দেশ্যে বেরিয়ে পড়েছিলেন।

কলকাতা বিমানবন্দরে মিঠুন দাড়ি। ছবি: সুমন বল্লভ

কলকাতা বিমানবন্দরে মিঠুন দাড়ি। ছবি: সুমন বল্লভ

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৫ অক্টোবর ২০২১ ০৭:২৯
Share: Save:

রাত প্রায় সাড়ে দশটায় কলকাতায় পৌঁছলেন মিঠুন দাড়ি। বিমানবন্দরের ১এ গেট দিয়ে হুইল চেয়ারে করে বেরোনোর সময়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের মুখে মিঠুন বলেন, “কথা বলার মত মানসিক অবস্থায় নেই। বাড়ি ফিরেও ভাল লাগছে না। যাঁরা সঙ্গে গিয়েছিলেন, তাঁদের দেহ কফিনবন্দি হয়ে ফিরছে।”

রবিবার দিল্লি বিমানবন্দরে কলকাতামুখী উড়ানে ওঠার আগে মোবাইলে ধরা হয়েছিল মিঠুন দাড়িকে। ফোনের ও পারে গলায় যন্ত্রণার ছাপ স্পষ্ট। তিনি বলছিলেন, “প্রবল তুষারঝড়ের ধাক্কায় মুখ থুবড়ে পড়েছিলাম। তার পরে ডান পায়ের উপরে এসে পড়েছিল বরফের একটি বড়সড় চাঙড়। অসহ্য যন্ত্রণা। মনে আছে, আমার সঙ্গে থাকা ‘পোর্টার’ দেবেন্দ্র চৌহান বাঁ হাতটা চেপে ধরেছিলেন...” বিকেল ৫টা নাগাদ বন্ধু অমিত দত্তের সঙ্গে দিল্লি থেকে বাড়ির দিকে রওনা হওয়ার আগে যখন দক্ষিণ ২৪ পরগনার বিষ্ণুপুরের প্রসাদপুরের মিঠুন এ কথা বলছেন, তখনও তিনি ক্লান্ত, বিধ্বস্ত। দুর্যোগবিধ্বস্ত হিমাচল প্রদেশ থেকে কোনও ক্রমে বেঁচে ফিরছেন বটে, তবে উৎকণ্ঠা কাটেনি। দিল্লি থেকে উড়ান ধরার পরে সেখানেই খারাপ খবরটা দেওয়া হয়েছে তাঁকে।

ফোনে যা বলেছেন মিঠুন, তা কার্যত হার মানায় রুপোলি পর্দার গল্পকেও। খুব দুর্বল, ক্ষীণ কন্ঠে বললেন, “ওই অবস্থায় ওখানে তিন দিন পড়েছিলাম। আমার কাছে বেশ কিছু ওষুধ ছিল। তার মধ্যে গোটা চারেক ব্যথার ওষুধ। তা খেয়েও তিন দিন যন্ত্রণায় ছটফট করেছি। আর দেবেন্দ্র খাবার না পেয়ে ক্রমশ নিস্তেজ হয়ে পড়ছিলেন। মাথার উপর দিয়ে মাঝেমধ্যেই উড়ে যাচ্ছিল হেলিকপ্টার। উঠে দাঁড়ানোর শক্তি ছিল না।’’ তিনি জানান, দুর্বল শরীর নিয়ে কোনও মতে নিজেকে ঠেলে তুলে কাপড় নাড়িয়ে দৃষ্টি আকর্ষণের ব্যর্থ চেষ্টা করে যাচ্ছিলেন দেবেন্দ্র। দিন তিনেক পরে হেলিকপ্টারের নজর পড়ে। তার পরে তাঁদের উদ্ধার করে উত্তরকাশী হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়।

ডান পা ভেঙেছে। তা নিয়েই প্রায় ছ’ঘণ্টার পথ পেরিয়ে উত্তরকাশী হাসপাতাল থেকে রবিবার বিকেলে দিল্লির বিমানবন্দরে এসে পৌঁছন মিঠুন। ডান পায়ের যন্ত্রণায় কাতর। সেই অবস্থাতেও বাকি সতীর্থরা এখন কেমন আছেন, কোথায় আছেন, তার খোঁজ করে চলেছেন তিনি।

দুর্গাসপ্তমীর দিন চার বন্ধুর সঙ্গে বিষ্ণুপুর থেকে হিমাচল প্রদেশের ছিটকুলে ট্রেকিংয়ের উদ্দেশ্যে বেরিয়ে পড়েছিলেন। দিল্লি থেকে দেরাদুন। তার পরে গন্তব্যস্থলের দিকে রওনা। গাইড, পোর্টার-সহ প্রায় ১২ জন। তার পরে কার্যত বিভীষিকা।

হাসপাতালে পায়ে প্লাস্টার করা হয়েছে। কিন্তু এখনও টনটনে যন্ত্রণা রয়েছে। ওখানকার চিকিৎসকেরা বলেছেন, পায়ের হাড় বেশ কয়েক টুকরো হয়ে গিয়েছে। কলকাতায় চিকিৎসক দেখিয়ে অস্ত্রোপচার করতে হবে। উদ্বিগ্ন কন্ঠে মিঠুন বলছেন, “আমার পা কতটা জখম হয়েছে, তা এখনও বুঝতে পারছি না।’’

শনিবার সকালেই বিষ্ণুপুর ১ নম্বর ব্লকের বিডিও সুবীর দণ্ডপাট মিঠুনের দাদা মনোজ ও বাপ্পা খান নামে দু’জনকে বিমানে যাতায়াতের টিকিট কিনে উত্তরকাশী পাঠিয়ে দিয়েছিলেন। শুধু মনোজ ও বাপ্পা নন, সুবীরের নিজের খুড়তুতো ভাই অমিত দত্ত পঞ্চকেদার পাহাড়ে ট্রেকিংয়ের জন্য গিয়েছিলেন। তাঁকেও মাঝপথে ঘুরিয়ে দেহরাদূন থেকে মিঠুনের সঙ্গে দিল্লি বিমানবন্দরে আসার জন্য বলেছিলেন। দাদার অনুরোধে দেহরাদূন থেকে মিঠুনের সঙ্গী হয়েছেন অমিতও। রবিবার রাতে দিল্লি থেকে কলকাতায় মিঠুনকে নিয়ে আসেন অমিত।

দিল্লি বিমানবন্দর থেকে ফোনে মনোজ বলেন, “মিঠুনের সঙ্গে হাসপাতালে প্রথম দেখা হওয়ার পর থেকে ও এক বারও নিজের পায়ের যন্ত্রণার কথা বলেনি। শুধু বন্ধুদের খোঁজ করে যাচ্ছিল।’’ কলকাতা বিমানবন্দরে সাংবাদিকেরা প্রশ্ন করেন তাঁকে, আবার কি ট্রেকিংয়ে যাবেন? দৃঢ় গলায় বলেন মিঠুন, ‘‘হ্যাঁ। কেন যাব না?”

অন্য বিষয়গুলি:

Uttarakhand avalanche
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy