Advertisement
০৫ নভেম্বর ২০২৪

বিমানবন্দরে মেঝের কাচ ভেঙে মৃত্যু জওয়ানের

কলকাতা বিমানবন্দরের মেঝের কাচ ভেঙে একতলা থেকে বেসমেন্টে পড়ে গিয়ে মারা গেলেন সিআইএসএফ-এর জওয়ান গোরাচরণ সিংহ (৪০)। বৃহস্পতিবার রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের লন্ডন থেকে ফেরার কথা ছিল বিকেলে।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ৩০ জুলাই ২০১৫ ১৯:২৮
Share: Save:

কলকাতা বিমানবন্দরের মেঝের কাচ ভেঙে একতলা থেকে বেসমেন্টে পড়ে গিয়ে মারা গেলেন সিআইএসএফ-এর জওয়ান গোরাচরণ সিংহ (৪০)।

বৃহস্পতিবার রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের লন্ডন থেকে ফেরার কথা ছিল বিকেলে। আন্তর্জাতিক বিমানের যাত্রীরা একতলায় ৪এ-৪বি গেট দিয়ে বাইরে আসছিলেন। মুখ্যমন্ত্রীর জন্য খুলে দেওয়া হয়েছিল পাশের পাঁচ নম্বর গেট। তাঁর আসার আগেই সেখানে তল্লাশি চালাচ্ছিলেন সিআইএসএফ জওয়ানেরা। চার জনের সেই দলে ছিলেন গৌরচরণও। যে রাস্তা ধরে যাত্রীরা টার্মিনাল থেকে বাইরে বেরিয়ে আসেন তার মেঝে কংক্রিটের। কিন্তু, তার আশপাশের বেশ কিছু এলাকার মেঝে কাচ দিয়ে তৈরি। নতুন টার্মিনালের চাকচিক্যের কারণেই ও ভাবে কাচ দিয়ে মেঝে বানানো হয়েছিল। ভিআইপি-র যাত্রী পথের অন্তত ৫০ ফুট এলাকা তল্লাশি করাটা বাধ্যতামূলক। পুলিশকর্মীদের সঙ্গে নিয়ে সেখানে হাতে মেটাল ডিটেক্টর ও অন্য যন্ত্র নিয়ে তল্লাশি চালাচ্ছিলেন গৌরচরণ।

কলকাতা বিমানবন্দরের অধিকর্তা অনিল শর্মা এ দিন বলেন, ‘‘যে করিডর দিয়ে তল্লাশি চালানো হচ্ছিল সেটি দুই কাচের দেওয়ালের মাঝের করিডর। সেখান দিয়ে যাত্রীরা যাতায়াত করেন না। রক্ষণাবেক্ষণের ও সিআইএসএফ কর্মীরাই যাতায়াত করেন। সেখানের মেঝেতে বেশ কয়েকটি কাচ ভাঙা অবস্থায় রয়েছে। সেগুলি ফাইবার চাদর দিয়ে ঢাকা ছিল। যাঁরা ওই এলাকা দিয়ে যাতায়াত করেন তাঁরা ফাইবার থাকলেই বুঝতে পারেন তলার কাচ ভাঙা। তাই, ফাইবারের উপরে পা রাখেন না তাঁরা। সেই করিডরের মাঝখানে কাচের মেঝে থাকলেও দু’পাশের মেঝে কংক্রিটের। ওই করিডর দিয়ে যাঁরা যাতায়াত করেন তাঁরা ওই কংক্রিট দিয়েই যাতায়াত করেন। এ দিনও সেই কংক্রিটের উপর দিয়েই যাচ্ছিলেন নিরাপত্তারক্ষীরা। কিন্তু, কোনও ভাবে টাল সামলাতে না পেরে সেই ভাঙা কাচের উপরে রাখা ফাইবারে পা পড়ে যায় গৌরচরণের। তারপর সবশুদ্ধ পড়ে যান নীচে। মাথায় চোট লাগে।’’

গৌরচরণ সোজা পড়ে যান প্রায় পনেরো ফুট তলায় বেসমেন্টের সিমেন্টের মেঝেতে। বেসমেন্টে সমস্ত বিমানসংস্থার অফিস। আচমকা আওয়াজ পেয়ে সেই অফিস থেকে ছুটে বেরিয়ে আসেন অফিসার-কর্মীরা। দেখেন রক্তাক্ত অবস্থায় পড়েছিলেন ওই জওয়ান। সিআইএসএফ-এর অফিসারেরা আহত গৌরচরণকে কাছের একটি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পরে সেখানে তাঁর মৃত্যু হয়। বিমানবন্দর সূত্রের খবর, গৌরচরণের বাড়ি ওড়িশায় ময়ূরভঞ্জ জেলায়। স্ত্রী ও পাঁচ বছরের মেয়ে রয়েছে। ২০১২ সাল থেকে কলকাতা বিমানবন্দরে চাকরি করছেন। তার আগে ছিলেন মুম্বই বিমানবন্দরে।

২০১৩ সালের জানুয়ারি মাসে চালু হয়েছিল নতুন এই টার্মিনাল। প্রায় ২৫০০ কোটি টাকা দিয়ে এই টার্মিনালটি বানায় তাইল্যান্ডের একটি সংস্থা। মেঝের কিছু কিছু অংশ কাচ দিয়ে তৈরি হয়। তা ছাড়া নতুন টার্মিনালকে বিশ্ব মানের বানাতে গিয়ে তার সমস্ত দেওয়ালই বানানো হয় কাচ দিয়ে। টার্মিনাল চালু হওয়ার আগে থেকেই ভাঙতে শুরু করে দেওয়ালের কাচ। ২০১৩ সালে নতুন টার্মিনাল চালু হওয়ার পরেও কাচ ভাঙার ঘটনা কমে না। প্রতিবারই কাচ ভাঙলে সেখানে অন্য কাচ বসিয়ে পরিস্থিতি সামাল দেয় বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ। জানা গিয়েছে, তাইল্যান্ডের ওই সংস্থাটি টার্মিনাল তৈরির বরাত পেলেও কাচ সরবরাহের বরাত দেওয়া হয়েছিল কর্তৃপক্ষের পছন্দসই ব্যবসায়ীকে।

অনেকবার যাত্রীদের সামনে, তাঁদের পায়ের কাছে কাচ ভেঙে পড়ার ঘটনা ঘটেছে। এক বার সিআইএসএফ-এর এক জওয়ান আহতও হন দেওয়ালের কাচ ভেঙে পড়ায়। একের পর এক কাচ এ ভাবে ভেঙে পড়ে থাকায় সেই কাচের নমুনা বিদেশে পরীক্ষার জন্যও পাঠানো হয়েছিল। কিন্তু, কাচ ভাঙার সঠিক কারণ জানা যায়নি। টার্মিনালের বাইরের দিকে কাচ ভেঙে পড়ে যাতে কোনও যাত্রী আহত না হন, তার জন্য টার্মিনালে ঢোকা-বেরোনর প্রতিটি গেটের মাথার উপরে নতুন করে নির্মান করে পাকা ছাউনিও বানানো হয়েছে। বলা হয়েছিল, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে আস্তে আস্তে কাচ ভাঙার ঘটনা কমে যাবে। কিন্তু, এখনও প্রায় নিয়মিত কাচ ভাঙার ঘটনা ঘটে চলেছে। যে কোনও দিন কাচ ভেঙে বড়সড় বিপত্তি হতে পারে বলে বিমানসংস্থার কর্মী, সিআইএসএফ-এর তরফে বার বার আশঙ্কা করা হয়েছে।

বৃহস্পতিবার সেই আশঙ্কাই সত্য বলে প্রমানিত হল।

অন্য বিষয়গুলি:

Airport Dumdum Airport Dumdum CISF Mishap
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE