Advertisement
২২ ডিসেম্বর ২০২৪
BJP

Cabinet Ministry: বিধানসভা ভোটের ফল বিচারে কেন্দ্রে মন্ত্রিত্বলাভ

ফাইল চিত্র।

ফাইল চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৮ জুলাই ২০২১ ০৮:০২
Share: Save:

রাজনীতির অঙ্কে হিসেব একেবারে দেনাপাওনার। অর্থাৎ বিধানসভা নির্বাচনে যিনি যেমন ‘দিয়েছেন’, তিনি তেমন ‘পুরস্কার’ পেয়েছেন। কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার সম্প্রসারণে রাজ্যের পুরনো দু’জন বাবুল সুপ্রিয় এবং দেবশ্রী চৌধুরীকে বাদ দিয়ে নতুন চার জনকে বেছে নেওয়ার পিছনে এই হিসাবটাই দেখছে পর্যবেক্ষক মহল।

এরই সঙ্গে আলোচনায় এসেছে আর একটি বিষয়। তা হল, উত্তরবঙ্গ থেকে বেছে নেওয়া জন বার্লা এবং নিশীথ প্রামাণিক—দু’জনেই বাংলা ভাগের পক্ষে সওয়াল করেছেন। অনেকের প্রশ্ন, ওই দুই সাংসদকে কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভায় স্থান দিয়ে বিজেপি নেতৃত্ব কি প্রকারান্তরে ওই দাবির বিষয়ে অন্য কোনও ‘বার্তা’ দিতে চাইলেন? এই মর্মে টুইট করেছেন তৃণমূল সাংসদ মহুয়া মৈত্রও।

মন্ত্রী হওয়ার জল্পনায় ছিলেন বনগাঁর সাংসদ শান্তনু ঠাকুর এবং কোচবিহারের সাংসদ নিশীথ। শেষ মুহূর্তে অন্য দুই সংযোজন আলিপুরদুয়ারের বার্লা এবং বাঁকুড়ার সুভাষ সরকার। শান্তনু কেন্দ্রীয় মন্ত্রী হওয়ায় মতুয়াদের একটা বড় অংশ সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন (সিএএ) দ্রুত কার্যকর হওয়া নিয়ে আশাবাদী। অনেকে বুধবার মতুয়া ঠাকুরবাড়িতে গিয়ে ডঙ্কা বাজিয়ে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেন। তবে প্রাক্তন তৃণমূল সাংসদ তথা ইন্ডিয়া মতুয়া মহাসঙ্ঘের সঙ্ঘাধিপতি মমতা ঠাকুর বলেন, ‘‘শান্তনু মন্ত্রী হলেও মতুয়াদের নিঃশর্ত নাগরিকত্বের দাবি পূরণ হওয়ার সম্ভাবনা নেই। কারণ, নয়া আইনে আবেদনের ভিত্তিতে নাগরিকত্বের কথা বলা হয়েছে। আগে আইন সংশোধন করতে হবে।’’

বাদ পড়া মন্ত্রীদের মধ্যে সঙ্ঘের পুরনো কর্মী, রায়গঞ্জের সাংসদ দেবশ্রী বিষয়টিকে ‘দলের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত’ বলে চুপ থেকেছেন। তবে ফেসবুকে একটি তাৎপর্যপূর্ণ দীর্ঘ পোস্ট লিখে বিতর্ক উস্কে দিয়েছেন বাবুল। যা নিয়ে কিছুটা সরগরম রাজনৈতিক পরিমণ্ডল। বাবুল ফেসবুকে লিখেছেন, ‘‘ধোঁয়া থাকলেই আগুন থাকে।’’

কেন্দ্রীয় বিজেপির সূত্রে আভাস মিলছিল, মন্ত্রিসভার এ বারের সম্প্রসারণে জাতপাত, সম্প্রদায়, অনগ্রসর শ্রেণি ইত্যাদি বিবেচনায় গুরুত্ব পেতে পারে। এই রাজ্যের ক্ষেত্রে মতুয়া ঠাকুরবাড়ির শান্তনু, আলিপুরদুয়ারের বার্লা এবং কোচবিহারের নিশীথ সেই ভাবনার সঙ্গে মিলে যায়। বাঁকুড়ার সুভাষবাবু আরএসএসের বহু পুরনো কর্মী। তাঁকে বেছে নেওয়ার পিছনে সঙ্ঘ-রাজনীতি কাজ করে থাকতে পারে বলে পর্যবেক্ষকদের ধারণা।

রাজ্যের বিরোধী দল‌নেতা শুভেন্দু অধিকারীও বলেন, ‘‘রাজ্য বাজেটে উত্তরবঙ্গ নিয়ে আলাদা কোনও ঘোষণা নেই। তফসিলি জাতি, উপজাতির কথা উচ্চারণই করা হয়নি। সেখানে আজ নরেন্দ্র মোদী উত্তরবঙ্গ থেকে কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভায় প্রতিনিধি নিয়েছেন, তফসিলি প্রতিনিধিত্বও বাড়িয়েছেন।’’

অন্য দিকে, মন্ত্রী বাছাই এবং বাবুলদের সরিয়ে দেওয়া নিয়ে বিজেপিকে খোঁচা দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর মন্তব্য, ‘‘কাকে মন্ত্রী করবে, কাকে কালকে ঘাড় ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেবে, এটা ওদের ব্যাপার। আজ বাবুল সুপ্রিয় খারাপ হয়ে গেছে। আর এক মহিলা মন্ত্রী, তিনিও আজ খারাপ!’’ বার্লা, নিশীথ সম্পর্কে নাম না করে মমতার আরও মন্তব্য, ‘‘ওরা বিচ্ছিন্নতাবাদী শক্তি। যখন কারও সময় খারাপ হয় এবং বিনাশকালে বুদ্ধিনাশ হয়, তখন এই সব শক্তিকে আঁকড়ে ধরে। এ সব শক্তি পাতে দেওয়ার যোগ্য নয়। এতে বিজেপি সন্তুষ্ট হতে পারে, মানুষের কাজে আসে না।’’

বিধানসভা নির্বাচনের ফলের দিকে তাকালে দেখা যায়, বার্লার লোকসভা কেন্দ্র আলিপুরদুয়ারের ৭টি বিধানসভাই এ বার জিতেছে বিজেপি। নিশীথের জেলা কোচবিহারেও ৯টি বিধানসভা আসনের মধ্যে ৭টিতে জয়ী বিজেপি। ‘পুরস্কৃত’ তাঁরা দু’জন। মতুয়া-অঙ্কে মন্ত্রী হিসাবে শান্তনুর নাম বিবেচনার সামনের সারিতে থাকলেও তার সঙ্গে যোগ হয়েছে তাঁর লোকসভা কেন্দ্রের অধীন বিধানসভাগুলির ফলও। এ বার সেখানে ৭টির মধ্যে ৬টি বিজেপির দখলে। বাঁকুড়ায় সুভাষবাবুর কেন্দ্রে বরং হিসেব প্রায় তুল্যমূল্য। বিজেপি চার, তৃণমূল তিন।

এই হিসাবেরই বিপরীতে বাবুল এবং দেবশ্রী। তাঁদের দুই লোকসভা কেন্দ্র আসানসোল এবং রায়গঞ্জে গত বিধানসভায় বিজেপির ফল বেশ খারাপ। ওই দুই কেন্দ্রেই ৭টি করে বিধানসভা আসনের মধ্যে বিজেপি জিতেছে দু’টি করে। তবে দেবশ্রীকে সরানোর ক্ষেত্রে বিজেপির একটি অংশের ব্যাখ্যা, উত্তরবঙ্গ থেকে তফসিলি জাতি এবং উপজাতি মুখকে কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভায় আনার কিছুটা ‘দায়’ ছিল। নিশীথ তফসিলি জাতি এবং বার্লা তফসিলি উপজাতিভুক্ত।

বাবুলের ক্ষেত্রে বিষয়টি মাত্রা পেয়েছে তাঁর নিজের প্রতিক্রিয়া থেকেই। ফেসবুকে তাঁর বক্তব্যের সারাংশ হল, বাদ পড়ার সিদ্ধান্ত তাঁর কাছে ‘দুঃখের’। মন্ত্রী হিসাবে তিনি ভাল কাজ করেছেন এবং কোনও কলঙ্ক মাথায় নিয়ে তিনি সরে যাচ্ছেন না। মুখে অবশ্য বাবুল কিছু বলেননি, শুধু হেসেছেন।

বিজেপিতে অবশ্য অনেকের প্রশ্ন, ভোটের আগে বাইরে থেকে দলে আসাদের গুরুত্ব দেওয়া নিয়ে বাবুল দলের ভিতরে আপত্তি করেছিলেন বলেই কি তাঁকে সরতে হল? আসানসোল লোকসভার ৭টি বিধানসভা কেন্দ্রের প্রার্থী বাছাইয়ের ক্ষেত্রে এলাকার সাংসদ ও মন্ত্রী হিসাবে বাবুলের কতটা কী ভূমিকা ছি‌ল এবং তার পরিপ্রেক্ষিতে ফলের দায় কতটা তাঁর উপর বর্তায়, তা নিয়েও বিজেপি মহলে প্রশ্ন ঘুরছে।

বাবুলকে মন্ত্রিসভা থেকে বাদ দেওয়ার বিষয়ে বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষের মন্তব্য, ‘‘বাবুলের ক্ষোভ হয়েছে কি না, তা উনিই জানেন। তবে সরে যাওয়া ১২ জন মন্ত্রীর আর কেউ তো এ ভাবে বলেননি। এটা একটা পদ্ধতি। তাঁকে না জানিয়ে সরিয়ে দিলে কি ভাল হত?’’

বার্লা-দের কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভায় স্থান দেওয়া সম্পর্কে দিলীপবাবুর সাফাই, ‘‘তিনি বাংলা ভাগের কথা বলেননি। স্থানীয় মানুষের ক্ষোভের কথা বলেছেন।’’ তাঁর আরও মন্তব্য, ‘‘বিচ্ছিন্নতাবাদী গুরঙ্গদের সঙ্গে মমতাই তো হাত মিলিয়েছেন।’’

তৃণমূলের এক শীর্ষ নেতার পাল্টা কটাক্ষ, ‘‘দিলীপবাবুর বোধহয় স্মৃতিভ্রংশ হয়েছে। না হলে তাঁর মনে থাকত, ২০১৯-এর লোকসভা নির্বাচনেও গুরুঙ্গ বিজেপির সঙ্গে ছিলেন।’’

অন্য বিষয়গুলি:

BJP Narendra Modi Cabinet Ministry
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy